১৬ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৮:০৫

কাঠমান্ডু ট্র্যাজেডির কারণ রহস্যাবৃত

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করার আগেই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ জানতে দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পরও কেন এবং কী কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, নেপাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি। এমনটি এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ারে (এটিসি) সে দিন যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কারো সাথেই তারা দেখা করে কথা বলার সুযোগ পাননি।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উড়োজাহাজটি অবতরণ করানোর জন্য পাইলট আবিদ সুলতান একাধিকবার রানওয়ে খালি করার জন্য এটিসি (এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ার) বলছিলেন। কিন্তু টাওয়ারের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাকে রানওয়েতে ‘ট্রাফিক’ থাকার কথা জানিয়ে আকাশেই ‘হোল্ড’ করার অনুরোধ জানান। কেন পাইলটকে হোল্ড করানো হচ্ছিল সেটি গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে নিয়ে আসা উচিত। কারণ তখন পর্যন্ত এয়ারক্রাফটে কোনো ধরনের সমস্যা রয়েছে এমন কোনো কথাই পাইলট টাওয়ারসংশ্লিষ্ট কারো কাছে উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি। যদি ওই রেকর্ড সত্য হয়ে থাকে। তবে ঘটনার পর ত্রিভুবন কর্তৃপ বলেছে, যে দিক দিয়ে বিমানটির রানওয়েতে অবতরণ করার কথা, পাইলট তার উল্টো দিক দিয়ে নেমেছে। তবে তাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএস-বাংলা কর্তৃপ দুর্ঘটনার জন্য ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ করে বিরুদ্ধে অবহেলা ও গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন।
বিমান বিধ্বস্তের তদন্ত প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান নাইম হাসান বলেন, তদন্ত কাজটি করছে নেপাল কর্তৃপক্ষ। আমাদের টিম শুধু তাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

গতকাল নেপালে অবস্থানরত একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানিয়েছে, ঘটনার পরদিন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এটিসির (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) দায়িত্বে যে ছয়জন ছিলেন, তাদের তদন্তের স্বার্থে কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে তিনজনই না কি ওই বিভাগের কাজের সাথে সম্পৃক্ত নন। এটির কতটুকু সত্যতা রয়েছে সেটি তদন্তে থাকা উচিত।
ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ার শেষ মুহূর্তের কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটির বক্তব্যগুলোর কোনো সত্যতা আছে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। তারপরও প্রাথমিকভাবে ককপিটে থাকা পাইলটের সাথে টাওয়ার সংশ্লিষ্টদের কথাবার্তায় সে মুহূর্তে যেসব কথাবার্তা হযেছিল তাতে মনে হচ্ছে, উভয়পক্ষের মধ্যে একটি ভুল বোঝাবোঝি হয়েছিল। এই ভুলবোঝাবুঝির পরিণাম কি এয়ারক্রাফট বিস্ফোরণ? তারপরও ঘটনার সঠিক তদন্তে যাদের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল সেই পাইলট আবিদ সুলতান, কো পাইলট পৃথুলা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তদন্তে অনেক কিছুই উদঘাটন হতো। কিন্তু তার আগেই তাদের এ পৃথিবীর ছেড়ে চলে যেতে হয়। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন অতিতের মতো এই ভয়াবহ উড়োহাজ দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা পড়ে না যায় সেটি অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ১২ মার্চ সোমবার দুপুরে পাইলট, কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফাইটটি নেপালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি অবতরণ করার আগেই রহস্যজনক কারণে পাশের একটি খোলা মাঠে আছড়ে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। এতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাইলটসহ ৫০ জনের মৃত্যু হয়। বাকিদের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। আহতদের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার শাহরিন আহমেদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনায় তার শরীরের ১০ শতাংশ পুড়েছে। ভেঙেছে পা।

এর আগে দুপুরে বারিধারার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের নেপাল ট্র্যাজেডির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে বলেন, আহতদের মধ্যে যাত্রী শাহরিন আহমেদকে আমরা ঢাকায় এনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এর আগে ১৪ মার্চ রাতে একজনকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আর দুই আহত যাত্রীকে ভারতে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। আহত ও তাদের স্বজনদেরও সব খরচ বহন করবে ইউএস-বাংলা। তিনি আরো বলেন, নেপাল ট্র্যাজেডিতে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন আমাদের চেয়ারম্যান স্যার।

তদন্ত শেষ হতে ৩৬৫ দিন লাগতে পারে : সিভিল অ্যাভিয়েশন চেয়ারম্যান
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছেন, নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার কুর্মিটোলা সিভিল অ্যাভিয়েশনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী ৩৬৫ দিনের মধ্যে এ ধরনের তদন্ত শেষ করতে হয়। প্রয়োজনে আরো বেশি সময় নেয়া যেতে পেরে। তিনি জানান, বুধবার পর্যন্ত নিহতের মধ্যে ১৯ জনের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের ময়না তদন্তে আরো কয়েক দিন লাগবে। লাশ শনাক্ত হওয়ার পর পর্যাক্রমে দেশে আনা হবে। লাশ দ্রুত দেশে আনতে তারা কাজ করছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/302117