২১ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ১০:২২

পাঁচ কাউন্সিলর সন্দ্বীপছাড়া

এমপি মিতার ক্যাডারদের তাণ্ডব

দুর্গম উপকূলীয় এলাকা সন্দ্বীপ গত ১১ মার্চ এক আতঙ্কের সকাল দেখেছে। একের পর এক পাঁচ কাউন্সিলরের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে ঘরের চাল ও বেড়া, পড়েছে রামদায়ের কোপ। সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কাউন্সিলরদের বলেছে, প্রাণ বাঁচাতে হলে তাঁদের সন্দ্বীপ ছাড়তে হবে—এটি এমপি মিতার নির্দেশ! পাঁচ কাউন্সিলরের একজনকে সামনে পেয়ে তারা বাধ্য করে তাত্ক্ষণিক মাইক্রোবাস ডেকে আনতে। কাউন্সিলর মাইক্রোবাস আনিয়ে স্ত্রী ও শিশুসন্তানদের নিয়ে প্রথমে উপকূলীয় ঘাট, সেখান থেকে স্পিডবোটে করে চট্টগ্রাম পালিয়ে আসেন। বাকি তিন কাউন্সিলরও অল্প সময়ে সন্দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। একজন ঘটনার দিন বাইরে ছিলেন। এখন তিনি বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। তাঁদের কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ এর সহযোগী সংগঠনের নেতা। এই ঘটনায় তাঁদের অভিযোগের আঙুল আওয়ামী লীগের দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার দিকে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলররা বলছেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন বাগাতে এমপি মিতা দলের নেতাদের এলাকাছাড়া করছেন। পুলিশ এমপির ঘনিষ্ঠ বলে কাউন্সিলররা থানা থেকেও সহায়তা পাচ্ছেন না।

হামলার মুখে সন্দ্বীপছাড়া হওয়া কাউন্সিলররা হলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সালাউদ্দিন (ওয়ার্ড ৬), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক মাহমুদ (ওয়ার্ড ৮), এ বি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন (ওয়ার্ড ৭), পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দিন মাহি (ওয়ার্ড ৯) এবং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর হোসেন শাখাওয়াত (ওয়ার্ড ২)। কাউন্সিলররা জানান, হামলার সময় তাঁরাসহ বাড়ির লোকজন কেউ সিলিংয়ের ওপরে, কেউ খাটের নিচেও লুকান।

কাউন্সিলর মো. সালাউদ্দিন অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, “এমপির সন্ত্রাসীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এ হামলা করা হয়েছে। তারা বলে, ‘এক ঘণ্টার মধ্যে তোকে এলাকা ছাড়তে হবে, নইলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব, এটা এমপির নির্দেশ।’ সন্ত্রাসীরা থাকতেই মাইক্রোবাস আনিয়ে দুই কন্যাসহ পরিবার নিয়ে গুপ্তছড়া ঘাট, সেখান থেকে স্পিডবোটে চট্টগ্রাম আসি।”
কাউন্সিলররা বলেছেন, এমপির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত কালা মনির, ইয়াবা শাহাদাত, ভিডিও সুমন, লোহা বাবলু, গো মনছুর, গো বাহার, মান্নানসহ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং সন্দ্বীপ ছাড়ার ‘হুকুম’ জারি করে। তাদের শটগানের গুলিতে কয়েকজনের বাড়ির চাল, টিনের বেড়া ফুটো হয়ে গেছে। রামদা দিয়ে ঘরও কোপানো হয়েছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/03/21/615839