জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অবস্থান কর্মসূচি
১১ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:২৫

পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি

‘সময়মতো বেতন দাও, না হয় মুখে বিষ দাও’

‘সময়মতো বেতন দাও, না হয় মুখে বিষ দাও’, ‘বিলাসিতা চাই না, ডাল-ভাতের নিশ্চয়তা চাই’, ‘এক দফা এক দাবি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন চাই’Ñ এমন অসংখ্য দাবি জানিয়ে গতকাল ফেস্টুন প্রদর্শন ও স্লোগান দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়া পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতনভাতার দাবিতে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দেশের ৩২৭টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচিতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বহনপুর পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী মো: জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ছয় মাস বকেয়া। তবে টানা ছয় মাস বেতন দেয় না এমন নয়, এক মাস দিলে পরের মাসে দেয় না, এভাবে এখন পর্যন্ত একপর্যায়ে ছয় মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। তিনি বলেন, নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় দোকান থেকে বাকি কিনে খেতে হয়। আবার অনেক দিন বাকি রাখায় দোকানদারেরাও একসময় বাকি দিতে চান না। ব্যাংক থেকে লোন দেয় না। ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারি না। চাকরি শেষ হলে পেনশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রাচ্যুইটি নেই।

ভোলা চরফ্যাসন পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন বলেন, আমাদের পৌরসভার মোট এলাকা ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮ কিলোমিটার এলাকা শহর আর বাকিটা গ্রামের পরিবেশ। তবু কর আদায় হয় ৭০-৭৫ শতাংশ। তার পরও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় না। তিনি বলেন, আমাদের ঈদের দিনও জনগণের সেবা দিতে হয়, কিন্তু নিজেরা না খেয়ে থাকতে হয়।
শুধু এ দুই পৌরসভায় নয়, ভোলার লালমোহন পৌরসভায় ২৭ মাস, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৩০ মাস, মিরপুরে ২২ মাস, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ৩০ মাস, রামগড়ে ২৩ মাস, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ২৬ মাস, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ৪৮ মাস ও সান্তাহারে ৫৮ মাস পর্যন্ত বেতনভাতা বকেয়া রয়েছে। এভাবে দেশের ৩২৭ পৌরসভার মধ্যে ২২৬ পৌরসভায় প্রায় ৫২০ কোটি টাকা বেতনভাতা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের পাওনা রয়েছে আরও ১২৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলিম মোল্লা গতকালের কর্মসূচিতে বলেন, বেতনভাতা বকেয়া থাকায় এসব পৌরসভার ৩২ হাজার ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কষ্টে দিনযাপন করছেন। এ জন্য দীর্ঘ দিন থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। মানববন্ধন, স্মারকলিপি, বিভাগীয় সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে বেতনভাতা দিলে দেশের ৩২৭ পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ বছরে ৯৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে রয়েছে বেতন ৬৬৯ কোটি টাকা, সম্মানি ৬২ কোটি টাকা এবং চুক্তিভিত্তিক ও অন্যান্য ভাতা ২১৯ কোটি টাকা। আবদুল আলিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতনভাতা পেলেও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তা না পাওয়া বেদনাদায়ক ও হতাশাজনক। তিনি অবিলম্বে সরকারকে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।

এ দিকে এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নেতারা। গতকাল বিকেল পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার পর রাতেও তারা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। নেতারা জানান, কর্মসূচিতে সারা দেশের প্রায় ১৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল ১৫ জন কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে পাশের ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/300704