১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ১:০৫

পাশ্চাত্য নয়, ইসলামই কেবল নারীর মর্যাদা ও অধিকার দিতে পারে

শাহ্ আব্দুল হান্নান

Re posted with some clarifications

ওপরের বিষয়টি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করে আমি যা মনে করেছি, তা এই নিবন্ধে উল্লেখ করছি। পয়লা কথা হচ্ছে, নারী উন্নয়ন অথবা নারী দিবস পালনের কোনো যুক্তিকতা আছে কি না? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, আছে। কেননা নারী উন্নয়ন বা আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুরু হয়েছে প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় আগে। কিন্তু তারপরও নারীর জীবন ইজ্জতের নিরাপত্তার অবস্থা আগের তুলনায় অনেক খারাপ হয়ে গেছে। নারীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন আরো বেড়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রয়োজন আছে।

পাশ্চাত্যের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে নারীর মর্যাদার ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ নারী কষ্ট পাচ্ছে পরিবার প্রথা ভেঙে যাওয়ার কারণে। তাদের ফ্যামিলি স্ট্রাকচার ভেঙে যাওয়ার কারণে পরিবারের ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব মায়ের ওপরই পড়ে। কারণ, পাশ্চাত্যের পরিবার প্রথায় দেখা গেছে, একজন নারীকে তার স্বামী কিংবা সঙ্গী ছেড়ে চলে গেছেন।

পাশ্চাত্যে নারীরা খুবই নির্যাতিত ও বঞ্চিত। তাদের দেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ লোক অ্যালকোহলে আসক্তির মধ্যে ডুবে আছে। আবার অনেকে ড্রাগও সেবন করে। এ অবস্থায় যেটা হয়- তাদের স্বামী বা সঙ্গী কিংবা পার্টনাররা মাতাল হয়ে বউদেরকে অযথা মারধর করে। পুরুষেরা সাধারণত নারীদের মারধর করে থাকে। নারীদের পক্ষে পুরুষদের মারধর করা সম্ভব নয়। এর ফলেও নারীরা মার খাচ্ছে, শুধু মার খাচ্ছে- তা এই মাদকতার কারণে। মাদক না থাকলে (ইসলাম যেটাকে হারাম করেছে) পাশ্চাত্যের সামাজিক অবস্থায় তারা মার খেত না। তারা যে কত খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে; তার প্রমাণ হচ্ছে বর্তমানে একটা আন্দোলন শুরু হয়েছে সব me too (আমিও) নামে। তাতে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিত নারীরা যারা মন্ত্রী ছিলেন বা সিনেটর ছিলেন তারা বলছেন, আমরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। একজন উচ্চপর্যায়ের নির্যাতিতার চিঠির উত্তরে এক মাসের মধ্যে চার কোটি নারী জানায়, তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ইউরোপে এবং ইউএসএ। এ আন্দোলনের নাম হচ্ছে me too (আমিও)। এতে প্রমাণ হচ্ছে, পাশ্চাত্যে নারীর অবস্থা কত খারাপ হয়েছে। নারীকে অনেকটা পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে। তাদেরকে আধা কাপড়ে বা শর্ট পোশাকে ‘মডেল’ বানানো হয়েছে। এমনকি ‘ফ্যাশন শো’র নামে নারীদেরকে ফ্যাশন গার্ল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আবার বিউটি কনটেস্ট যেটা শুধু নারীদের হয়, মেয়েদের কাপড় থাকে এক টুকরা বা দুই টুকরা। এই হচ্ছে পাশ্চাত্যের নারীর মর্যাদা। সুতরাং পাশ্চাত্যের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না নারীদের আপডেট করে তুলে ধরা। যেহেতু তারা সেকুলারিজম গ্রহণ করছে, ফলে নৈতিকতা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এখন এই সমস্যার সমাধান ইসলাম করতে পারে। এদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাশ্চাত্যের মাধ্যমে হবে না। আসলে নারীর মর্যাদা যদি বাড়াতে চাই ও সমান করতে চাই, তাহলে মৌলিকভাবে সমতাকে ভিত্তি হিসেবে আনতে হবে। কিন্তু a few পার্থক্য তো পুরুষ আর নারীর মধ্যে থাকবেই। যেমন উদাহরণ হিসেবে খেলাধুলার কথা উল্লেখ করা যায়। পুরুষ ও নারী দু’জনের খেলাধুলার বিষয়টিও আলাদা, তেমনি টয়লেটও স্বাভাবিক কারণে আলাদা হয়। এ ধরনের পার্থক্য আমাদের মানতে হবে। এটা নারী অধিকারের বাইরে যায় না। আমি মনে করি, ইসলামই নারীকে ওপরে উঠাতে পারে, অধিকার দিতে পারে, যদি সব ইসলামি সংগঠন তাদের অ্যাজেন্ডা হিসেবে এগুলো গ্রহণ করে। নারী-পুরুষ সবাই আল্লাহ তায়ালার খলিফা। একই পরিবারের সন্তানেরা ( children of Adam and Hawa) সবাই সমান হয়, এটা দুনিয়ার সবাই জানে। আর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, এমনকি কালোর ওপর সাদার কোনো পার্থক্য নেই। এখন আরবের ভেতরে পুরুষও আছে, নারীও আছে; তার মানে সবাই সমান।

কাজের ক্ষেত্রে সূরা তাওবার ৭১ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারী পরস্পরের অলি (বন্ধু, অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক)।( Six duties are common to men and women) তারা ভালো কাজে আদেশ করে, মন্দকাজ থেকে নিষেধ করে (সরকার পরিচালনা বা রাজনীতি মূলত এ বিষয়ে), সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এরাই সেসব লোক, যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহ রহম করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়।’

অপর দিকে, নারীর এমন একটা most difficult ফাংশন আছে সেটা হচ্ছে মাতৃত্ব। This most difficult কাজটা আল্লাহ নারীকে দিয়েছেন। সুতরাং নারী কোনো কিছু পারে না, এটা বলা ঠিক নয়। তা ছাড়া বলা হয়েছে, পুরুষের উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু নারীর তো স্পেশাল অধিকার আছে ভরণপোষণ পাওয়ার। আল্লাহ তায়ালা নারীদের কিছু ছাড় দিয়েছেন। যেমন- নামাজের ক্ষেত্রে, জিহাদের ক্ষেত্রে, হজের ক্ষেত্রে।

Two verses give special status to women.--1-- সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের মালিককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি মাত্র ব্যক্তিসত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তা থেকে (তার) জুড়ি পয়দা করেছেন, তাদের (এই আদি জুড়ি) থেকে তিনি বহু নর-নারী (দুনিয়ায়) ছড়িয়ে দিয়েছেন। হে মানুষ, তোমরা ভয় করো আল্লাহ তায়ালাকে, যাঁর (পবিত্র) নামে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবি করো এবং (সম্মান করো and fear ) গর্ভ ধারিণী মাকে। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।

2 . আল কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, লাইসাল জাকারু কাল উনছা। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর মতো কয়েকজন মুফাসসির এর অনুবাদ করেছেন, পুরুষ নারীর সমতুল্য নহে।
এ সব কিছু তুলে ধরছে নারীর মর্যাদা। উপসংহারে বলতে পারি সামগ্রিক বিবেচনায়, পুুরুষ ও নারী সমান মর্যাদার অধিকারী এবং তাদের সম্মান ও অধিকার সমান।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার