১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:০৩

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন

রোহিঙ্গাদের জমিতে সেনাঘাঁটি বানাচ্ছে মিয়ানমার

অবশিষ্ট ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে

সেনা নির্যাতনে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ফেলে আসা গ্রাম ও জমিজমা দখল করে সেখানে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এমন অন্তত তিনটি ঘাঁটি নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এখনও ধ্বংস না হওয়া ঘরবাড়ি নতুন করে জ্বালিয়ে দিচ্ছে তারা।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নতুন এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন করেছে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। খবর বিবিসির।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটির সংকট মোকাবিলা বিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান অন্তত ৩টি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে চলছে নিরাপত্তা স্থাপনা, হেলিপ্যাড ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে সামরিক সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট সোফরেপও একই অভিযোগ করে। সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের বুথিডাং শহরে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ভূমি দখলে নিয়েছে সরকার। সেখানে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে দেশটির পুলিশ বাহিনী।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এমন অবস্থায় নতুন করে সেখানে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার আলামত মিলেছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জমি অধিগ্রহণ করছে মিয়ানমার সরকার। দখলকৃত জমির মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামের পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু পতিত জমিও রয়েছে। দখল করার পর পুলিশ সেখানে পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। এসব স্থানে গবাদিপশু নিয়ে যেতেও গ্রামবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। এ জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের গ্রামের বহু বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব গ্রাম থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা পালিয়ে গেছেন সেসব গ্রামেই ওই রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমি ও ভিটেবাড়ির ওপর ঘাঁটি তৈরি করছে সেনাবাহিনী।

জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টির সবশেষ অনুসন্ধানে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বহু গ্রাম বুলডোজারে জ্বালিয়ে দেয়ার আলামত উঠে এসেছিল। ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় বলে দাবি করে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি জানায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। এইচআরডব্লিউর পক্ষ থেকে অপরাধের আলামতের সুরক্ষায় অবিলম্বে বুলডোজার ব্যবহার বন্ধের তাগিদ দেয়া হয় মিয়ানমারকে। একই মাসে ‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’ নামে সে দেশের স্থানীয় একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা একই ধরনের অভিযোগ তোলে। তবে নতুন করে অ্যামনেস্টির দেয়া বিবৃতি থেকে জানা গেল, বুলডোজারে গ্রাম গুঁড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে সেনাঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণেরও সম্পর্ক রয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/26923