২১ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ১০:২৩

ভারতের পানি আগ্রাসন অস্তিত্ব সঙ্কটে ১০ জেলার ২৫ নদী

সাড়ে ৪ কোটি মানুষ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে

মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান : ভারতের পানি আগ্রাসনে মাগুরাসহ ১০ জেলার ২৫টি নদী আজ মৃত প্রায়।ফলে এলাকার পরিবেশসহ অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ায় এ অঞ্চলের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ পড়েছে মহা সমস্যায়। এ অঞ্চলের নদনদী গুলোর নাব্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় মাগুরা সহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদÑনদীগুলোর প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার তলদেশ ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে ২৫ টি ছোট বড় নদÑনদী মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্থরের নিম্নমুখিতা রোধ,মৎস্য, কৃষি,পশু সম্পদ উন্নয়ন,নৌ যোগাযোগ রক্ষা ও অকাল বন্যা রোধে দেশের এ জেলা গুলোতে সরকারের সমন্বিত পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ অপরিহার্য হলেও তা না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, দক্ষিনÑপশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ২৫ টি ছোট বড় নদী আজ মৃতপ্রায় কোন কোনটির অস্তিত্ব মানচিত্রে আছে বাস্তবে নেই। বর্তমানে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র জীবিত নদী হচ্ছে গড়াই ও মধুমতি। এ নদীটি দুটি শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে। মধুমতি ও গড়াইয়ের বুকজুড়ে এখন ধুধু বালুচর। শুষ্ক মৌসুমে মধুমতি ও গড়াইয়ের বুকে চলে চাষাবাদ।পদ্মার অন্যতম এ শাখা নদী দুটিই এ অঞ্চলের মিঠাপানির একমাত্র উৎস। পদ্মার প্রধান শাখা নদী মাথাভাঙ্গা। বাংলাদেশের ঠোটারপাড়া ও ওপারে ভারতের নদীয়ার জলঙ্গীর মধ্যবর্তী স্থানে এর উৎপত্তিস্থল। বহু বছর পূর্বে পলি জমে মাথাভাঙ্গার উৎস মুখ ভরাট হয়ে গেছে। এটি একটি সীমান্ত নদী। মাখাভাঙ্গা থেকেই বের হয়েছে ভৈরব নদ। সীমান্ত শহর দর্শনা থেকে যশোরের নওয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় দুশো কিলোমিটার ভৈরবের নদীবক্ষ ভরাট হয়ে মরে গেছে। আশির দশকে ভারতের নদীয়া জেলার গঙ্গারাজপুরে জলঙ্গী নদীর ওপর একটি রেগুলেটর ও এর মাইল পাচেক ভাটিতে ভৈরবের উৎসস্থলে ক্রসবাধ নিমানের ফলে নদীটির পানি প্রবাহের শেষ উৎসটুকুও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভৈরবের বক্ষজুড়ে কচুরিপানায় পরিপুর্ন। কপোতাক্ষ নদীর উৎপত্তিস্থল ভৈরব থেকে।নদীটি ঝিকড়গাছাও সাগরদাড়ি হয়ে সাগরে মিশেছে। নদীটির উজানে ভরাট হয়ে গেছে। পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ভাটি এলাকায় বর্ষা মৌসুমে পানি উপছে প্লাবন ঘটায়। এক কালে এ অন্ছলের অন্যতম খরস্রোতা নদী ছিল চিত্রা। মাথাভাঙ্গা ছিল চিত্রার উৎস। বেশ কয়েক বছর পূর্বে চুয়াডাঙ্গা এলাকায় চিত্রার দেড়শ কিলোমিটার বক্ষদেশ ভরাট হয়ে গেছে। শুস্ক মৌসুমে চিত্রার বক্ষ জুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। মধুমতি, কুমার, নবগঙ্গা গড়াই থেকে কালীগঙ্গা ও ডাকুয়ার মাধ্যমে পানি প্রবাহ পেত। গঙ্গাÑকপোতাক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে কালীগঙ্গা ও ডাকুয়ার উৎস মুখে ক্রসবাধ দিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। কুমারের অপর পানির উৎস ছিল মাথাভাঙ্গা ও সাগরখালী।এ দুটি উৎসও ভরাট হয়ে গেছে। আর কুমারের প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ব্ক্ষদেশ এখন ভরাট হয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়ে জিকে প্রকল্পের নিস্কাশন খালে পরিনত হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও মাজা পানি থাকে। এক কালের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম প্রধান খরস্রোতা নদী ছিল বেগবতি ও বেতনা। এ নদী দুটি আজ মৃত। নদী দুটির প্রায় ৯০ কিলোমিটার এলাকা ভরাট হয়ে গেছে। মেহেরপুরের কাজলা,কুষ্টিয়ার হিস্যা নদী দুটিও মরে গেছে। যমুনা, শ্রী, টেকা,হানু প্রভৃতি নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। কোনটি মানচিত্রে আছে বাস্তবে নেই। মাগুরাও ঝিনেইদহর ওপর দিয়ে প্রবাহিত ফটকি নদীর অবস্তাও করুণ। একই অবস্থা যশোরের হরিহর ও মুক্তাশ্বরী নদীগুলো মরে যাওয়ায় পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ায় পরিবেশ হয়ে উঠছে রুক্ষ। তেমনি এলাকার অর্থনীতি. ব্যবসায় বাণিজ্যে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এতে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তেমনি মিঠা পানির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় জেলেরা পেশা ছেড়ে হয়েছে বেকার। নৌপথ নাব্যতা হারিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পুর্ন স্থল পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে যানজট, সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ। সড়ক সংস্কারে ব্যয় হচ্ছে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা। অন্য দিকে নৌ যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা প্রাচীন নগর বন্দর আজ নিস্প্রান হয়ে পড়েছে। মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দল লতিফ জানান, মাগুরার নবগঙ্গা নদীর ১১ কিলোমিটার নদী খনন ও সংস্কারের প্রস্তাব একনেকে পাশ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ৪১ কোটি ৪ লাখ টাকা। খুব শীঘ্র খনন কাজ শুরু হবে।

https://www.dailyinqilab.com/article/122484