১১ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:০৫

ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রতি বৈষম্য

অধ্যাপক আবদুছ ছবুর মাতুব্বর : ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা সরকার কর্তৃক স্বিকৃত একটি শিক্ষাধারা। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক (প্রাইমারী স্কুল সমমান) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ইবতেদায়ী মাদরাসা বলা হয়। এ শিক্ষা দুই ধারায় চলছে। কিছু অংশ এমপিওভুক্ত দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসার সাথে একীভূত করার মাধ্যমে, যাকে সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা বলা হয়। অপর অংশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা নামে যা সরকারি এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায়। ১৯৮৪ সনে তৎকালীন সরকার সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা চালু করার পাশাপাশি প্রায় ১৮ (আঠারো) হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাকে রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে। ১৯৯৪ সনে ১৮ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী থেকে মাত্র ১৫১৯ টি মাদরাসাকে এমপিওভুক্ত করে। শিক্ষকদের মাসিক ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৫০০ (পাঁচশত) টাকা। ২০১৩ সনের জানুয়ারি মাসে মাসিক বেতন ধার্য করা হয় ১২০০ (বার শত) টাকা। ২০১৪ সনে মহার্ঘ ভাতা ২৫০ টাকা বাড়িয়ে মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয় ১২৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি শিক্ষকের মাসিক বেতন ২৪০০ টাকা। বর্তমানে ৬৯৯৮ টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় (পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত) ৩৪ হাজার শিক্ষক পাঠদানে নিয়োজিত আছেন। অথচ বেতনে পাচ্ছেন মাত্র ৬ হাজার শিক্ষক। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার উপরোক্ত চিত্রই প্রমান করে সরকার এ শিক্ষার সাথে কি ধরনের বৈষম্য করছে। বৈষম্যের ভিত্তি ২ টি। একটি হলো সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার সাথে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার মধ্যকার বৈষম্য অপরটি হলো সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার বৈষম্য।

“মাদরাসা শিক্ষা” নামে আমাদের দেশে যে স্বতন্ত্র শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে তা পাক ভারত উপমহাদেশে তথা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন দেশে নেই। মাদরাসা আরবী শব্দ, আরবী ব্যাকরণে মাদরাসা শব্দটি ইসমে জরফ, জরফে মাকান এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার শাব্দিক অর্থ (বাংলায়) বিদ্যালয়, শিক্ষালয়, ইংরেজীতে School. আমাদের দেশে “মাদরাসা” শব্দটি দ্বারা মাদরাসা শিক্ষার সকল শ্রেণীকে বুঝায়। প্রথম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবই মাদরাসা এর অন্তরর্ভূক্ত। আরব দেশে সাধারনত শিশু কিশোরদের প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থাৎ কুরআন মজীদ, দিনিয়াত ও আরবী শিক্ষার স্থানকে মাদরাসা বলা হয়। তাদের দেশে মাদরাসা শব্দটি School লেভেল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। কলেজ বা মহাবিদ্যালয়কে তারা কুল্লিয়া বলে এবং University বা বিশ্ববিদ্যালয়কে জামেয়া বলে। পরিভাষাগত দিক থেকে মাদরাসা বলা হয় যে স্থানে কোরআন হাদিসের শিক্ষা দেয়া হয়। কোরআন-হাদীস বুঝার জন্য আনুসংগিক বিষয়গুলো পাঠ্যভুক্ত করে যে প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় তাকে মাদরাসা বলে। যেহেতু আল-কোরআনের বিষয়বস্তুতে রয়েছে বিজ্ঞান, সাহিত্য, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি দর্শন, নৈতিকতা এক কথায় মানবজীবনের সকল বিষয় বা দিক সেহেতু মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থ যেখানে কোরআন হাদীসকে মূল শিক্ষা ধরে তা বুঝার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যেমন কলা, বানিজ্য, বিজ্ঞানকে পাঠ্যভুক্ত করে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করানোই হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা। আরব মুল্লুকে এবং আমাদের দেশে মাদরাসা বলতে যা বুঝায় তার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আরব দেশসহ অন্যান্য দেশে একমুখী শিক্ষা থাকায় মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতির অর্থ তাদের কাছে আমাদের মত নয়। মাদরাসা শব্দটির এই অবৈঞ্জানিক বা আঞ্চলিক ব্যবহার বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশ্নের মুখোমুখী করে দিয়েছে। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও চাকরিস্থলে সনদগত মান পেতে এই মাদরাসা ছাত্রদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এর মূল কারণ বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষার পরিচয়গত সংকট।

সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার মধ্যে বৈষম্য ঃ ক) সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসাগুলোর সাথে একিভূত থাকার কারণে এ সকল ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট জনবল কাঠামো বেতন কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাসমূহ এ সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। খ) সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার ইবতেদায়ী প্রধানসহ মোট ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। কোন শিক্ষক অবসরে গেলে অথবা কোন শিক্ষকের মৃত্যু হলে বা যে কোন কারনে কোন শিক্ষকের পদ শূন্য হলে তা পূরণ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসায় যে কোন কারণে যে কোন শিক্ষকের পদ শূন্য হলে তা আর কখনো পূরণ হয় না। গ) সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার একজন শিক্ষক মাসিক বেতন উত্তোলন করেন ১২ হাজার টাকা পক্ষান্তরে একই গ্রেডের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার একজন শিক্ষক বেতন উত্তোলন করেন মাত্র ২৪০০ টাকা। গ) সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার নিজস্ব কোন অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় না উপরোন্ত সরকারি দান অনুদানে ভবন তৈরীর কাজটিও করা হয় অথচ সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদেরকে নিজেদের উদ্দোগে নিজস্বভাবে ঘর বা ভবন করে নিতে হয়।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যেকার বৈষম্য ঃ ক) ১৯৮৪ সনে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে একই স্মারকে এবং একই চিঠিতে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্ম হয়। ১৯৯৪ সনে সালে একই পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের মাসিক বেতন হিসেবে ৫০০ (পাঁচশত) টাকা বেতন ধার্য করা হয়। অতপর ধাপে ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হলেও একই হারে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয় নাই। খ) ২০১৩ সনের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু কোন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা ও শিক্ষকদের জাতীয়করণ তো দূরের কথা তাদের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু পূরণের আশ্বাস পর্যন্ত দেয়া হয় নাই। গ) প্রায় ৭ হাজার এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে থাকে এবং যেখানে ৩৪ হাজার শিক্ষক পাঠদান করেন। তন্মধ্যে মাত্র ৬ হাজার শিক্ষক নামেমাত্র বেতন(অনুদান) পেয়ে থাকেন। গ) সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা দীর্ঘদিন (১৯৮৪ সন থেকে) দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তার মূল্যায়ন কোন সরকারই আন্তরিকতার সাথে করে নাই।
ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার উচ্চতর স্তরে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা। সেকারণে ইবতেদায়ী মাদরাসাকে বলা হয় আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার সূতিকাগার (ফিডার ইনস্টিটিউট)। একটি গাছকে রক্ষা করতে প্রথমেই উক্ত গাছের শিকরের যতœ নেয়া ও রক্ষা করা জরুরী। কথায় বলে গাছের গোড়া বা শিকর কেটে মাথা পানি ঢালা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার অবস্থাও একই রকম। ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা আজ চরম ষড়যন্ত্রের শিকার। দলীয় এবং রাষ্ট্রীয় সর্বোপরি বিভিন্ন পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ও কার্যকর ক্ষমতাসম্পন্ন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষেরা মাদরাসা শিক্ষার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছে এবং এর অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্থ করছে। পাশাপাশি এ শিক্ষায় যারা নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাদের ব্যার্থতাও কম দায়ী নয়। তারা ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষাকে যেমন রক্ষা করতে পারছে না তেমনি অগ্রগতি বা উন্নতিও করতে পারছে না।
কথায় কথায় বলা হয় আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংকট চরমে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যার আনুপাতিক হার হিসেবে মাদরাসায় শিক্ষক সংখ্যা বেশী, অবকাঠামোগত এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদিতে সরকারের অপেক্ষাকৃত খরচ বেশী। কথাটি তথ্যগতভাবে সম্পূর্ণ অসত্য। কারণ সকল মাদরাসায় প্রথম শ্রেণী থেকে যথাক্রমে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। অবকাঠামো এবং উন্নয়ন ধারা সাধারণ শিক্ষার তুলনায় মাদরাসা শিক্ষা খাতে খুবই কম। মূলত এই অভিযোগ কিছুসংখ্যক উদভ্রান্ত মানুষের কথার কথা এবং শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা বিরোধী মহলের হিংসা ও বিদ্বেষে রূপ নিয়েছে। বারবার আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার এই দৈন্যতা দূরীকরণে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, পরামর্শ দেয়া হয়েছে, দাবি করা হয়েছে, আন্দোলন করা হয়েছে। গঠিত হয়েছিল একাধিক শিক্ষা কমিশন, সংস্কার কমিটি, পুনর্গঠন কমিটি, টাস্কফোর্স। তারা তাদের মেধা, সময় ও শ্রম দিয়ে বহুবার প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করেছে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের মন টলানো যেমন যায়নি এবং তেমনি মোকাবিলাও করা যায়নি। লক্ষ্য করে দেখুন দেশের সর্বত্র স্থানীয় একটি হাই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সরবরাহে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রযেছে গড়ে ৫টি। পাশাপাশি এন জি ও পরিচালিত এবং বেসরকারিভাবে (কিন্ডার গার্টেন) অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় মানের প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। অথচ মাদরাসা শিক্ষার উচ্চতর স্তরে ছাত্র-ছাত্রী সরবরাহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইবতেদায়ী মাদরাসা যেমন চালু নেই তেমনি যে সকল ইবতেদায়ী মাদরাসা চালু আছে তাও আজ বাঁচা-মরার সংগ্রামে লিপ্ত। আরও গভীরভাবে লক্ষ্য করুন সরকারের সাধারণ শিক্ষা ধারার উচ্চ স্তরে এবং মাদরাসা শিক্ষার উচ্চ স্তরে শিক্ষার্থী সরবরাহের জন্য একই সার্কুলারে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে মাদরাসা শিক্ষার উচ্চ স্তরকে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাস কে ধ্বংস করা হয়েছে পক্ষান্তরে বিভিন্ন সময় রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছাত্র-শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা যেমন দেয়া হয়েছে তেমনি একপর্যায়ে সরকারিকরণ করা হয়েছে অপরদিকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।

আলহামদুলিল্লাহ মাদরাসা শিক্ষা বিশেষ করে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষার যখন এই অবস্থা ঠিক তখনই আল্লাহ তায়লার কিছু সংখ্যক ইসলামপ্রিয় বান্দাহ কিন্ডার গার্টেনের মত প্রাইভেট ইবতেদায়ী মাদরাসা চালু করে। দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের শহরে, গ্রামে, গঞ্জে এখানে-সেখানে আজ অনেক ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্টিত হয়েছে। একসময় মাদরাসার যাবতীয় খরচ মানুষের দান-খয়রাত দ্বারা মিটানো হতো। এখন শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় মাদরাসার খরচ বহন করা হয়। বাবা-মা এবং অবিভাবকগণ নিজ টাকায় খরচ করে সন্তানদের পড়া-শুনা করিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানেও সড়যন্ত্র! লক্ষ্য করুন! নতুন মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় পরিমাণমত নিজস্ব জমি না হলে ভাড়া বাড়িতে মাদরাসা শুরু করার কোন অনুমতি দেয়া হয় না অথচ সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি পেতে ভাড়া বাড়ি এবং তা যেকোনভাবে হলেই হয়। বর্তমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন মাদরাসা শিক্ষাকে আরও সংকুচিতে করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা রক্ষা এবং উন্নয়নে কিছুসংখ্যক মৌলিক প্রস্তাবনা পেশ করছি :
১.আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার উচ্চ স্তরে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী সরবরাহের জন্য ব্যাপক হারে এবং শহজ শর্তে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হোক। শর্তসমূহ: ক) ২ হাজার স্কয়ার ফিট সমপরিমাণ যায়গা, ভবন, বা ঘর থাকতে হবে।। খ) দানকৃত ও ভাড়া বাড়িতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করা যাবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাগত কোন শর্ত থাকবে না। ঘ) সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত বই, বৃত্তি, উপবৃত্তির সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।
২. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজারো ওয়াকফ স্টেট রয়েছে। যার পরিমাণ লক্ষ লক্ষ একর। প্রতিটি ওয়াকফ স্টেটে একটি করে ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হোক।

৩. ১৯৮৪ সনে যে সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা সরকারি অধিভুক্ত করা হয়েছিল সেগুলোকে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত জাতীয়করণ করা হোক।
৪. প্রতিটি গ্রামে প্রয়োজনে এক বা একাধিক ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হোক। এক্ষেত্রে এনজিও এর উদ্যোগে ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হোক।
৫.স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাকে রক্ষা করতে এবং এ শিক্ষার উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার মত বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হোক।
মূলত ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা এদেশের শতকরা ৯০ জন মানুষের নিকট ইতোমধ্যে সমাদৃত হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ইতিপূর্বে যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছে আজও তা চলছে। ইসলামপ্রিয় মানুষদেরকে তা মোকালিা করে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তায়লা ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার তৌফিক দান করুন।
লেখক : সাবেক কেন্ত্রীয় আহ্বায়ক, বাংলাদেশ মাদরাসা আন্দোলন পরিষদ

http://www.dailysangram.com/post/322179