১৬ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১০

বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা

২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। অথচ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে যে খেলাপি ঋণ ছিল তা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৯.৩১ শতাংশ। আর ওই বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল সাত লাখ ৯৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা।
তবে বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বাড়লেও গত বছর সেপ্টেম্বরে যেখানে ব্যাংক খাতে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ছিল, ডিসেম্বরে সেখান থেকে কমে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত বছর ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা ওই ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ২৬.৫২ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪০ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা।
আর গত বছর ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৪.৮৭ শতাংশ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ছয় লাখ তিন হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, যা এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৭.০৪ শতাংশ। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, যা এ খাতের ব্যাংক দুটির বিতরণ করা ঋণের ২৩.৩৯ শতাংশ। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক দুটির বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ২৩ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।

এদিকে খেলাপি ঋণের তথ্যের সঙ্গে অবলোপন করা খেলাপি ঋণের তথ্য যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরো বেশি হবে। গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে অবলোপন করা খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে অবলোপন করা ঋণের স্থিতি এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ সম্পর্কে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ছে প্রথমত রাজনৈতিক চাপসহ বিভিন্ন চাপে ঋণ বিতরণের ফলে। চাপের কারণে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে। একে ব্যাংকিংয়ের ভাষায় বলা হয় ডিউ ডিলিজেন্স না করা।

দ্বিতীয়ত, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ঋণের বিপরীতে যে জামানতগুলো রাখা হচ্ছে সেগুলোও সঠিক নয়। ঠিকানামতো গিয়ে ব্যাংকাররা দেখতে পাচ্ছেন সেখানে কোনো কিছুই নেই। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, যোগসাজশ সব কিছুর কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকও শক্ত হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তদন্ত করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে বড় আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে মামলা লড়ার পরামর্শ দেন তিনি।

খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রমে পরিচালনা পর্ষদের হস্তক্ষেপ বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা প্রয়োগের তাগিদ দিয়ে সংস্থাটির সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে না। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করলে অবস্থার উন্নতি অবশ্যই হবে।

 

 

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/03/16/613922