১৪ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৭:২২

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিন

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের খাদ্য (চাল, গম) উৎপাদনের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী তিন দশকের সরকারগুলো দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম এবং কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ প্রথমবারের মতো ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে চাহিদার তুলনায় বেশি খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম হয়। খাদ্যে উদ্বৃত্তের এ ধারাবাহিকতা পরবর্তী কয়েক বছর অব্যাহত থাকে।
এর মূল কারণ ছিল সার্বিক কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে সার্বিক কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ (সূত্র : বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০০৫)। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পরপর দুটি ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আইলার কারণে আমনের উৎপাদন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গেলেও ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়ায়।
এরপর থেকেই কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার অস্থিতিশীল ও নিম্নগামী হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে সার্বিক কৃষি খাতের সবচেয়ে বড় উপখাত শস্য খাতে। এ উপখাতে নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে অন্যতম খাদ্যশস্য আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, খাদ্যে মোটামুটি ১১টি উপখাত থাকলেও দেশে খাদ্য বলতে চাল ও গমকে বোঝানো হয়। খাদ্যের উদ্বৃত্তাবস্থা থেকে ঘাটতিতে পড়া এবং চাহিদা মেটাতে আমদানি নির্ভরশীল হয়ে পড়ার বিষয় পর্যালোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

আগেই উল্লেখ করেছি, দেশ প্রথমবারের মতো ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে চাহিদার তুলনায় বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। এ বছর মোট খাদ্য উৎপাদন দাঁড়ায় ২ কোটি ৪৯ লাখ টনের সামান্য বেশি। তৎকালীন ১২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের চাহিদার তুলনায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার টন বেশি খাদ্য উৎপাদিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০-০১, ২০০১-০২, ২০০২-০৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৩ কোটি ১০ লাখ, ১৩ কোটি ৩০ লাখ এবং ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টন, ২ কোটি ৫৯ লাখ টন এবং ২ কোটি ৬৭ লাখ টন। এতে চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত খাদ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ২৩ লাখ ৮৪ হাজার টন, ১২ লাখ ৯৫ হাজার টন এবং ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টন (সূত্র : Database on Food Situation Bangladesh, December 2003, Ministry of Food)। উল্লিখিত সূত্রের তথ্যানুযায়ী এ সময়কালে মাথাপিছু দৈনিক ৪৫৩ দশমিক ৬ গ্রাম খাদ্য (চাল, গম) চাহিদার বিপরীতে খাদ্যপ্রাপ্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২২ গ্রাম থেকে ৫৫৭ দশমিক ৬২ গ্রামের মধ্যে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল সার্বিক কৃষি খাতে উচ্চপ্রবৃদ্ধির হার। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আমন ফসল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষি খাতে এ প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গেলেও ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা বেড়ে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়ায়। পরবর্তী বছরগুলোয় কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির এ হার ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪৬, ৩ দশমিক ০১, ২ দশমিক ৪৬, ৪ দশমিক ৩৭, ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসে ২
দশমিক ৬ শতাংশে (সূত্র : অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৬-১৭)।
কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার নিম্নগামী হওয়ায় প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শস্য উপখাত। এ উপখাতের চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার দারুণভাবে কমে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘Yearbook of Agricultural Statistics, 2016’ অনুযায়ী ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চালের উৎপাদন দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টন, ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার টন, ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার টন, ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার টন এবং ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার টন। এতে দেখা যায়, এ সময়কালে দেশে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক শূন্য শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট চাল উৎপাদনের চূড়ান্ত হিসাব সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বোরো, আমন ও আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৮ হাজার টন। এর মধ্যে বোরো ও আমনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার টন ও ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার টন।
এ পর্যন্ত সরকারি ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে যতটুকু জানা যায়, চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সিলেটের হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় ব্লাস্ট রোগের কারণে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০ লাখ টন কমে গেছে বলে কিছুদিন আগে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, যদিও এর আগে খাদ্যমন্ত্রী বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০ লাখ টন কমে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

সেক্ষেত্রে বোরোর উৎপাদন ১ কোটি ৮১ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। পরপর বন্যার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সিপিডির গবেষণায় বোরো ও আমনের ক্ষতির আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৩০০ কোটি এবং ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। (সূত্র : যুগান্তর, ২৭ জানুয়ারি)।
চাহিদার তুলনায় চাল উৎপাদন না হওয়ায় দেশ খাদ্যে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রধান খাদ্য চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টন (সরকারি খাতে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ২ লাখ ৯০ হাজার টন), ২০১১-১২ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার টন (সরকারি খাতে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ০.৫৯ লাখ মে. টন)। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চাল আমদানি আরও হ্রাস পেলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার টনে।

২০১৫ সালে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চালের আমদানি দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৭ হাজার টনে। দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে এবং শিগগির চাল রফতানিকারক দেশগুলোর কাতারে শামিল হবে- সরকারের এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে সরকারি খাতে চাল আমদানি বন্ধ এবং গবেসরকারি খাতে চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চাল আমদানির ওপর শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ১ লাখ ৩৩ হাজার টনে। ফলে ২০১৭ সালের জুনের পরপরই দেশের কম-বেশি ৮০ ভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকা হলে তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে।

দেশে চালের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বিরাট ফারাক থাকায় সরকার চাল আমদানির ওপর শুল্ক হার হ্রাস করে ২ শতাংশে নির্ধারণ করে। ১৮ জানুয়ারি একটি দৈনিকের (বণিক বার্তা) রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরজুড়েই দেশে ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টন খাদ্যশস্য (১ লাখ ৩৩ হাজার টন চাল ও ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টন গম) আমদানি করা হয়েছিল, যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ আমদানি। আর চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ২৪ লাখ ৪৬ হাজার টন চাল এবং ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার টন গম অর্থাৎ মোট ৬১ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, জুলাই থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে দেশে খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ ২১ হাজার ৮৬ টনে। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ১৬ টন। বাকিটা গম। অনেকে মনে করছেন, চলতি অর্থবছরে খাদ্য আমদানি ১ কোটি টনের কাছাকাছি পৌঁছাবে, যা হবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্য আমদানি। এভাবে বিশ্বের চতুর্থ চাল উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান চাল আমদানিকারকে পরিণত হয়েছে।

খাদ্য তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গমের চাহিদা বছরে কম-বেশি ৭০ লাখ টন। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন ১৯ লাখ টনে দাঁড়ালেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পণ্যটির উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ থেকে সাড়ে ১৩ লাখ টনের মধ্যে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গমের উৎপাদন ছিল ১৩ লাখ ৪৮ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদনের বেশি হবে না, কারণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় ব্লাস্ট রোগের কারণে গম উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউএসডিএ’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে গম আমদানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৬০ লাখ টনে, যা গত অর্থবছরের (২০১৬-১৭) তুলনায় ৩ লাখ ১০ হাজার টন বেশি।
এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, অদূর ভবিষ্যতে গম আমদানিতে কোনো সমস্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা না থাকলেও আমাদের প্রধান খাদ্য চালের আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে চাল রফতানিকারক দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত মোট চালের মাত্র ৮ শতাংশ (৩ কোটি ৫০ লাখ টন থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ টন) আন্তর্জাতিক বাজারে বেচাকেনা হয়। এদিকে চীনে পলিসি চেঞ্জের কারণে দেশটি বড় চাল আমদানিকারক হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকে পড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালে দেশটি ৫০ লাখ টন চাল আমদানি করে। ২০২০ সাল নাগাদ দেশটির চাল আমদানি আরও বেড়ে যাবে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ তা ১ কোটি ৬০ লাখ টন থেকে ২ কোটি টনে পৌঁছাতে পারে। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস, সিঙ্গাপুর ও ব্র“নাই বর্তমানে বছরে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টন চাল আমদানি করে এং আগামী দিনে তা আরও বেড়ে যাবে। আফ্রিকায় বর্তমানে চালের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে কম এবং ২০৩০ সাল নাগাদ সেখানে চালের চাহিদা ৪২ শতাংশ বেড়ে যাবে (সূত্র : Subash Dasgupta : Structural changes in Asian Rice Trade : Lessons for Bangladesh)। সবচেয়ে চিন্তার কারণ হল, চালের ক্ষুদ্র আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানিকারক হিসেবে চীনের প্রবেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনুষ্যসৃষ্ট (তিস্তা নদীসহ আরও অনেক অভিন্ন নদী থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়া) বা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের উৎপাদন ভীষণভাবে কমে গেলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল আমদানিতে সমস্যায় পড়তে পারে, কারণ চাল রফতানিকারক দেশগুলো চাল রফতানিতে চীন ও অন্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেবে।
সবশেষে বলতে চাই, মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলো যথা- ভারত তিস্তা নদীসহ অভিন্ন আরও অনেক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়া, হাওরাঞ্চলে বন্যা প্রতিরোধমূলক বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণে বাঁধ টেকসই না হওয়ায় অকাল বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়া, কৃষি জমির অকৃষি খাতে চলে যাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া এসবের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষি খাত এখনও দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হওয়ায় কৃষি খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে কৃষক বেশি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হন। প্ রাকৃতিক কারণ, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলো মোকাবেলায় উপশমমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দেশ খাদ্যশস্য, বিশেষ করে প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে অনেকটা পিছিয়ে পড়বে, যা আমাদের গমের সঙ্গে সঙ্গে বহুলাংশে চাল আমদানিনির্ভর করে তুলবে। এসব কারণে চাল আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলে খাদ্যনিরাপত্তা বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। তাই খাদ্যশস্য, বিশেষ করে প্রধান খাদ্যশস্য চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক
latifm43@gmail.com

 

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/window/27268