১৬ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কঠিন হয়ে যাচ্ছে

প্রথম তালিকার ৮০৩২ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ৭৬৫৮ জনকেই অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। মাত্র যে ৩৭৪ জন রাখাইনের বাসিন্দা ছিল বলে তারা দাবি করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা আদৌ ফিরতে চায় কি না তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। একদিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বড় অংশকেই অস্বীকার করছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশও একমত।
ঢাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি আন্তরিকভাবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান প্রত্যাশা করেন। কিন্তু কবে নাগাদ এটি সম্ভব হবে সে বিষয়ে কোনো ধারণাই করতে পারছেন না।

ওই কূটনীতিক বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে যত দেরি হবে সংকট তত বাড়বে। এককথায়, রোহিঙ্গাদের ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন কমছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যায় পড়েছে। জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ সংকট সমাধানের চেষ্টা করেছে। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষে চীনের অবস্থান সবাইকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।

ওই কূটনীতিক বলেন, চীন বলছে যে সে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরপেক্ষ আছে। কিন্তু ব্যবহারিক দিক দিয়ে এটি মোটেও নিরপেক্ষ অবস্থান নয়। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা হলেই চীন তাতে বাধা দিচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র আট হাজার ৩২ জনকে নিয়েই যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হয়েছে তাতে আশাবাদী হওয়ার ন্যূনতম কারণ নেই। মিয়ানমার কৌশলে তার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকেই দেশছাড়া করে এখন ফেরত না নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এমন পরিস্থিতি মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে যাতে কেউ আর ফিরতে আগ্রহী হবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদেরও পরিচয় যাচাই করেই ফেরত নেওয়ার কথা এখন মিয়ানমার জোর দিয়ে বলছে। অর্থাৎ সর্বস্বান্ত হয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে আসা ওই রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। বাংলাদেশ যখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দেশের জনগণ ও সরকারকে বাহবা দিয়েছে। প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল গড়াও সম্ভব হয়েছে। এ মাসেই দ্বিতীয় তহবিল গড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করবে মানবিক সংস্থাগুলো। আগামী দিনগুলোতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা মিলবে কি না তা নিয়েই জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমার সরকার গত বুধবার নেপিডোতে বিদেশি কূটনীতিকদের বলেছে, ওই দেশটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ বা গণহত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি। মিয়ানমারের দাবি, জঙ্গিগোষ্ঠী আরসার হুমকি আর বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনযাপনের প্রলোভনেই রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়েছে।

মিয়ানমার সরকারের এসব বক্তব্যের এক দিন আগেই গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা আদামা দিয়েং ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা ও অপদস্থ করা হয়েছে। এর মূল কারণ তারা রোহিঙ্গা।’
ঢাকার এক পশ্চিমা কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা নিধনের হোতা মিয়ানমারের এক জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এত অভিযোগের পরও মিয়ানমারের অস্বীকারের নীতি অব্যাহত থাকা প্রমাণ করে যে দেশটি এতটুকুও বদলায়নি।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/03/16/613912