১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:০৭

পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে

পাঁচ বছরে ৫৩ শতাংশ অগ্রগতি ; কমেছে প্রকল্প সাহায্য, বাড়ছে জিওবির টাকা

নির্ধারিত সাড়ে তিন বছরে শেষ হয়নি পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পটি (১ম ফেজ)। আরও তিন বছর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে দুই দফায়। সময়ের সাথে ব্যয়ও বাড়ছে ২৯৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সাড়ে পাঁচ বছরে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। প্রকল্পে জিওবির টাকা বাড়লেও কমেছে প্রকল্প সহায়তার পরিমাণ। ভ্যাট ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ব্যয় ৪১৮ কোটি টাকা বাড়ছে বলে ঢাকা ওয়াসার সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন কমিটির কাছে সম্প্রতি সংশোধিত প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সে প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ২০১৩ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পাওয়া পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যার মধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ দুই হাজার ৪১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাকিটা জিওবি ও ওয়াসার নিজস্ব অর্থায়ন। জশলদিয়া প্রকল্পের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চায়না সিএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ব্যয় নির্ধারণ করে তিন হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এখন প্রকল্প ব্যয় বেড়ে তিন হাজার ৬৭০ কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা কমিয়ে দুই হাজার ৩৭৬ কোটি ৯৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল প্রথম দফায় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন আবার বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার খাবার পানি ট্রিটমেন্ট ও সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সমস্যার উন্নতি সাধন।
ঢাকা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাজধানীতে খাবার পানির চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীতে বর্তমানে দেড় কোটি মানুষের বসবাস। তাদের দৈনিক পানির চাহিদা ২২০ কোটি লিটার। ওয়াসা সরবরাহ করতে পারছে ২০০ কোটি লিটার। ফলে দৈনিক ঘাটতি ২০ কোটি লিটার। ২০৩৫ সালে এই চাহিদা দাঁড়াবে ৫২৬ কোটি ৮০ লাখ লিটার। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা মূলত ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে, যা শুধু পরিবেশের জন্যই হুমকি নয়, বরং ভবিষ্যতে খাবার পানি সরবরাহের জন্যও হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত ভূগর্ভের ও ভূউপরিস্থ পানির অনুপাত ৭৮ : ২২। ২০৩৫ সালে তা ৩০ অনুপাত ৭০ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়াসা।

ওয়াসার প্রকৌশলী ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে চীন সরকার আর্থিক সহযোগিতা দিলেও ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। দরকষাকষির মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় কমলে সুদের পরিমাণও অনেকটা কমে যেত। কিন্তু কোনো কিছুই আমলে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, তাও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের আগে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে চীনা এক্সিম ব্যাংকের শর্তই ছিল তাদের মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে হবে। তারা যে প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছে, তাদেরকেই কাজ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্য কাউকে কাজ দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কাজেই চুক্তি করার বিষয়টি অনুচিত হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের ব্যয় ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী কাজটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ৪২ মাস বা সাড়ে তিন বছর। ওই সময় শুরু হয় ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে।
পরিকল্পনা কমিশন ব্যয় পর্যালোচনা করে বলছে, পরিপত্র অনুসরণ করে প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাবটি সঠিক ফরম্যাটে করা হয়নি। বাউন্ডারি ওয়াল, সিভিল কনস্ট্রাকশন, নিরাপত্তা ওয়াল খাতে ব্যয় ধরা হয় জিওবি থেকে তিন কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই ব্যয় ২৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ৮৫৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার। তা ছাড়া আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৯ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এখন এ খাতের ব্যয় ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ব্যয় যৌক্তিক হওয়া দরকার।
কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবনায় প্রকল্পের মোট ব্যয় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে কোনটা সঠিক হিসাব তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/301291