১৪ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৭:৩০

আগামী অর্থবছরেও দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২০০০ কোটি টাকা

আগামী অর্থবছরে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য আবারো অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এই বরাদ্দের পরিমাণ হতে পারে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার অর্থমন্ত্রীর সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর নামে অর্থ বরাদ্দের সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, জনগণের করের টাকা এভাবে অপচয় করা উচিত নয়।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি খাত রয়েছে। মূলত এই খাত থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ দেয়া হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল। তাই আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। প্রাথমিকভাবে আগামী অর্থবছরেও এই খাতে দুই হাজার কোটি টাকা রাখা হবে।

সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংককে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংক। তাদের দেয়া হয়েছে ৩০০৩ কোটি টাকা। একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।

এ দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চেয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তাদের যে মূলধন ঘাটতি হয়েছে তা মেটানোর জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ‘হল-মার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিও ‘অ্যাননটেক্স’ নামের একটি অখ্যাত গ্রুপকে নিয়মনীতি না মেনে ৫ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

দুর্নীতির কারণে আলোচিত অপর ব্যাংক বেসিকও মূলধন পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে। মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য রূপালী ব্যাংকের প্রয়োজন দেখানো হয়েছে ১২৫০ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংক বলে বিবেচিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এ খাতে চেয়েছে ৭ হাজার ৩৪৮ কোটি এবং ৮০০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে বরাদ্দ রয়েছে সাকুল্যে দুই হাজার কোটি টাকা। তাই মন্ত্রণালয় বছরজুড়ে এই পরিমাণ অর্র্থই তাদের দিতে পারে। তবে এ জন্য বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রদান করতে হবে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছেÑ গত অর্থবছরে মূলধন পুনর্গঠন বাবদ প্রদত্ত অর্থে অর্থ বিভাগ কর্তৃক শর্তাবলি প্রতিপালিত হয়েছে কি না; ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি উন্নয়নকল্পে ব্যাংকগুলো কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মূলধন পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ার কারণ; ব্যাংকগুলোর সেবার মান বৃদ্ধিকল্পে ও অটোমেশন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে; খেলাপি ঋণ আদায়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং ‘ব্যাসেল-থ্রি’ (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধনের পরিমাণ) অর্জনে ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা কী।

যদি এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংককে টাকা দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সোনালীকে দেয়া হতে পারে ৪০০ কোটি টাকা, জনতাকে ৪০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেয়া হবে ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্য দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি অংশের পরিশোধিত মূলধনের জন্য দেয়া হবে ২১ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/301617