পাহাড় থেকে বিকল্প উপায়ে সুপেয় পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাশিশু
২৯ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০১

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না : খাবার পানির তীব্র সঙ্কট

তীব্র গরমে পলিথিনের ঝুপড়িতে রোহিঙ্গাদের কাহিল অবস্থা

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে পলিথিনের ঝুপড়িতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পের কোথাও কোনো গাছপালা না থাকায় চৈত্রের রোদে পলিথিনের অসহনীয় উত্তাপে ঝুপড়িতে থাকাই দায়। অপর দিকে ক্যাম্পে যেসব অগভীর নলকূপ আছে সেগুলোয় এখন পানি ওঠে না। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে গিয়ে রোহিঙ্গাদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। ওই পানি দিয়ে খাওয়া-গোসলসহ সব কিছু সারতে হয়।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা আট হাজারের বেশি নলকূল স্থাপন করেছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তড়িগড়ি করে বসানো নলকূপগুলোর নির্মাণকাজ মানসম্মত না হওয়ায় এগুলোর বেশির ভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। এসব ক্যাম্পে প্রতিদিন এক কোটি ষাট লাখ লিটার পানি প্রয়োজন। এই পানি সরবরাহ করতে গিয়ে বিভিন্ন সেবা ও সাহায্য সংস্থাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর পানির তীব্র সঙ্কটের কারণ হিসেবে জানিয়েছে, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও সরকারিভাবে যেসব নলকূপ বসানো হয়েছে, সেগুলোর পাইপ ৩০ মিটার পর্যন্ত গভীরে যাওয়ার কথা। কিন্তু ১০-১৫ মিটার পাইপ দিয়ে বসানো হয়েছে সব নলকূপ। গভীরতা কম হওয়ায় নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।

উখিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আট হাজার ৫৩টি অগভীর নলকূপের মধ্যে তাদের রয়েছে দুই হাজার ১৯২টি। ৪০৩টি গভীর নলকূপের মধ্যে সরকারি ২৫০টি। মোট অগভীর নলকূপের মধ্যে ৫০ শতাংশের মতো নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে।
জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় প্রতিদিন এক কোটি ৬০ লাখ লিটার পানি প্রয়োজন। কিন্তু এখন চাহিদার অনেক কম পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, গুলশান পাহাড় ও মদিনা পাহাড় এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকায় যেসব নলকূপ বসানো হয়েছে তার কোটিতেই পানি উঠছে না। মধুরছড়া ক্যাম্পের হালিমা খাতুন (৩৫) জানান, পানির অভাবে তারা রান্না, কাপড়-ধোয়ার কাজ করতে পারছেন না। খাবার পানি আনতে হচ্ছে এক কিলোমিটার দূর থেকে। একই ক্যাম্পের নাছিমা খাতুন (৩৯) জানান, তাদের নলকূপগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পাশের গ্রামের বাড়িঘর থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যের উখিয়া উপসহকারী প্রকৌশলী মো: ইকবাল হাসান জানিয়েছেন, উখিয়ার সর্বত্র প্রতি বছর এমনকি প্রতিদিন পানির সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। গত বছর উখিয়ার সর্বত্র গড়ে পানির স্তর ছিল ২৫-৩২ ফুট নিচে। অথচ এক বছরের ব্যবধানে গত সপ্তাহের জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে পানির স্তর গড়ে ৩০-৩৮ ফুট নেমে গেছে। গত বছর কুতুপালং এলাকায় পানির স্তর ছিল ৩২-৩৫ ফুট নিচে। অথচ গত সপ্তাহে জরিপ অনুযায়ী কুতুপালংসংলগ্ন রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় পানির স্তর ৪২-৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে।

এদিকে চৈত্রের প্রচণ্ড খরতাপে উখিয়ার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা নাভিশ^াসে উঠেছে। ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা জানান, ক্যাম্পে কোনো গাছপালা না থাকায় গরমে তাপমাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ। তারা হাত পাখা ঘুরিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও তীব্র গরমে ঘুম আসছে না। রাত গভীর হলে একটু ঠাণ্ডা পড়ে তখন ঘুম আসে বলে জানালেন মধুরছড়া ধু-ধু পাহাড়ে বসবাসরত বিধবা মহিলা রহিমা খাতুন (৪৫)। তীব্র গরমে ছোট ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মধুরছড়া ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্র্যাকের একটি কিনিকে গিয়ে দেখা যায়, দুই-তিনজন মেয়ে কিছু ওষুধ নিয়ে বসে আছেন। জানতে চাইলে তারা ব্র্যাকের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, এখানে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে। তারা বলেন, প্রচণ্ড গরমে শিশুরা সর্দি, কাশি ও বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হলে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মিজবাহ উদ্দিন জানান, ক্যাম্প এলাকায় তাপমাত্রা একটু বেশি। কারণ সেখানে গাছপালা নেই। উপরন্তু পলিথিনের গরমে বিভিন্ন রোগবালাই বাড়ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/305729