১৪ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৭:২৯

সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে অন্ধকার

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

বহু প্রতীক্ষিত রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষ হলেও জনভোগান্তি এখনো কমেনি। রাতে ফ্লাইওভারে থাকা বাতি জ্বলে না। সন্ধ্যা হলেই ফ্লাইওভারে নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বারবার তার চুরির কারণে বাতিগুলো জ্বলছে না। অকার্যকর হয়ে পড়েছে ট্রাফিক সিগন্যালগুলোও। এ দিকে ফ্লাইওভারের মালিকানা নিয়েও জটিলতা না কাটায় এটি দেখভাল করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা হয়েছে চার মাস আগে। এর মধ্যে মৌচাক অংশে ট্রাফিক সিগন্যালের বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়েছে তিনবার। সর্বশেষ গত ২ মার্চ তার চুরির ঘটনা ঘটে। এ কারণে রাতে হলিফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাতরাস্তা, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, রাজারবাগ, শান্তিনগর অংশে বাতি জ্বলে না। তিনবার বৈদ্যুতিক তার চুরির কারণে এখন আর নতুন করে তার না লাগানোয় অন্ধকারে যানবাহন চলাচলের সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের মৌচাক অংশের দু’টি স্থানে পাঁচটি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি লাগানো হয়েছে। তার চুরির আগে সেগুলোতে আলো জ্বলতে দেখা গেছে, সিগন্যাল মোতাবেক যানবাহন চলাচলও করেছে। এখন তার চুরির পর চার লেনের মৌচাক অংশের ট্রাফিক সিগন্যাল চলছে হাতের ইশারায়।
উড়াল সড়কটি নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্র্রাকশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পরই ফ্লাইওভারটি এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তারাই সব কিছু দেখভাল করবে। তবে নিয়ম অনুযায়ী আগামী জুন পর্যন্ত উড়াল সড়কের কাঠামোগত কোনো ত্রুটি হয় কি না সেটি দেখবে তমা কনস্ট্রাকশন।
প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ ফ্লাইওভার বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। প্রকল্পটির পরিচালক এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার পাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি সর্বশেষ উদ্বোধনের পর প্রায়ই বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে যায়। এ পর্যন্ত তিনবার তার চুরি হয়েছে। প্রথম দুইবার তার চুরির পরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তারাই তাদের পক্ষ থেকে দুইবার তার লাগিয়েছে তাদের খরচে। এখন আবার তার চুরির পর কে টাকা খরচ করে তার লাগাবে এ জন্য টানাপড়েনের কারণেই তার লাগানো হচ্ছে না। তিনি জানান, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে এলজিইডির দায়দায়িত্ব প্রকল্প শেষেও শেষ হয়ে যায়নি। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলে প্রথম দুইবার তার লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কত খেসারত দেবে? তারপরও তারা সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
সুশান্ত কুমার পাল বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটির সর্বশেষ অংশ উদ্বোধনের পরই এ প্রকল্পটি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ডিজাইন-ড্রয়িংসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাগজপত্র তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এর সফট কপিও তাদের দেয়া হয়েছে। এখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই প্রকল্পটির দেখভাল করবে। তাদের ওপরে সব দায়িত্ব এমনিতেই বর্তায়।

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটির বাংলামোটর, মগবাজার, তেজগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা অংশ পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায়। আর বাকি অংশ মৌচাক, মালিবাগ মোড়, রাজারবাগ, শান্তিনগর অংশ পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায়।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পটির উদ্বোধনের পর এটি দুই সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। তারা (এলজিইডি) আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই প্রকল্পটি আটকে আছে। আমরা কিভাবে বুঝে নেবো, তা নিয়েই এখন চিঠি চালাচালি করা হচ্ছে, বৈঠকও হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা প্রকল্পটির যার যার অংশ বুঝে নেবো।

মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার সোনারগাঁও, মগবাজার এবং মালিবাগ রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সাতটি মোড় সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, ওয়্যারলেস গেট, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা ও শান্তিনগরের ওপর দিয়ে গেছে। চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, রমনা (হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা), বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে ১৫টি র্যাম্প।
ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি’ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্র্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নির্মাণ কাজ করে।

দীর্ঘ অপেক্ষা আর স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের পর গত বছরের ২৬ অক্টোবর যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া হয় মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার।
ঢাকার কেন্দ্রভাগে অন্যতম ব্যস্ত এবং চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছয় বছর ধরে এ নির্মাণকাজের জন্য দারুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও চলতি পথের যাত্রীদের। বেহাল রাস্তার কারণে মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর এলাকার বিপণিবিতান ও দোকানপাটের ব্যবসায়ীরা হয়েছেন ক্ষতির শিকার। প্রতিদিন চলাচলের দুর্ভোগে পড়ে অনেকেই ওই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বাসা নেয়ায় স্থানীয় ভবনমালিকদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/301618