১৫ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬

২ কোটি টাকা ক্ষতিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিচ্ছে এলজিইডি!

বিধি ভেঙে প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ইউজিপি-৩ প্রকল্পের একটি কাজের কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আজ বা রোববারের মধ্যে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণে এ ঘটনা ঘটেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর এলজিইডির ইউজিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উন্নয়ন কাজের দরপত্র জমা নেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওই কাজের জন্য দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় তাদের আবেদন বাছাই করা হয়। এ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিু দর দেয় মেসার্স কবির হোসাইন। এ প্রতিষ্ঠান দর দেয় ৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর সর্বোচ্চ দর দেয় মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স। এ প্রতিষ্ঠানের দর ছিল ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সর্বনিু আর সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের দরের ব্যবধান ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সর্বনিু প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ওই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বনিু দরদাতা এইচজেড অ্যান্ড জেভি (৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা), তৃতীয় সর্বনিু দরদাতা আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেড (৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা) ও চতুর্থ সর্বনিু দরদাতা মেসার্স মনির ট্রেডার্স (৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা)।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এলজিইডির নিবন্ধিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এলজিইডির সব কাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকে। অভিজ্ঞতা কিছুটা কম-বেশি হতেই পারে। তবে কাজ করার যোগ্যতা সবারই রয়েছে। সংক্ষুব্ধ এক ঠিকাদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমি এলজিইডির সব ধরনের কাজ করছি। এখানে কাজ করার সব ধরনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে আমার প্রতিষ্ঠানের। এখন কাজ পেতে ঘুষ কম দেয়া লাগে এ কারণে অনেক কম দামে কাজও করা সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে আমরা মোটামুটি লাভ হওয়ার মতো দর দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের সর্বনিম্ন দর দেয়াকে পছন্দ করছে না প্রকৌশলীরা। এ কারণে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে, সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিচ্ছে। সামান্য এদিক-ওদিক মেনে নেয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে প্রথম সর্বনিু দরদাতা বাদ পড়লে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পান। এ প্রকল্পের দরপত্রে পঞ্চম স্থান অধিকারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার তোজজোড় আমাদের আহত করেছে।’

আরেকজন ঠিকাদার বলেন, ‘ভাই কম দর দিলে কাজ না পেলে কোথায় যাব। ই-টেন্ডারিং হওয়ায় এখন দরপত্রে যথেষ্ট স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে। কেননা, এটা সবাই পর্যালোচনা করতে পারে। এ কারণে দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কমেছে অনেকাংশে। এলজিইডিতে সাম্প্রতিক সময়ের কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু ইউজিপি-৩ প্রকল্প নিয়ে আমরা রীতিমতো হতাশ।’
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আয়ুব আলী বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, ‘সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাজের মান ভালো। এ কারণে তাদের কাজ দেয়া হচ্ছে। কেননা, আমরা চাই টেকসই উন্নয়ন। এক্ষেত্রে টাকা কত বেশি গেল সেটা বড় বিষয় নয়।’ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি কোনো ঘুষ খাই না, আমাকে কেউ ম্যানেজ করতে পারে না। আমি অন্য প্রকৌশলীদের মতো নই।’

এলজিইডির ইউজিপি-৩ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী রেজাউল করিমের কাছে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জানতে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/27667