১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:৪৪

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হাজারো কন্টেইনার গায়েবের আশঙ্কা

আমদানি করা পণ্যবাহী হাজারো কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গায়েব হয়ে গেছে-এমন আশঙ্কা করছে কাস্টমস। যার তথ্য চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে গায়েব হওয়া হাজারো কন্টেইনার থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাওনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আবার চিঠি পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে কাস্টমস কমিশনারের বরাবরে উল্টো এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের চিঠি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আমদানি পণ্যভর্তি প্রায় ৫ হাজার ৫৮৪টি কন্টেইনার এসেছে। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার কন্টেইনার বন্দর থেকে খালাস করা হয়নি।
পরিশোধ করা হয়নি শুল্কও। অথচ বন্দরের কোথাও কন্টেইনারগুলো রক্ষিত নেই। এসব কন্টেইনার কোথায় গেল বা কীভাবে গায়েব হলো তার সঠিক তথ্য দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান এ সম্পর্কে বলেন, কন্টেইনারগুলোর হদিস করতে আমরা একটি কমিটি গঠন করি। অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সফিউদ্দীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটি কাজ করতে গিয়ে বেশকিছু কন্টেইনারের কোনো হদিস পায়নি। এসব কন্টেইনারে আমদানি পণ্য অনুসারে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাওনা রয়েছে। তিনি বলেন, এসব কন্টেইনারের কাগজপত্র জমা হয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আইজিএম দাখিল হয়েছে। এসেসমেন্টও হয়েছে। কিন্তু শুল্ক পরিশোধ ও পণ্য খালাস হয়নি। এসব কন্টেইনার খুঁজতে গিয়ে বেশ গোলমেলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এসব কন্টেইনারে ঘোষণা অনুযায়ী আমদানি পণ্য ছিল, না কি নিষিদ্ধ পণ্য ছিল তাও সন্দেহ রয়েছে। বিনা শুল্কে এসব কন্টেইনার কীভাবে কোথায় গেল তা জানতে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। বন্দর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি সমপর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার সকালে কন্টেইনার গায়েব নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের পাঠানো একটি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, চিঠি পড়ে আমরাও বিস্মিত হয়েছি। চিঠিতে কোন কোন কন্টেইনারের হদিস মিলছে না সেগুলোর ব্যাপারে আমরাও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দেয়া চিঠির বিষয়টি আমরা একেবারে ফেলে দেয়নি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে বিশদ তথ্য চাইলেও চিঠির বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি
। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে আমদানি পণ্যের চালান পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিনই আমদানি পণ্যবাহী শত শত কন্টেইনার নামছে। এসব কন্টেইনারের বিপরীতে, বন্দরে জাহাজ ভেড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হয় বিল অব লেডিং বা চালানপত্র। যা দেখে ও যাচাই সাপেক্ষে সরকারের রাজস্ব আদায় করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অটোমেশন সিস্টেমে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ২০ থেকে ২৫টি কন্টেইনারের অস্তিত্ব পাওয়া না যাওয়ায় নড়েচড়ে বসে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যার প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত টিমের প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে হাজারো কন্টেইনার গায়েবের বড় ভুত। আর ভুতের অনুসন্ধানে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করে কাস্টমস।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=109333