২৯ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫১

বেকারের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে

দেশে বেকারের সংখ্যা নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পুরোপুরি বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজার। আবার একই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ। বাকি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ কর্মক্ষম, তবে শ্রমশক্তির বাইরে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যারা শ্রমশক্তির বাইরে তারা কি বেকার নয়? প্রকৃতপক্ষে শ্রমশক্তির বাইরের জনশক্তিকেই বলা হয় বেকার। সেক্ষেত্রে বিবিএসের হিসাবেই দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। বস্তুত বিবিএসের দেয়া তথ্যে যে বড় ধরনের গরমিল আছে, তা কাউকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার হয় না। বাস্তবতা হল, দেশে একটি পিয়নের পদে চাকরির জন্য আবেদন পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, এমনকি স্নাতকোত্তর পাস হাজার হাজার যুবকের। চাকরি নামক সোনার হরিণটি পাওয়ার জন্য অনেককে বছরের পর বছর অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতে হয়। বাস্তবতা যখন এমন, তখন সরকারি পরিসংখ্যান বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রতি এক ধরনের উপহাসই বলা যায়।

বিবিএসের পরিসংখ্যানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ লাখ কর্মসংস্থান তৈরিরও দাবি করা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থান তৈরির প্রধান মাধ্যম বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ যখন অনেকটাই স্থবির তখন এমন দাবি অগ্রহণযোগ্য। আমরা মনে করি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান নিয়ে বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনার দাবি রাখে। তবে দেশে বেকারের সংখ্যা যে বাড়ছে তা বিবিএসের জরিপেও উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় বেকারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার এবং কর্মসংস্থান কমেছে এক লাখ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সংজ্ঞা মেনে বিবিএস দেশে ২৬ লাখ ৬০ হাজার বেকার দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবিএস যে পদ্ধতিতে বেকারত্ব নির্ণয় করে, তা শিল্পোন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য। আইএলও’র সংজ্ঞাটি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ বেকার ভাতা এবং আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেকারত্বের সংজ্ঞা দাঁড় করায় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। জানা গেছে, বিবিএস প্রকাশিত এ জরিপে এক ঘণ্টা কেউ কাজ করলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়নি। ১৫ বছরের বেশি বয়স কিন্তু সরাসরি শ্রমিক নন এমন জনগোষ্ঠীকে আইএলও শ্রমিক বা বেকার কোনোটিই বলে না। অথচ এ দেশের বাস্তবতায় বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বেকার বলে স্বীকার না করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

দেশে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি ভালো নয়। চাকরির বাজার খুবই সীমিত। বিশেষত শিক্ষিত যুবক শ্রেণী কোনোমতে খেয়েপরে বাঁচার মতো একটি কাজ না পেয়ে যখন তীব্র হতাশায় নিমজ্জিত, এমনকি চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার নজিরও আছে, তখন সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের এমন তথ্য দুঃখজনকই বটে। পরিসংখ্যান আর বাস্তবতার মাঝে সব সময়ই ফারাক থাকে। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশিই হবে। সরকারের উচ্চ মহল থেকে বেকারত্ব লাঘবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জোর প্রচেষ্টা নেয়া হবে, এটাই কাম্য।


 

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/editorial/32609