১৮ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:১৫

ভোগান্তির নাম বাড্ডা ইউলুপ

জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট

রাজধানীর গুলশান থেকে হাতিরঝিল হয়ে রামপুরামুখী যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মধ্যবাড্ডায় ইউলুপ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া ইউলুপটির নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। তবে নির্মাণকাজে অংশ নেয়া শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই ইউলুপ নির্মাণ কাজের জন্য বাড্ডা পয়েন্টে সৃষ্ট যানজট একদিকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ এবং অন্যদিকে শাহজাদপুর ছাড়িয়ে নতুন বাজার বা তারও বেশি দূর পর্যন্ত দীর্ঘ হচ্ছে। এতে রাতদিন সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রগতি সরণী ব্যবহারকারী যাত্রীদের। ভুক্তভোগিরা জানান, ইউলুপের কারনে সৃষ্ট যানজটে মালিবাগ ফ্লাইওভারের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যাত্রীরা।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডা ইউলুপ চালু হলে যানবাহনগুলো প্রগতি সরণি হয়ে ইউলুপ দিয়ে ডানে বাঁক নিয়ে বনশ্রী, আফতাবনগর, রামপুরা বা মালিবাগ অভিমুখে সহজেই যেতে পারবে। একই সাথে এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটিও হবে ইউটার্নমুক্ত। পাশাপাশি বাড্ডা পয়েন্টে সৃষ্ট যানজটেরও নিরসন হবে। এ লক্ষ্যে হাতিরঝিল প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। কিন্তু দুই বছরেও ইউলুপের কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নির্মাণকাজ চলায় একদিকের রাস্তা বন্ধ রাখায় ওই পয়েন্টে যানজট দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। জানা গেছে, রাজউকের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ইউলুপটির দৈর্ঘ্যে ৪৫০ ও প্রস্থ ১০ মিটার। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুন রামপুরার ইউলুপটি চালু হয়। ফলে যানবাহনগুলো বনশ্রী থেকে কোনো প্রকার সিগন্যাল ছাড়াই হাতিরঝিলে যেতে পারছে। রামপুরা ইউলুপ চালু হওয়ায় ওই এলাকার যানজটও অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া বাড্ডা ইউলুপটির কাজ শেষ না হওয়ায় রামপুরার পরেই ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। একই অবস্থা প্রগতি সরণী হয়ে কুড়িল অথবা গুলশান থেকে মালিবাগের দিকে আসা যাত্রীদেরও। বাড্ডা অতিক্রম করতেই তাদের এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগছে। প্রগতি সরণী হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন যাত্রী বলেন, ইউলুপ নির্মাণের কারনে গত কয়েক মাস ধরেই বাড্ডা এলাকায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পিক আওয়ারে এই যানজট এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারন করে যে, গাড়ি একবার থামলে আর নড়তেই চায় না। কখনও কখনও বাড্ডা অতিক্রম করতেই দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যায়। তবে এখন এই যানজটের ভয়াবহতা কিছুটা কমেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউলুপের উপরে ঢলাইয়ের জন্য রড বিছানো হয়েছে। নিচের অংশে ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। আলাপকালে নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, রড বাঁধা শেষ হলেই ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে। নির্মাণাধীন ইউলুপের দু’পাশের রাস্তার কিছু অংশ কার্পেটিং করা হয়েছে, বাকি অংশ ভাঙাচোরা। রাস্তার একদিকের বেশিরভাগ অংশজুড়ে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। গাড়ি চলছে একদিক দিয়ে। সে কারনে এই অংশে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ইউলুপটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই যানজট থেকে রেহাই নেই। এর নির্মাণকাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে- সে বিষয়ে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। ইউলুপের পাশের এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রাহাত পাটোয়ারী বলেন, কাজ শুরুর পর থেকে বহুদিন ধরেই আমাদেরকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ধুলোবালিতে এই এলাকা দিয়ে হাঁটাই যেতো না। রাস্তা কার্পেটিং করার পর সেই ধুলোবালি কমেছে। তিনি বলেন, পিলার ও বেজমেন্টর কাজের সময় রাতদিন ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হতো। এখনও আছে, তবে এখন এই এলাকার যানজট অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ব্যস্ততম রাস্তায় এ ধরনের উন্নয়ন কাজ দ্রæত গতিতে করা উচিত। তা না হলে মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা যে কষ্ট করলাম, ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম-এটা অনেকটাই কম হতো যদি কাজটা দ্রæত হতো। আরেক ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, ইউলুপের কাজ শেষ হলে এই এলাকার বাসিন্দারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। আমরা চাই এটি দ্রæত চালু হোক।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/122049