পাবনার গুমানী নদীর মধ্য দিয়ে চলছে মাল বোঝাই মহিষের গাড়ি
১৪ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৭:৩৬

মাঘ-ফাল্গুনেই শুকিয়ে যাচ্ছে চলনবিলের ১৬ নদী

আজ আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস

মাঘ-ফাল্গুনেই শুকিয়ে যাচ্ছে চলনবিল এলাকার নদীগুলো। বছরের পর বছর খনন না করায় এ এলাকার নদ-নদীগুলো ভুগছে নব্যতা সঙ্কটে। ফলে সেচকার্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশী মৎস্যসম্পদও আজ বিলুপ্তির পথে। এর প্রভাব পড়ছে ব্যবসাবাণিজ্যেও। চলনবিল এলাকার নদীনালা হারিয়েছে আগের ভরা যৌবন। মাঘের শুরুতে বেশির ভাগ নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সে সব নৌরুটের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। নৌ পথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম হলেও বর্তমান সময়ে এ এলাকার সব জলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশি খরচে ব্যবসায়ীদের স্থলপথে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে।

অধ্যক্ষ মো: আব্দুল হামিদ রচিত চলনবিলের ইতিকথা গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, জলপাইগুড়ির পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া আত্রাই ও গুড় নদী রাজশাহীতে এসে কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর একটি শাখা কয়রাবাড়ি, নন্দনালী এবং আত্রাই হয়ে আত্রাই ঘাটের এক মাইল নি¤œ থেকে ‘গুড়’ নামে সিংড়া, একান্ন বিঘা, যোগেন্দ্রনগর ও কালাকান্দরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁচকৈড় ত্রিমোহনায় নন্দ কুজার সাথে মিশেছে। এদের মিলিত ¯্রােত গুমানী নামে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে নূরনগরে বড়াল নদীর সাথে মিশেছে। ১৭৮৭ সালে তিস্তার সাথে আত্রাই নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জলপাইগুড়ির উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ নিমগাছী তাড়াশ, চাটমোহরের হাণ্ডিয়াল হয়ে অষ্টমনিষার কাছে বড়াল নদীতে মিশেছে। করতোয়ার নিম্নাংশ আত্রাই ও ফুলঝোড় নামে পরিচিত। বড়াল নদী পদ্মার চারঘাট মোহনা থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম হয়ে চাটমোহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নূরনগরে গুমানীর সাথে মিশে বড়াল নামেই ভাঙ্গুড়া ফরিদপুর বাঘাবাড়ি হয়ে হুরাসাগরের সাথে মিশে নাকালিয়া এলাকায় গিয়ে যমুনার সাথে মিশেছে। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে ও নদীটি ¯্রােতস্বীনি থাকলেও একেবারে শেষের দিকে রাজশাহী থেকে নূরনগর পর্যন্ত নদীটির অনেক স্থানে ক্রস বাঁধ দেয়ায় এ নদীটি এখন মৃতাবস্থায় পড়ে আছে। এ নদী উদ্ধারে বড়াল রক্ষা কমিটি দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসার ফলে চাটমোহর নতুন বাজার, বোঁথর ঘাট ও রামনগরের ঘাটের তিনটি ক্রস বাঁধ অপসারণ করা হলেও পদ্মার সাথে যমুনার সংযোগ ঘটানো সম্ভব হয়নি এখনো।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা যমুন নদী হয়ে ঢাকা থেকে যেসব পণ্য নৌপথে আনতেন এখন তা পারছেন না। সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে তাদের বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। ক্রেতারা ও বিভিন্ন হাটবাজার থেকে পণ্য কিনে নৌপথে বাড়িতে নিতে পারছেন না। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মৎস্যজীবী। পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আগে নদী থেকে কৃষক অগভীর নলকূপের সাহায্যে বোরো ক্ষেতে পানি সেচ দিতে পারলেও এখন তা পারছেন না। উপরন্তু পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর পাম্প মালিকেরা মওসুমের শুরুতেই তাদের সেচপাম্প সমতল থেকে অন্তত ১০ ফিট নিচে স্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত বছর আত্রাই রিভার ড্রেজিং কাজ শুরু হলেও সেখানে অনিয়মের প্রশ্ন উঠে শুরু থেকেই।

পরিবেশবিদ ড. এস এম মুক্তি মাহমুদ জানান, ভৌগোলিকভাবে এ এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো নদীর জীবনচক্রের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ বার্ধক্য অবস্থায় পরিণত হয়েছে। লক্ষণীয় যে, চলনবিল এলাকার নদীর তলদেশের ঢালের পরিমাণ কম, নদীর প্রবাহমান পানির পরিমাণ কম, স্রোতের বেগও কম। উৎসস্থান থেকে নদীগুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায়, পানির সঙ্গে প্রবাহিত মৃত্তিকা কণা বালুকণা, নুড়িকণা এবং অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা বেশি ও নদীর তলদেশে তা সঞ্চয়ের পরিমাণও বেশি হওয়ায় ক্রমেই নদী উপত্যকার পানি ধারণক্ষমতা কমে আসছে। ফলে শুষ্ক মওসুমে নদীগুলো একেবারেই শুকিয়ে যাচ্ছে। বড়াল নদী রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান জানান, নদনদী খালবিল চলনবিলের প্রাণ। এগুলো রক্ষা করতে না পারলে চলনবিল তার স্বকীয়তা হারাবেই। দ্রুত নদনদীগুলো খনন করা হলে ঐতিহ্যবাহী চলনবিল প্রাণ ফিরে পাবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/301613