মিয়ানমারের সেনা ও উগ্র বৌদ্ধদের গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছেন রাখাইনের রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি)
১৪ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৭:২৪

রাখাইনে গণহত্যার সুস্পষ্ট আলামত রয়েছে : জাতিসঙ্ঘ দূত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যার সুস্পষ্ট আলামত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। তিনি বলেন, এ ঘটনার জন্য অং সান সু চির সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।

গত সোমবার জাতিসঙ্ঘের এই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার সরকার যে জাতিগত নির্মূল অভিযানের কথা অস্বীকার করছে এবং এই সেনা অভিযানের জন্য আরসার হামলাকে দায়ী করছে তা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। লি বলেন, ‘সেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটি আমার কাছে ক্রমেই আরো স্পষ্ট হচ্ছে, এসব ঘটনা গণহত্যার চিহ্ন বহন করে এবং তা দায়ীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যথেষ্ট।’ জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে এসব কথা বলেন ইয়াংহি লি।

এর আগে একাধিকবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যেতে চাইলেও তাকে অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার। রাখাইনে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের যেসব তথ্য আসছে সেগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি সহিংসতার প্রথম এক মাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৩০টি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ছিল। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার প্রধান জাইদ রা’দ আল হুসেইনের কথার প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভিত্তি করে তদন্ত হওয়া উচিত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য তা একটানা তিন বছর চলা উচিত’। উল্লেখ্য গত সপ্তাহে রা’দ আল হুসেইন রোহিঙ্গা নিপীড়ন তদন্তের জন্য নতুন একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য প্রমাণ সংগ্রহের দাবি জানান।

ইয়াংহি লি আরো বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি এই নৃশংসতার হুকুম দিয়েছে এবং যারা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গ্রুপটির বিরুদ্ধে এই বর্বরতা চালিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। সরকারের কর্মকর্তারা এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করার কোনো চেষ্টাই করেনি, এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দাও জানায়নি। তাই তাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দায়ী : ব্রিটেন
আনাদোলু জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্মূল অভিযানের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে ব্রিটেন। ব্রিটিশ সরকারের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়কমন্ত্রী মার্ক ফেইলড বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ব্যাপক ও সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দায়ী। মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুসন্ধানী দলের রিপোর্টে মিয়ানমারে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে প্রমাণ হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই প্রথমত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।’ জাতিসঙ্ঘের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৩১৯টি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। তথাপি অঞ্চলটিতে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য কোনো তদন্ত দলকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পুলিশের কয়েকটি ফাঁড়িতে হামলার সূত্র ধরে উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সামরিক অভিযান চালায় মিয়ানমার। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ চালায় সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী স্থানীয় বৌদ্ধরা। নিহত হয় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখের বেশি লোক। শুরু থেকেই এসব ঘটনায় মিয়ানমার সরকার ও তাদের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে আসছে আন্তর্জাতিক মহল। তবে মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করার পাশাপাশি রাখাইনের সহিংসতা তদন্তের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক সুপারিশকেই আমলে নিচ্ছে না। এলাকাটিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, কূটনীতিক, সাংবাদিক এমনকি ত্রাণকর্মীদেরও ঢুকতে দেয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/301526