১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:৩৬

এএলআরসি

রোহিঙ্গা ঢালে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন চাপা পড়তে পারে না

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটকে ব্যবহার করে গর্হিত মানবাধিকার লঙ্ঘন লুকাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন নির্যাতনে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে। সমপ্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৩৭তম নিয়মিত অধিবেশনে পাঠানো এক মৌখিক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি)।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এএলআরসি। জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে। এএলআরসি’র বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ৪২১টি জোরপূর্বক গুম; ১ হাজার ৪৮০টি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের কারণে ১২০টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বেশির ভাগ সময়ই এ ধরনের মানিবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন বিরোধীদলীয় কর্মীরা। ২০১৮ সালের ৬ই মার্চ পুলিশ নিয়মবহির্ভূতভাবে জাকির হোসাইন নামের এক বিরোধীদলীয় ছাত্র-নেতাকে গ্রেপ্তার করে। তিন দিন পুলিশি রিমান্ডে থাকার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১২ই মার্চ পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে মারা যায় জাকির। লাশঘর থেকে সাংবাদিকদের তোলা ছবিতে, তার দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তার হাতের ও পায়ের আঙুলের নখ তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু, ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত প্রতিবেদনে জাকিরের দেহে আঘাতের দাগ পাওয়া

যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। গত বছর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে দেয়া এক রায়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সংশোধনীতে, সংসদ সদস্যদের বিচারপতিদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এএলআরসি’র বিবৃতি অনুসারে, গত নির্বাচনের দিকে আঙুল তুলে, বর্তমান সংসদের বৈধতাকে প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্ট সংশোধনীর বিপক্ষে রায় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকার তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেছে।

এক বৃটিশ পত্রিকায় ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ইতালিতে অভিবাসনের প্রত্যাশায় ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করা সংখ্যাগরিষ্ঠ শরণার্থী ছিল বাংলাদেশি। এই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায় যে, সামনে এই অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে। এএলআরসি’র বিবৃতিতে বলা হয়, মূলত বাংলাদেশ সরকার তাদের উদ্বেগজনক মানবাধিকার পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট দিয়ে ঢেকে রেখেছে। পরিষদের উচিত, খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই এই বিপদ শঙ্কাপূর্ণ পরিস্থতির দিকে নজর দেয়া।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=109383