১৬ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১১

মালি থেকে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক আ. লীগ নেতা!

শেষ পর্যন্ত দুদকের মামলা

সামান্য সরকারি কর্মচারী হয়েও প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হয়েছেন সেলিম মোল্লা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মালি থেকে পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক বনে যান। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার ভিত্তিতেই দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। অনুসন্ধানকালে দুদক কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান সম্প্রতি সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করেন সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে। ওই নোটিশের জবাবে সেলিম মোল্লা তাঁর সম্পদ বিবরণীতে দুই কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেলিম মোল্লার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর বাইরেও তিনি দুই কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৬ টাকার জানা আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করা হয় বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পায়, শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনই নয়, সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে অপহরণচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। সরকারি কর্মচারী হলেও সেলিম মোল্লা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। পাশাপাশি তাঁর ছেলে রাজিবুল হাসান ওরফে রাজীব একই উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক এই পরিচয়ের আড়ালে তাঁরা দুজন মিলেই নেতৃত্ব দেন একটি অপহরণচক্রের। চক্রের অন্য সদস্যরাও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত রবিবার সেলিম মোল্লাসহ অপহরণচক্রের ১০ জনকে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলার কালিকাপুর মৌজা, পশ্চিম বান্দুটিয়া মৌজা, রানিয়াদি মৌজা, কামারঘোনা মৌজাসহ আশপাশে বেশ কয়েক কোটি টাকার জমি রয়েছে সেলিমের। প্রথম স্ত্রী পারভীন আক্তার ও দ্বিতীয় স্ত্রী হাফিজা খানের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। সরকারি ছোট পদে চাকরি করলেও এলাকায় বলে বেড়াতেন তিনি সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে। তিনতলা বাড়ি, বহুতল ভবন, দামি প্রিমিও গাড়ি, মিনিবাস, ট্রাকসহ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

জানা গেছে, চার-পাঁচ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগে জড়িত হয়ে এলাকায় প্রভাব খাটাতে থাকেন। স্থানীয় ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকবারের সভাপতিও তিনি। সেলিম প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রায় আট বিঘা জমি মাটি ভরাট করে আড়াই শতাধিক দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/03/16/613954