১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:৪৭

সরকারি প্রকল্পের নামে চাঁদাবাজি

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ঘুড়কায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ‘জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্পের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার দলীয় কিছু অসাধু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় গরিব মানুষকে বিনা মূল্যে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার করে টাকা। অথচ এ প্রকল্পের কথা জানেন না খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ঘুড়কা এলাকার চার শতাধিক দরিদ্র মানুষ এই প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়েছে। প্রকল্পের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন আর তারা টাকা ফেরত পাচ্ছে না। টাকা ফেরত চাইতে গেলেই মিলছে নানা ধরনের হুমকি।
এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ‘জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্প থেকে ৩৪৫টি ঘর বরাদ্দ এসেছে—এমন ধুয়া তুলে গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে নেন সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ আলী, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আসলাম, চান্দাইকোনা হাজী ওয়াহেদ মরিয়ম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. বিপ্লব ও মোয়াজ্জেম হোসেন। যারা টাকা দেবে তারাই দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘর পাবে বলে জানান তাঁরা। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এখনো ঘরের খবর নেই। কারো কাছে প্রশ্নের সদুত্তর না পেয়ে অবশেষে হতাশাগ্রস্ত লোকজন ছুটে যায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের প্রকল্পের কথা তাঁরা জানেন না।
এদিকে এলাকার হতদরিদ্র মানুষগুলো বিভিন্ন এনজিও ও সমিতি থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়েছে। তারা আর সুদ টানতে পারছে না। টাকা ফেরত চাইতে গেলেই তাদের নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
ভুক্তভোগী দুলাল হালদার বলেন, ‘ঘরের কথা বলে ওই নেতারা বারবার আমাদের সঙ্গে মিটিং করে। একপর্যায়ে ঘরপ্রতি ২০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
বসু হালদার বলেন, ‘নেতাদের কথা মতো আমি ২২ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আবার তারা টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।’
এদিকে ঘুড়কার ভুয়াগাতী গ্রাম থেকে ১১৭ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ গ্রামের বুলবুল তালুকদার ও প্রণব তালুকদার জানান, বিনা মূল্যে ঘর দেওয়ার কথা। কিন্তু টাকা দিয়েও ঘর মিলছে না। টাকা ফেরত চাইতে গেলেই মিলছে হুমকিধমকি। সাংবাদিকদের বিষয়টা জানালে হিতে বিপরীত হবে বলেও তারা শাসিয়ে গেছে।

সলঙ্গা থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক ইউপি সদস্য অনিতা রানী দাস বলেন, ‘কয়েক মাস আগে সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ আলী, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মো. বিপ্লব ও মোয়াজ্জেম হোসেন ঘর দেওয়া হবে বলে ইউনিয়ন পরিষদের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। পরে তাঁদের সঙ্গে হালদার পাড়ার মাতব্বর যুগল হালদারসহ কয়েকজন যোগ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।’
এ বিষয়ে যুগল হালদার জানান, তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো প্রকল্পের কথা আমার জানা নেই। যদি কোনো নেতা এ কাজ করে থাকেন তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

ঘুড়কা ইউপি চেয়ারম্যান জিলু্লর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুুই জানি না। এ নিয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগও করেনি। তবে অনিয়মের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনাকে চাঁদাবাজির আখ্যা দিয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল আখতার বলেন, ‘এমন প্রকল্পের প্রস্তাব এখনো আসেনি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে টাকা নেওয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/priyo-desh/2018/03/17/614206