১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:৩৯

কাঠমান্ডু ট্র্যাজেডি

মন্ট্রিয়ল চুক্তি সইয়ে বিলম্ব, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২১১’র ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। ১৯৯৯ সালের মন্ট্রিয়ল চুক্তি স্বাক্ষরে নেপাল ও বাংলাদেশের বিলম্ব হওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মন্ট্রিয়ল চুক্তির ২১তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যাত্রীদের মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ ১ লাখ ‘স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস’ দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে এয়ারলাইন্সের। যাত্রীপ্রতি যার মূল্যমান ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬২ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫১ টাকা। প্রতিটি এয়ারলাইন্স বাধ্যতামূলক ইন্স্যুরেন্সের অধীনে যা প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে।
এটা মোটরগাড়ির জন্য
থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের মতোই। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যাত্রী ও তাদের পরিবারগুলোকে অবশ্যই এই ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত।
ওয়ারশ’ চুক্তিতে নেপাল স্বাক্ষর করায়, যাত্রীপ্রতি আনুমানিক ১৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকারও বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এয়ারলাইন্সের। সাগরমাতা ইন্স্যুরেন্সের ক্লেইম ডিপার্টমেন্টের প্রধান সুভাষ দিক্ষিত বলেন, ‘এমন ঘটনার ক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স ও ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভিন্ন দুটো চুক্তি।’ তিনি বলেন, ‘ওয়ারশ’ চুক্তির অধীনে একজন নেপালি যাত্রী পাবেন ২০ হাজার ডলার (১৬ লাখ টাকা)’।

গেল সপ্তাহে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৪৯ জন যাত্রী প্রাণ হারান। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি এবং একজন চীনা।
মন্ট্রিয়ল চুক্তিটি বহুমুখী একটি চুক্তি যা ১৯৯৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও’র) সদস্যরাষ্ট্রগুলোর একটি কূটনৈতিক বৈঠকে গৃহীত হয়।
ওই চুক্তির ধারা মোতাবেক: ‘উড়োজাহাজে অবস্থানকালীন বা এতে ওঠা ও নামার প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনো যাত্রীর মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট ক্যারিয়ার (এয়ারলাইন)।’ ১৯৯৯ সালের ২৮শে মে মন্ট্রিয়ল কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশটি চুক্তিতে অনুসমর্থন দেয়নি। ওদিকে, ২০১০ সালে প্রক্রিয়া শুরু হলেও নেপাল এখনও ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ ওই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। ফলে, ওই দেশগুলোর প্রতি যাত্রীর ক্ষেত্রে নিয়ম প্রযোজ্য হবে। আর তারা প্রত্যেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬২ ডলার (আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫১ টাকা)।

নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করাটা নেপালের জন্য কখনই অগ্রাধিকার ছিল না। প্রক্রিয়া চলমান তবে খুবই ধীর গতিতে।’
তিনি জানান, চুক্তির একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মন্তব্যের জন্য পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে তাদের সমর্থন দিয়ে দিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এলেই তা মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে এবং পরে তা উপস্থাপন করা হবে পার্লামেন্টে। চুক্তিটি প্রয়োগ করার জন্য পৃথক পৃথক আইনের খসড়ার প্রয়োজন হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এতে করে এয়ারলাইন্সগুলোর যে বিমার কিস্তি দিতে হয় তার অঙ্ক বাড়বে, যা যোগ হবে যাত্রীদের টিকিটের মূল্যে। তবে এয়ারলাইন্সের ওপর প্রভাব পড়বে সাময়িক। এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনত আরো বেশি দায়বদ্ধ হলে দীর্ঘমেয়াদে, এভিয়েশন শিল্পে যাত্রীদের আস্থা বাড়বে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর মতো সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারণে সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে নেপালের অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সগুলো।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এ নিয়ে বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে একমত নই কেন না, সকল যাত্রীই সমমর্যাদার- তিনি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করুক বা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে।
নেপালের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলো ১৯২৯ সালের ওয়ারশ’ চুক্তির অধীনে পরিচালিত। ওই চুক্তিতে আহত বা মৃত্যু হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যাত্রীপ্রতি ৮৩০০ ডলার (আনুমানিক ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩ টাকা)। এর জায়গায় পরে আসে দ্য হেগ প্রটোকল। ১৯৫৫ সালে হেগ শহরে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ওয়ারশ’ চুক্তিতে সংশোধন আনে। এই সংশোধনীতে প্রতি যাত্রীর জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ডলার (টাকায় আনুমানিক সাড়ে ১৬ লাখ ৬০ হাজারের কিছু বেশি)।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=109391