৯ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৩৪

নয় অসম প্রতিযোগিতা চাই নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা

-এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নী

 
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক বড় অর্জন। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার মুক্তিকামী নারী শ্রমিকরা অসামাজিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরি ও অধিক শ্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। ফলে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলারা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে। এরপর ১৯০৮ সালে ওই একই দিনে নিউইয়র্ক শহরে বস্ত্র কারখানার মহিলারা তাদের দাবি নিয়ে মিছিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালের ৮ মার্চ জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটাদিনের সার্বিক নেতৃত্বে ডেনমার্কের কোপেন হেগেনে আমেরিকা ও ইউরোপের সংগ্রামী নারীরা একত্রিত হন এবং ওই সম্মেলনেই নারী সমাজের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। তাই ৮ মার্চ নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিবস। ১৮৫৭ সালের এদিনেই নির্বাক হয়ে থাকা নারীর মুখে অধিকার অর্জনের দাবি উচ্চারিত হয়েছিল। প্রতিবাদ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সহজাত স্নেহ মমতায় সিক্ত নারী। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আজও নারীরা নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত। নারী আজও পায়নি তার কাক্সিক্ষত মর্যাদা, নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন নিত্যনতুন মাত্রা নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। তাই সময় এসেছে আরো অনেক বেশি সচেতনতার, নারীর প্রকৃত মর্যাদা উপলব্ধি করার।
 
আমরা লড়ছি, অনবরত লড়েই যাচ্ছি : সেই সুদূর অতীত থেকে আমরা লড়ছি। অধিকার আদায়ের রাস্তা তবু দুস্তর পারাবার। উপমহাদেশে বেগম রোকেয়ার হাত ধরে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যোদ্ধা নারী এখন এই মিছিলে। কিন্তু প্রাপ্তির খাতা এখনো শূন্য। সব ধরনের অন্যায়, বঞ্চনা, জুলুম, সহিংসতা থেকে নারীর মুক্তিই ছিল কাম্য। দীর্ঘ পথ অতিক্রমে ক্লান্ত নারী প্রকৃত মুক্তির পথ থেকে এখনও যোজন যোজন দূরে। পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, মিডিয়ায় চলার পথে নারী বঞ্চনা আর অশালীন আচরণের শিকার। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তারা আদর্শিক, জাতিগত সহিংসতা থেকেও মুক্ত নয়। অথচ পরিবার থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীর জন্য ভালোবাসা, মর্যাদা, সহানুভূতি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
 
এমন একটা পৃথিবী আমাদের সবাই কাম্য যেখানে নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা, ভারসাম্যপূর্ণ দায়িত্ব, অধিকার সচেতনতা নিয়ে প্রতিটি গৃহকোন শান্তিময় ও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে। কোনো স্লোগান সর্বস্ব বুলি নয়, সাময়িক কোনো সমাধান নয়, চাই শাশ্বত বিধানের স্থায়ী সমাধান। প্রতি বছর ৮ মার্চ মহাসমারোহে ও যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় শুধু বছরের তৃতীয় মাসের ৮ তারিখকে কেন্দ্র করে। বিশ্বজুড়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সাক্ষাৎকার, টকশো, স্পেশাল এডিটোরিয়াল, পত্রিকায় বিশেষ আর্টিকেল লেখা ও প্রকাশের মধ্যে দিবসটি আজ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ১ বছরের মাঝে ২৪ ঘণ্টার এ দিনটি ছাড়া বছরে বাকি ৮৭৬২ ঘণ্টার সময়ের মাঝে নারী উন্নয়ন ও মর্যাদার কতটুকু চিত্র আমাদের নিয়মিত কাজে প্রতিফলিত করতে পারছি, তা সবাইকে আজ ভেবে দেখতে হবে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই আজ নারী অধিকারের ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ। অথচ বাস্তবতা এই যে, প্রায় সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারী-পুরুষের মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্পত্তির যথাযথ ডিসট্রিবিউশান, এসব ব্যাপারে বিশেষ কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। এছাড়া পরিবারে ও কর্মজীবনে প্রতি মুহূর্তে Public place I Private life G Discrimination I Violance এর স্বীকার হচ্ছে। অফিসিয়ালি ১০৬ বছর হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে। কিন্তু এর অর্জন কতটুকু তা মূল্যায়নের সময় এসেছে আজ।
 
বাংলাদেশের নারী সমাজ : বিশ্বব্যাপী নারীদের ওপর নির্যাতন, উৎপীড়ন এক আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীরা আজ নানাভাবে নির্যাতিত, নিগৃহীত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শহর-নগর-বন্দর কোথাও নারীরা আজ নিরাপদ নয়। সর্বত্রই নারীর ওপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, অতি সম্প্রতিকালে নারীদের ওপর সহিংসতার বেদনাদায়ক ঘটনা একের পর এক সংঘটিত হয়ে যাচ্ছে। ভাবতেও অবাক লাগে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জাতীয় ঘটনা এবং দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নারীরা এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এবং এখনও রেখে চলেছে অথচ সে নারীদের নিরাপত্তা আজ হুমকির সম্মুখীন।
 
বাংলাদেশের সংবিধানে সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং দেশের বিদ্যমান আইন, নীতি ও কৌশলেও নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হয়েছে, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ সূচকে ১৪৫টি দেশের মাঝে অবস্থান ৬৪তম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সূচকে অবস্থান অষ্টম। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন নারী। জাতীয় সংসদের মোট আসনের ২০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করছেন নারী। বাংলাদেশ নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদে সই ও অনুসমর্থন করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেট নারীবান্ধব করা হয়েছে। নারী-পুরুষের সমতার বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর উইমেন্স এন্ড চিলড্রেনস ডেভেলপমেন্টের’ চেয়ারম্যান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী; এতসব অর্জনের পরও এখনো সমাজে বাল্যবিবাহ যৌতুক, নারী নির্যাতনের মতো ক্ষতিকর ও বৈষম্যমূলক আচরণ চলমান রয়েছে। এখনও মাত্র ৩৬ শতাংশ নারী কর্মশক্তিতে নিয়োজিত। প্রায় ৭০ শতাংশ নারী বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন।
 
এক গবেষণায় দেখা গেছে- দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারীদের জয়জয়কার সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ নারী প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তারা যৌন, শারীরিক, অর্থনৈতিক, মানসিক নির্যাতন ভোগ করেছে। প্রশ্ন থেকে যায় যে, প্রায় ২৫ বছর ধরে দু’জন ক্ষমতাধর নারী দেশ পরিচালনা করা সত্ত্বেও নারী বৈষম্য ও সহিংসতার মাত্রা হ্রাস পাওয়া দূরের কথা দিনকে দিন তা বেড়েই চলছে। সত্যি কথা হলো, সভ্যতা এগিয়েছে, কিন্তু নারীর অবস্থানের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটেনি। যুগের পরিবর্তন হয়েছে ঠিক কিন্তু আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের মন মানসিকতা ও আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ দূরের কথা ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধের ধার ধারছে না। নারী স্বাধীনতার রঙিন মোড়কে অনেক মন ভুলানো ও মুখরোচক কথা বলা হলেও বাস্তবে তা রঙিন ফানুস ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।
 
নারী সহিংসতার বিভিন্ন রূপ ও খন্ডচিত্র
বিভিন্ন গবেষণায় নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার রূপ ফুটে উঠেছে। ঘরে বাইরে প্রতিনিয়ত এর শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত। যেমন- যৌন নির্যাতন, শিশু ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, পারিবারিক নির্যাতন; যৌতুক, গৃহকর্ত্রী নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচণা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য ইত্যাদি নারী সহিংসতার বিভিন্ন রূপ।
 
সাম্প্রতিককালে নারী নির্যাতনের যে ভয়াবহ মাত্রা ও পৈশাচিক কায়দা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিগত কিছুদিনে বাংলাদেশে তুলনামূলক নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, এখন আর মানুষ এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয় না। যেন সবটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে। নারীরা এখন ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ থাকতে পারছে না। কোটিপতির কন্যা থেকে দরিদ্র কুঠিরের কন্যাটিও নিরাপদ নয়। ৫ বছরের কন্যা থেকে ৫ সন্তানের জননীও নিরাপদ নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে চলন্ত বাস, রাস্তার পথচারী, ডাক্তার রোগীকে, বস অধস্তন কর্মচারীকে, শিক্ষক-ছাত্রীকে, গৃহকর্তা কাজের বুয়াকে এমনকি ঘরে যাকে নিরাপদ মনে করা হয় এমন কাছের কোনো আত্মীয়ের কাছেও আজ নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রক্ষক এখন ভক্ষকের কাজ করছে।
 
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিসংখ্যানে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নারী নির্যাতনে জড়িত ৮৬ শতাংশ ব্যক্তির বয়স ৩৫ বছর বা এর কম। আর অভিযুক্ত পুরুষদের ৩৭ শতাংশের বয়স ১৮-২৪ বছর বয়সের। বাংলা নিউজ ২৪ ডটকম এর ভাষ্যমতে, গত ২০১৫ ও ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ মাসে ৯৬৩৬ জন নারী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ২২ মাসের সমানুপাতিক হরে ২০১৭-এর বছর শেষে নারী সহিংসতার ঘটনা দাঁড়াতে পারে ১০৪৫৯ এ। মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত নারীর প্রতি সহিংসতা সংক্রান্ত জরিপ ২০১৫ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে নিজের স্বামীর শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওই জরিপের তথ্যানুযায়ী মাত্র ২৩ শতাংশ নারী তার নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন এবং মাত্র ৩ শতাংশ নারী আইনি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করেন। এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পত্রপত্রিকায় যেসব ঘটনা আসছে তার থেকেও বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। গণজমায়েত কিংবা নির্জন স্থান বা কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রে একই চিত্র।
 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপেও দেখ গেছে, দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। সম্প্রতি করা ওই জরিপে বলা হয়েছে, নারী নির্যাতনের ঘটনা ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। ব্র্যাকের তথ্য মতে, নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না। নথিভুক্ত হলে সংখ্যাটি আরো বাড়ত। মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী বছরে প্রথম ৩ মাসে ৭৭৬ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৫১৪টি গণধর্ষণের শিকার ৯৭ জন। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে প্রায় ৬টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২১ জনকে। ২০১৭ সালের প্রথম ৪ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৭ জন নারী ও শিশু। বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে ৮১ শিশু আর ধর্ষিত হন ৫৭ নারী। গণধর্ষণের শিকার হন ২৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৫ নারীকে।
 
পারিবারিক কলহে আপনজনের হাতে খুন হন ২৪ নারী। যৌতুকের কারণে খুন হয় ২৬ জন। নির্যাতিত হয় ২৪ জন। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন ১৫ জন। এছাড়া আত্মহত্যা করেন ১০৫ নারী। শুধু রাজধানীতেই ৫ দিনে ধর্ষণের শিকার হন ১৫ নারী ও শিশু। আর খুন হন ৪ জন। এগুলো ছাড়াও হিসাবের বাইরে ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
 
নারী নির্যাতনের কারণ : সত্যিকার অর্থে আজ বিশ্বব্যাপী মানবিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের সহিংসতা খুব স্বাভাবিক কারণ নৈতিকতার যে ধস নেমেছে, তা থেকে আমাদের ছোট্ট মুসলিম রাষ্ট্রটিও বের হয়ে আসতে পারেনি। নারীরা অহরহ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। আইনের আশ্রয় নিতে গিয়েও তারা সঠিক বিচার পাচ্ছে না। কোনো নারী উন্নয়ন নীতি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নারী মুক্তি, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার, সরকারি-বেসরকারি নারী সংগঠন, দেশের নারী নিরাপত্তা; এমনকি নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় কোনো কিছুই কাজে আসছে না, সব ফলাফল শূন্য। নারীর ক্ষমতায়নের ফলে দেশের নারীরা মনে আশ্বাস পোষণ করতেন যে তাদের অধিকার আদায়ের পথ, আইনের সর্বোচ্চ সহায়তার পথ ও নিরাপত্তার সর্বোচ্চ সহায়তার পথ উন্মুক্ত হলো, কিন্তু সব আশা মিছেই থেকে গেল।
 
নারী নেত্রীরা বলছেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারী নির্যাতন কমছে না। মহিলা আইনজীবী সমিতির নেতা সালমা আলী বলেন, নারী নির্যাতন কমছে না বরং বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশে পারিবারিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সে আইনের কোনো বাস্তবায়ন নেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যবোধের অবক্ষয়, রক্ষণশীলতার ঘাটতি, পর্নোগ্রাফি এবং কিছু পুরুষের মানসিক বিকৃতির কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়েছে। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুসরণের অভাবেই নারী সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বলেন, নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্যারান্টি ইসলাম, নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূর্ণ অবস্থানেই সুখী-সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।
 
তাই বলা যায়, নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়। সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে নৈতিক শিক্ষার বিলোপ সাধন, ধর্মীয় শিক্ষা ও পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা ও অধিক বস্তুবাদী চিন্তা-চেতনা ও ভোগবাদী মানসিকতা। এছাড়া নারী নির্যাতনের কারণগুলো খণ্ডিতভাবে দেখা। অধিকাংশ ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার না হওয়া। সমাজের অধিকাংশ নারীই নিজের নারীত্বের সঠিক মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে অসচেতন। নারী অধিকারবিষয়ক প্রচলিত আইন-কানুন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, জটিল প্রক্রিয়া ও ব্যয়বহুলতার কারণে প্রায়ই নারীরা বিচার প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হন।
 
নারীরাই যেন নারী নির্যাতনের কারণ হয়ে না দাঁড়াই : প্রায় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ হয়ে যাই আমরা নিজেরাই। দেখা যাচ্ছে, গৃহকর্ত্রী কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছে গৃহকর্মী। যৌতুক না দেয়ার কারণে শাশুড়ি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ছেলের বউটি। অন্যদিকে এমন অনেক ছেলের বউ আছে, যারা শাশুড়িকে অবমূল্যায়ন ও অযত্নের মাধ্যমে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মহিলা কর্মকর্তার কাছে অধস্তন মহিলা শ্রমিক ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
 
অনেক মহিলা পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী কর্তৃক আন্দোলনরত মহিলারা হেস্তনেস্ত হচ্ছে। একপক্ষের ছাত্রী বা নারীরা প্রতিপক্ষের নারীদের ওপর চড়াও হচ্ছে। এভাবে নারী ক্ষতায়নের স্লোগান দিয়ে জাতিকে প্রতারিত করছি প্রতিনিয়ত। ক্ষমতায় গিয়ে সে নারীই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছি। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতা বগুড়ার ভর্তিচ্ছু কলেজছাত্রীকে ও তার মাকে বাসায় উঠিয়ে এনে ধর্ষণ এবং বিচার দাবি করায় অপরাধীর বোন সেখানকার নারী নেত্রী ও পৌর কাউন্সিলরের সহায়তার তাদের অমানবিক নির্যাতন করে। এমন শত শত উদাহরণ রয়েছে।
 
নারী দিবসের করণীয় : নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে- নারী-পুরুষের মাঝে অসম প্রতিযোগিতা নয়; বরং অভিভাবকত্ব, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক সৃষ্টি করে পরস্পর পরিপূরক হিসেবে কাজ করা। সর্বাগ্রে আগামী প্রজন্মকে ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে এবং যথাযথ জ্ঞানার্জন ও অনুশীলনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। ‘নিজে আচরি ধর্ম অপরে শেখাও’ এই স্লোগানে সবাইকে নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি নিষেধ পালনে অভ্যস্ত করে তোলা। সব ধরনের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে দূরে থাকা। নারীকে বোঝা মনে না করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। যুব ও নারী সমাজকে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। সমাজে সুস্থ ও রুচিশীল সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সহিংসতা দূরীকরণে ব্যাপক মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। নিজ পরিবার, স্বামী-সন্তানকে নারী মর্যাদা ও অধিকার প্রদান সম্পর্কে সচেতন করা। সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য নিরাপত্তামূলক পরিবেশের ব্যবস্থা করা। নারীদের জন্য পৃথক যানবাহন ও পৃথক কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করা। পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে ইসলাম নির্ধারিত পর্দার সীমা রক্ষা করা।
 
প্রচলিত আইন, যেগুলো মহিলাদের জন্য নিপীড়নমূলক সেগুলোর সংশোধন এবং নিপীড়িত মহিলাদের বিশেষ সহায়তা দিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা। নারী নির্যাতনকারীর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া। সর্বপ্রকার নরী সহিংসতা সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। কারণ কথায় আছে- Justice delayed Justice denied. নারী উন্নয়ন নীতিমালা, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর নিরাপত্তা এই বিষয়গুলোর মাঝে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে হবে। পর্নোগ্রাফি ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা। বিটিআরসি’কে পর্নো সাইট বন্ধ এবং এক্ষেত্রে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করা। নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, শিক্ষক, কর্পোরেট সেক্টর, এনজিও, মসজিদের ইমাম এবং অন্যদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি মনিটরিং এবং পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। সর্বোপরি পরিবার থেকে শুরু করে কমিউনিটি জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারি কার্যক্রম জোরদার করা।
 
উন্নয়নের সমান অংশীদার যে নারীরা তাদের পেছনে ফেলে শুধু নীতিমালা প্রণয়ন আর ক্ষমতায়নের স্লোগান দিয়ে নারী উন্নয়ন ও নিরাপত্তা সম্ভব নয়। শুধু আইন প্রয়োগ করেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সবার মাঝে মানবীয় মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী উন্নয়ন নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। সমবায় মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সচেতন ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি নারীরা নিজেকে সবার জন্য উন্মুক্ত না করে ধর্মীয় নৈতিকতার মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার আদায় ও দায়িত্ব পালন করতে হবে।
 
নারী স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ : ‘তোমরা এমন বিষয়ে আকাক্সক্ষা করো না যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষরা যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ; আর নারীরা যা অর্জন করে, সেটা তাদের অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা আন নিসা : ৩২)। সমাজে নারী ও পুরুষের অবস্থান, দায়িত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপরই গড়ে ওঠে সভ্যতার ভিত্তি। কোনো সমাজ নারীকে যখনই তার সঠিক অবস্থান থেকে সরিয়ে এনেছে, তখনই সে সমাজের বিপর্যয় ঘটেছে। ইসলাম সমাজে নারী ও পুরুষের সে অবস্থান নির্দেশ করেছে।
 
নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক : ইসলাম নারীকে ঘরের প্রাচীরে আবদ্ধ করে রাখতে চায় না। আবার দায়িত্বহীনের মতো নারীকে বাইরের কর্মক্ষেত্রেও পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চায় না। সামঞ্জস্যপূর্ণ মধ্যম পন্থায় বিশ্বাস করে। নারী-পুরুষের দৈহিক ও মানসিক গঠন বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে ইসলাম। নারীকে ঘরের বাইরে কিছু কাজ প্রদান করে এবং পুরুষকে ঘরের ভেতরেরও কিছু দায়িত্বও অর্পণ করে। সমাজকে আদর্শবাদের দিকে পরিচালিত করার জন্য ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে আদেশ প্রদান করে। নারীকে সমাজের দায়িত্ব সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে যথাযোগ্য ভূমিকা পালনকারী রূপে দেখতে চায় ইসলাম। ইসলাম যখন বলে, ‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমাদের তৈরি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ প্রদান করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।’ তখন নারীদেরও উত্তম জাতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করে।
 
মহান আল্লাহ মানুষকে পুরুষ ও স্ত্রী দুটো লিঙ্গে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। এদের দেহ গঠনের যৌথ ফর্মুলা একই রকম। তবু তারা পরস্পর হতে ভিন্ন ধরনের দৈহিক গঠন, মানসিকতা, আবেগ ও ভাবধারা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে বিস্ময়কর সাদৃশ্য ও সামঞ্জস্য রয়েছে। তারা সবাই পরস্পরের জন্য পরিপূরক জুড়ি। সব পশু প্রজাতির মোকাবিলায় মানবজাতির মধ্যে সভ্যতা ও তমদ্দুন সৃষ্টির এটাই মূল কারণ, আল্লাহ এ নর-নারীকে পরস্পরের প্রতি এমন কামনা-বাসনা ও ব্যগ্রতা-ব্যাকুলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, একজন আরেকজনের সাথে মিলিত ও সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউই প্রশান্তি লাভ করতে পারে না। এ প্রশান্তি প্রাপ্তি ও ভোগের আকাক্সক্ষাও ভূমিকা উভয়েরই সমান। সুতরাং সভ্য জীবনযাপনে নারীর জন্য যেমন নরের প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবে নরের জন্য প্রয়োজন নারীর।
 
মহান আল্লাহ নারী এবং পুরুষ উভয়কেই তাঁর খলিফা হিসেবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। তাঁর মনোনীত বিধানকে জীবনের সর্বত্র কায়েম করার দায়িত্ব পুরুষের যে রূপ রয়েছে নারীরও ঠিক তদ্রুপ রয়েছে। আল কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় নারী-পুরুষের দায়িত্ব ঘোষণা করে। যেমন- ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পরস্পর বন্ধু, তারা সৎকাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করে।’ ইসলাম নারী-পুরুষের সম্পর্ক মাটির গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত শক্তিশালী বৃক্ষের সাথে তুলনা করেছে। অর্থাৎ নারী ও পুরুষ যেন একটি বৃক্ষমূল থেকে উদ্ভূত দু’টি শাখা বিশেষ। আর এ সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের ওপর। তাই নারী ও পুরুষ কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়, নয় এ দুইয়ের সম্পর্ক কোনো ধরনের প্রতিযোগিতার বা বৈরিতার। পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘নারীরা তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং তোমরাও নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদ।’ এখানেও প্রেম-ভালোবাসা ও পবিত্রতা রক্ষায় নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দান করা হয়েছে।
 
আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে নর-নারীর কোনো পার্থক্য নেই, ‘অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া এই বলে কবুল করে নিলেন, আমি তোমাদের মধ্যে হতে কোনো আমলকারীর আমল বৃথা যেতে দেই না; চাই আমলকারী নর হোক বা নারী। তোমরা তো পরস্পরের সম্পূরক।’ (সূরা আল ইমরান : ১৯৫)। সৎকাজ যেই করুক না কেন, সেই তার পুরোপুরি প্রতিদান ও সাওয়াব পাবে। প্রতিদান প্রাপ্তিতে উভয়ের জন্য একই নিয়ম। কাজেই আমলের ফলাফলের দিক থেকেও কোনো তারতম্য নেই বা থাকবে না। নারীর শাশ্বত অধিকার নির্ধারণে ইসলাম ৩টি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে থাকে- ১. পুরুষকে নিছক পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে কর্তৃত্ব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এর সুযোগ গ্রহণ করে সে নারীর ওপর যাতে অন্যায় আচরণ করতে না পারে। ২. নারীকে এমন সব সুযোগ দান করতে হবে, যার ফলে নারীর স্বীয় স্বাভাবিক প্রতিভার পরিস্ফুটন ঘটতে পারে এবং সভ্যতা গঠনে সর্বোৎকৃষ্ট অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। ৩. নারীকে তার স্বীয় অবস্থানে রেখেই যেন উন্নতি ও সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করানো সম্ভব হয়- তার ব্যবস্থা করা।
 
নারী কল্যাণে অর্থাৎ নারীর প্রকৃত অধিকার সংরক্ষণে ইসলাম যে বিধান দিয়েছে, তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোনো প্রাচীন কিংবা আধুনিক সমাজব্যবস্থায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। ইসলাম নারীকে একজন পুরুষের চেয়ে তিন গুণ সদ্ব্যবহার পাবার অধিকার দিয়েছে। ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে মাতা-পিতা উভয়কে শ্রদ্ধা করতে, ভক্তি করতে এবং দুইজনের নির্দেশই পালন করতে। একই সাথে বলা হয়েছে, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। পিতার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত এ কথা বলা হয়নি। তাই আর নয় নারী পুরুষ অসম প্রতিযোগিতা। সময় এসেছে পরস্পর পরিপূরক হয়ে কাজ করার। প্রয়োজন আজ অভিভাবকত্ব, বন্ধুত্ব আর পরস্পর সহযোগিতার।
তুমি নারী-
ঊষর মরুর বুকে
ছিলে কত অসহায়!
পেলে মুক্তি
পেলে সম্মান
তোমার তুলনা তুমিই॥
বাগানের সুরভি বাতাস
তুমি জাতির অহঙ্কার
তোমার জন্যই
ঘোষিত হয়েছিল
শ্রেষ্ঠত্বের বাণী
‘মায়ের পদতলেই রয়েছে জান্নাত’॥
 
উৎস: সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ০৯ মার্চ ২০১৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা: ৯