১০ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ১০:০৮

ঝুঁকির মুখে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু

ভারী যান পার্কিংয়ে ক্ষতি হচ্ছে মূল কাঠামোর

পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকায় দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে ভারী যানবাহন পার্কিংয়ের ফলে সেতুটির মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উঁচু যানগুলোর ওপরের অংশের ধাক্কায় সেতুর কাঠামোর কংক্রিটের আস্তর খসে পড়ছে। ঘষা লেগে ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।

জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি ঝুঁকির মুখে পড়লেও এর নিচের পার্কিংয়ের জায়গা ইজারা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে সেতুটি। এমনকি হঠাৎ করে ভেঙেও পড়তে পারে পাটাতন। আর তাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভারী যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না। দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সওজ ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান সমকালকে বলেন, সেতুর নিচে যান পার্কিং সাধারণত অনুমোদন করা হয় না। এতে নানা রকম ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা থাকে। যানের ধাক্কায় সেতুর কাঠামোর আস্তর উঠে গেলে এক সময় গার্ডার ভেঙে পড়বে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিন বাবুবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচের সড়কে বড়-ছোট ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্ক করে রাখা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কয়েক মাস আগে পার্কিংয়ের জন্য এই স্থানটি নির্ধারণ করে দেয়। এর পর থেকে সেখানে যান পার্ক করছেন সংশ্নিষ্টরা। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ফিও আদায় করা হচ্ছে। সেতুর নিচে অসতর্কভাবে যান পার্কিংয়ের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেল বাবুবাজারের জুমরাইল লেন এলাকায়। সেখানে সেতুর কাঠামোয় ব্যবহূত গার্ডারগুলোর কিছু স্থানে কংক্রিটের আস্তর খানিকটা খসে পড়েছে। সেতুর ওই অংশের উচ্চতা কম। তাই উঁচু যান প্রবেশ ঠেকাতে লোহার প্রতিবন্ধক দেওয়া ছিল। তবে তা খুলে ফেলা হয়েছে। সেখানে বড় ট্রাক-কাভার্ডভ্যানগুলো পার্ক করার সময় ঘষা লাগছে সেতুর কাঠামোয়। এর ফলে আস্তর খসে পড়ছে।

এ রকম উঁচু যান সেতুর নিচে রাখার ফলে কিছু কারিগরি সমস্যা ঘটার শঙ্কা থাকে বলেও জানা গেল। সেতুর পাটাতন ও স্তম্ভের মাঝে 'প্যাড বিয়ারিং' দেওয়া থাকে। সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচলের সময় এই প্যাড বিয়ারিং 'শক অ্যাবসর্বার' বা ঘাতশোষক হিসেবে কাজ করে। তবে পাটাতনের নিচের অংশ ঘেঁষে যানবাহনের ছাদ থাকলে সে প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বাবুবাজারের কাজী জিয়াউদ্দিন রোড সংযোগ সড়ক এলাকায় সেতুর নিচে ভারী যান প্রবেশ ঠেকাতে ফুটবলের গোলপোস্টের আদলে লোহার তৈরি প্রতিবন্ধক দেওয়া ছিল। শুধু মানুষ ও হালকা যান পারাপারের জন্য ওই পয়েন্টটি উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সেখানেও এখন পার্ক করে রাখা হয়েছে ভারী যান। অনেক স্থানে দেখা গেল, সেতুর মূল স্তম্ভ ঘেঁষে রাখা হয়েছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান। দীর্ঘসময় ধরে এভাবে ভারী যান রাখার ফলে স্থানটি দেবে গিয়ে দুর্যোগ ঘটতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, সেতুর নিচে যান পার্কিংয়ের ব্যাপারে সওজ আপত্তি জানালেও পরে চিঠি লিখে তাদের আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পার্কিংয়ের জায়গা ইজারা দেওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। আর যান পার্কিংয়ের কারণে সেতুর ক্ষতি হয়ে থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। ইজারাদারকে এ সম্পর্কে নির্দেশনাও দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক সমকালকে বলেন, সেতুর মূল কাঠামোয় ভারী যানবাহনের ধাক্কা বা আস্তর উঠে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। কারণ এমন ঘটলে একপর্যায়ে কংক্রিটের ভেতরে থাকা রড বেরিয়ে আসবে। আর রড পানির সংস্পর্শে এলে তাতে মরিচা ধরবে। এর ফলে কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন সংস্কার করলেও কোনো কাজ হবে না। সেতুকে টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত এ ধরনের পার্কিং বন্ধ করা দরকার বলেও মত দেন তিনি।

 

http://www.samakal.com/capital/article/1803622