১০ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ১০:০৭

উৎপাদন-মেয়াদের তারিখ যথাযথ না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত খাবারের খাদ্যমান নিশ্চিতকরণ ও খাদ্যের অপচয় রোধে মোড়কে যথাযথভাবে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বসানো হয় না। এ কারণে ভোক্তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, তারিখ না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি খাদ্যের অপচয়ও হয় বেশি। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আবু নোমান মোহাম্মদ আতাহার আলী এবং বাংলাদেশ আইন ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক ইনস্টিটিউটের (বিলিয়া) গবেষণা কর্মকর্তা মো. শাহ নেওয়াজ পাটোয়ারী যৌথভাবে এই গবেষণা করেন। গবেষণাটি পরিচালিত হয় এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে খাবারের মেয়াদ জানতে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো পদ্ধতি চালু নেই। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদকরা ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পদ্ধতিতে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারণ করে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে এসব খাবারের ভোক্তারা।
নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-তে খাদ্য মোড়কীকরণ, চিহ্নিতকরণ ও লেবেল সংযোজনের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এই আইনের ৩২ ধারার (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বা তার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোনো ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রবিধান দ্বারা বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীন নির্ধারিত পদ্ধতিতে মোড়কীকরণ, চিহ্নিতকরণ ও লেবেল সংযোজন ব্যতিরেকে কোন প্যাকেটকৃত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয় করতে পারবেন না।’

একই আইনের (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রবিধান দ্বারা অন্য কোন পদ্ধতিতে মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে উৎপাদন, মোড়কীকরণ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং উৎস-শনাক্তকরণ তথ্যাবলী স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার শর্ত পালন না করে প্যাকেটজাত কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রয় করা যাবে না।’
গবেষণায় বলা হয়, খাদ্য মোড়কে উৎপাদন, মোড়কীকরণ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লেখা বা নির্ধারিত ভাষা ব্যবহারের বিষয়টি ওই আইনে স্পষ্ট করে বলা নেই। বিভিন্ন কম্পানির প্রক্রিয়াজাত খাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, একেক কম্পানি একেকভাবে তারিখ লিখছে এবং ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করছে। ভাষাগত বিভ্রান্তির কারণে ভোক্তারা প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়ে সংশয়ে পড়ে অনেক সময় খাবার ফেলে দেয়। উৎপাদকরা যেমন খুশি তারিখ উল্লেখ এবং ভাষা ব্যবহার করায় তা ভোক্তাদের চোখে পড়ে না।
দেশের বিভিন্ন সুপারশপে গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারের মোড়কে খাবার উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ খুব ছোট ও অস্পষ্ট করে লেখা হয়। অনেক সময় এত ছোট লেখা মানুষের চোখে পড়ে না। এর জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, বিএসটিআই ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শুধু তদারক করেন উৎপাদকরা খাদ্য মোড়কজাত করার সময় উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বসাচ্ছে কি না। কিন্তু খাবার সঠিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে কি না সেটি তদারক করা হয় না।
গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, সহজবোধ্য ভাষায় খাবারের মোড়কের তথ্য-উপাত্ত লেখা থাকলে বাংলাদেশেও এ সম্পর্কিত বিভ্রান্তি সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/03/10/611444