১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৭:৫৫

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট ও বিশ্বব্যবস্থায় ইসলামী অনুশাসনের অপরিহার্যতা

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের সম্পদ ও তার বৃদ্ধি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১২৭১৪ ডলার বা ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে উৎপাদিত সম্পদের মাথাপিছু মূল্য হচ্ছে ৩৪৩৪ ডলার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মাথাপিছু মূল্য ২২৩৪ ডলার। বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাষযোগ্য জমি রয়েছে তার আর্থিক মূল্য মাথাপিছু ১৫০১ ডলার। আর মানব সম্পদের মূল্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৭০ ডলার। সম্প্রতি প্রকাশিত The Changes wealth of Nation 2018 শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক এই তথ্য দিয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৪১টি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ, উৎপাদিত সম্পদ ও বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী মোট সম্পদের বড় অংশ এখন মানবসম্পদ আর দরিদ্র দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি সম্পদের উৎস প্রকৃতি। প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে মানবসম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানোর পারামর্শ দেয়া হয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ সময়ে মধ্য আয়ের দেশগুলোর দ্রুত উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর প্রচুর উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ধনী-দরিদ্রের সম্পদের ব্যবধান অনেক বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর একক নির্ভরতার দিন ফুরিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর অন্তত দু’ডজন দেশের মাথাপিছু সম্পদের মূল্য বেশ কয়েক বছর ধরে স্থবির আছে। বেশ কয়েকটি দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ কমেছে। এসব দেশের মাথাপিছু আয়ও আগামীতে কমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টট জিম ইয়ং কিম উল্লেখ করেছেন মানব সম্পদকে সবচেয়ে বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা না করলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৪ সালে বিশ্বের মোট সম্পাদের আর্থিক মূল্য ছিল ১১৪৩ লাখ কোটি ডলার। ১৯৯৫তে এই সম্পদ ছিল ৬৯০ লাখ কোটি ডলার। সম্পদ বৃদ্ধির হার ৬৬%। সম্পদের পরিমাণের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অসমতা। নি¤œ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু আয় ৫২ গুণ বেশি।

বিশ্বব্যাংকের উপরোক্ত রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২০ বছরে বিশ্বে সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ৬৬% এবং এই সময়ে দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোর মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ৫২ গুণ কমেছে। অর্থাৎ বিশ্বের সম্পদ বৃদ্ধি পেলেও এতে দরিদ্র মানুষের কোনো উপকার হয়নি। যদিও মাথাপিছু আয় তাদের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করে না তথাপিও পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী অনুন্নত দেশগুলোর অবস্থার অবনতি তাদের অধিকতর দুরাবস্থারই পরিচয় বহন করে। রিপোর্টের মৌলিক ভিত্তি ও উপাত্তসমূহ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ থাকলেও এতে কয়েকটি বিষয় নতুন দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে উৎপাদিত সম্পদ কৃষি জমি ও মানবসম্পদ।
আধুনিক অর্থনীতিতে মানবসম্পদের ধারণা দীর্ঘদিনের হলেও একটি Concept হিসাবে নব্বই এর দশকে পাকিস্তানের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবুল হকই প্রথম এর ধারণা পেশ করেন। এর পর বিভিন্ন মহল থেকে এই সম্পদের উন্নয়ন, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার নতুন নতুন কৌশলের প্রস্তাব আসে। মানুষকে দয়া বা বোঝা হিসেবে গণ্য করার যে ধারণা পাশ্চাত্যের ভোগবাদী নাস্তিক দার্শনিক ও অর্থনীতিকরা পেশ করে আসছিলেন তাতে কিছু ছেদ পড়ে। এর আরো কারণ আছে। মানবসম্পদের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য জন্ম নিরোধ ব্যবস্থার প্রসার উন্নত দেশগুলোতে জন্মহারের শূন্য রেটে উপনীত করে। এর ফলে সেসব দেশে বয়ষ্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বয়ষ্ক লোকদের ভরণ-পোষণের জন্য যে সম্পদ তৈরির প্রয়োজন তার অনুকূলে উৎপাদনশীল যুব বয়সের জনসংখ্যা হ্রাস পায়। এতে করে নতুন সঙ্কট দেখা দেয়। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য কোনো কোনো দেশ বিদেশ থেকে লোক আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে স্থানীয়-অস্থানীয় মারামারি ও বিতর্কও দেখা দেয়। আবার কোনো কোনো দেশ একাধিক সন্তানকে উৎসাহ দেয়ার নীতিও গ্রহণ করে। চীনসহ বহু দেশ এখন এর অনুসারী।
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও যে এক মূল্যবান পুঁজি এ ধারণা ইসলামেই পাওয়া যায়। লিও টলস্টয় একজন রুশ নাট্যকার ও দার্শনিক। তিনি শেষ জীবনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে কারুর কারুর ধারণা। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি ইসলামের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন তবে তা গ্রহণের জন্য কলেমা পড়ার সুযোগ পাননি। যাই হোক, একবার এক ব্যক্তি তার কাছে কিছু অর্থ সাহায্য চেয়েছিল। তিনি লোকটিকে তার কাছে বিক্রিযোগ্য কিছু আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উত্তরে লোকটি না সূচক জবাব দেয়ায় তিনি প্রথমে ১০ হাজার ডলারে তার ডান হাত, ৫ হাজার ডলারে বাঁ হাত, ২০ হাজার ডলারে ডান পা ও বাম পা এবং ৫০ হাজার ডলারে ডান চোখ কিনতে চেয়েছিলেন। লোকটি রেগে গিয়ে তাকে পাগল আখ্যায়িত করে তার সাথে দারিদ্র্য নিয়ে তামাশা না করার অনুরোধ করেছিলেন। টলস্টয় ঠাণ্ডা মাথায় তাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, মানুষের দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গই মূল্যবান। আল্লাহ তায়ালা এই মূল্যবান সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উপার্জনের জন্যই তাদের তা দিয়েছেন। কাজে লাগানো এবং উৎপাদনই হচ্ছে পুঁজির সার্থকতা। লোকটি সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। সারা বিশ্বে কিডনিসহ মানুষের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের একটা বাজার আছে। সে বাজারে এগুলোর চাহিদা ও মূল্যের কথা বিবেচনা করলে এই পুঁজির আর্থিক মূল্য সম্পর্কে আমরা একটা ধারণা পেরেত পারি।

বিশ্বব্যবস্থায় পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষের কল্যাণ করতে পারেনি। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অর্থনীতির রোগসমূহ দূরীকরণের জন্য কম্যুনিজম ও সমাজতন্ত্রের জন্ম হয়েছিল। এই ব্যবস্থাটি শুরুতেই আল্লাহকে অস্বীকার করে বসে এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাকে জীবনের প্রধান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে। তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য গঠনশৈলী ও কর্মপদ্ধতি সবকিছুই মানুষের সিফাতের বিরোধী হওয়ায় কম্যুনিজম ও সমাজতন্ত্রের পতন হয়। পুঁজিবাদ মানবিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ইসলামী ব্যবস্থা প্রবর্তনের যৌক্তিকতা দেখা দেয়। বিশ্বব্যবস্থার কা-ারীরা ইসলামের অর্থনীতিকে অধ্যয়ন করতে পারেন।
ইসলাম হচ্ছে জীবনের সর্বস্তরের জন্য দিকনির্দেশনাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম জীবনকে একক দৃষ্টিতে দেখে, কোনও অঙ্গকে আলাদাভাবে নয়। যেমন অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম সংস্কৃতি সব কিছুই জীবনের অপরিহার্য অংশ।

অর্থনৈতিক সমস্যার ব্যাপারে ইসলামের একটি অনবদ্য ধারণা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী অর্থনীতিবিদদের ধারণা অনুযায়ী স্বাভাবিক কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতার কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। কেন না মানুষের অভাব সীমাহীন, কিন্তু সম্পদ সীমিত। এ থেকেই সংকট দেখা দেয় এবং সেক্যুলার অর্থনীতিবিদরা এই সংকট মেটানোর জন্য যে মডেল গ্রহণ করেছে তা সম্পদ সরবরাহের দিকটি সহজ করার উপর গুরুত্ব দেয়। অসীম অভাব পূরণের এটিই হচ্ছে তাদের অনুসৃত পন্থা। অন্যদিকে ইসলাম মনে করে মানুষের অভাব পূরণের জন্য আল্লাহ তায়ালা পর্যাপ্ত পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একদিকে চেষ্টার অভাব ও অন্যদিকে মানুষের লাগামহীন অভাবের কারণে অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধান এ প্রেক্ষিতে দু’টি কাজের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত চাহিদার দিক বিবেচনা করা দরকার। ইসলাম সকল চাহিদাকে চাহিদা বলে মনে করে না। অর্থাৎ এমন অনেক চাহিদা আছে যা পূরণ করার প্রয়োজন নেই। মানবিক চাহিদার দিকেই ইসলামের দৃষ্টি নিবন্ধিত। এ কথা সকলেই জানেন যে, এমন অনেক ‘চাহিদা’ আছে যার পেছনে অঢেল সম্পদ ব্যয় করা হয় যেমন মদ, জুয়া, অনৈতিক কাজকর্ম, অতিভোজন, ড্রাগ গ্রহণ, মানব বিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদন ও মওজুদদারী প্রভৃতি সরবরাহের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিকোণ সুস্পষ্ট, আল্লাহতায়ালা মানুষকে প্রচুর সম্পদ দিয়েছে যা ব্যবহার করে তারা নিজেদের অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। ইসলাম মানুষকে কঠোর পরিশ্রমে অনুপ্রাণিত করে। ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক। এভাবে ইসলাম সরবরাহ ব্যবস্থাকে সহজ করে একদিকে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করে তথা চাহিদার যোগান দেয়। অন্যদিকে মানুষের লাগামহীন চাহিদার ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে যাতে সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার হতে না পারে। সামর্থ্য অনুযায়ী সম্পদ আহরণেই শুধু ইসলাম মানুষকে অনুপ্রাণিত করে না বরং অভাব পূরণে যাতে এই সম্পদ ন্যায়পরায়ণতা ও ভ্রাতৃত্বের নীতির ভিত্তিতে ব্যবহৃত হয় তার জন্যও মানুষকে একটি কাঠামো নির্ণয় করে দিয়েছে। মানবজাতির কল্যাণ সাধনই হচ্ছে ইসলামী অনুশাসনের মূল লক্ষ্য। এই কল্যাণ শুধু ব্যক্তির নয়, সমগ্র মানব সম্প্রদায়ের।

আগেই বলা হয়েছে যে, ইসলাম নিছক কোনও ধর্ম নয় বরং একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। প্রথাগত আচার অনুষ্ঠান ও তার বাইরের সব কিছুর জন্যই এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকনির্দেশনা রয়েছে। কুরআনের ভাষায় ধর্মের আসল প্রতিশব্দ হচ্ছে দ্বীন। এর অর্থ পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর আচার বহির্ভূত অংশে মানুষ পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, বিচারবিভাগীয় ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মানুষকে কিছু মৌলিক ব্যঞ্জনা প্রদান করা হয়েছে। এটি আল্লাহ প্রদত্ত সীমারেখার কাঠামোর (হুদুদ-আল্লাহ) মধ্যে পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক কর্মকা- এই সীমারেখা বা অনুমোদিত এলাকার বাইরে মানুষ যেতে পারে না। এই গ-ি বা সীমারেখার ভেতরে মানুষ তার মানসিক ও শারীরিক শক্তিকে নিজের এবং সমাজের কল্যাণে নিয়োগ করতে পারেন। মৌলিক মূল্যবোধ ছাড়াও অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার জন্য ইসলাম কিছু সাধারণ নির্দেশনা দিয়েছে যা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক মানবিক স্বাধীনতা নিয়ে মানুষকে কাজ করতে সহায়তা করে। মানবিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে এমন কিছু কাজ আছে যা মানুষ করতে পারে, আবার এমন কিছু কাজ আছে যা করার অনুমোদন নেই। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা মানুষ ভোগ করতে পারে না। তাকে বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে ইসলামী অর্থনৈতিক সংজ্ঞা হচ্ছে : ইসলামী মূল্যবোধ ব্যবস্থার অধীনে সুপ্রণোদিত ও অবাধ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের জন্য প্রণীত যে কাঠামোগত ব্যবস্থা তাকেই ইসলামী অর্থনীতি বলে। হালাল হারাম উভয়ের প্রতি খেয়াল রেখে মানুষের জৈবিক ও আত্মিক উভয় চাহিদা পূরণই হচ্ছে এর লক্ষ্য। মানুষ সমাজ বিচ্ছিন্ন জীব নয়। ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি সামষ্টিক জীবনের প্রতিও তাকে খেয়াল রাখতে হয়। সত্যকে তুলে ধরা, লেনদেনে সততা বজায় রাখা, অন্যদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ত্যাগের মনোবৃত্তি নিয়ে ইসলাম কঠোর পরিশ্রম করতে শেখায়। ইসলাম কল্যাণ অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে। তবে অপরাপর নাগরিকদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তি সম্পদের পাহাড় গড়ুক এই নীতিতে ইসলাম বিশ্বাস করে না। পারস্পরিক স্বার্থকে সমুন্নত রেখে বিশ্বজনিন ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠুক এবং মানব জাতি লাভবান হোক এটাই তার কাম্য। এ প্রেক্ষিতে সকল আর্থিক লেনদেন দু’টি নীতি অবশ্য অবশ্যই মেনে চলার জন্য ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে আল আদল ও আল ইহসান। আদল হচ্ছে সকল আচার-আচরণ ও লেনদেনে সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে ইনসাফ বজায় রাখা। এই নীতি অবলম্বনের ফলে ইনসাফ ভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি সমাজ কায়েম হয়। আবার ইহসান হচ্ছে এমন একটি নীতি যার ফলে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা ভিত্তিক একটি সমাজ কায়েম হতে পারে। এটি অনুসরণ করতে গিয়ে ব্যক্তিকে তার ন্যূনতম দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং দয়া, দাক্ষিণ্য ও ত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সমাজে ভারসাম্য সৃষ্টি তথা বৈষম্য দূরীকরণের জন্য ইসলাম জাকাতকে ফরজ করেছে এবং ব্যবসায়িক ও আর্থিক লেনদেনে শরিয়া আইন প্রয়োগকে বাধ্যতামূলক করেছে।
একজন মুসলমানের জন্য সাধ্যমত পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ, অভাবগ্রস্ত মাতা -পিতা ও আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও পুত্র কন্যার ভরণপোষণ অপরিহার্য্য। স্ত্রী যদি সম্পদশালীও হন তথাপিও তার খোরপোশ তাকে বহন করতে হবে। তাকে উৎপাদনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং তৈরী করতে হবে নিজের চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য ও সেবাসামগ্রী যাতে করে সমাজের অন্যান্যরাও উপকৃত হতে পারে। এর পাশাপাশি ইসলাম সুদ, সুদ গ্রহণ ও প্রদান এবং সুদের ব্যবসাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। রিবা বা সুদের লেনদেন এমনকি তার লেখক ও সাক্ষী হওয়াকে বিরাট গুনাহ বা পাপ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়াও ইসলাম দান-সদকা, ওয়াকফ প্রভৃতিকে উৎসাহিত করেছে। তাদের প্রতিটি আনন্দ অনুষ্ঠান সামাজিক দায়িত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। রমজানের ঈদে ফেৎরা, কুরবানীর ঈদে গরীবদের জন্য গোশতের একটা অংশ এবং পশুর চামড়ার অর্থ দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তি বা এতিমখানা বা মাদরাসাকে দান করার নির্দেশনা সামাজিক দায়িত্ব পালনেরই অংশ। সংক্ষেপে এটাই হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতির রূপরেখা। এই রূপরেখা বাস্তবায়ন করা হলে সম্পদ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা মানবজাতির জন্য আশির্বাদ হয়ে দেখা দিবে। বিশ্ব ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।

 

http://www.dailysangram.com/post/322417