১০ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ১০:০২

সমাবেশের মিছিল থেকে যৌন হয়রানি নিয়ে তোলপাড়

কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চে (বুধবার) সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া কয়েকটি মিছিল থেকে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা করেছেন। এ দিকে, ওই দিন আরো তিনটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সবকিছুই আড়াল হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়েও ঝড় বইছে। অনেকেরই প্রশ্নÑ ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি কিভাবে ওই মন্তব্য করলেন। আরো কথা উঠেছেÑ এভাবে বলে ওবায়দুল কাদের কি অপরাধীদের আড়াল করতে চাচ্ছেন?
গতকাল রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলে গত বুধবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। মতাসীন দলটির বিভিন্ন ওয়ার্ড শাখা এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে ওই জনসভায় যোগ দেন। বাংলামোটরে এরকম একটি মিছিলের মধ্যে পড়ে একদল যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা এক তরুণী ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, কলেজ থেকে ফেরার সময় এই জনসভার কারণে বাস না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটরে আসার পর একটি মিছিলে থাকা একদল যুবক তাকে ঘিরে ফেলে যৌন নিপীড়ন করে। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ১৫-২০ জন যুবক তাকে যৌন নিপীড়ন শুরু করলে এক পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দেয়। ােভের সাথে ওই তরুণী লেখেন, এরপর তিনি বাংলাদেশেই থাকবেন না। তিন ঘণ্টায় ওই পোস্টের শেয়ার ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়, অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সোচ্চার হন। এই বিষয়টি নিয়ে মতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনাও আসে নানাজনের মন্তব্যে।

ঢাকার একটি নামী কলেজের ওই শিার্থী প্রথমে পাবলিক স্ট্যাটাস দিলেও পরে তা ‘অনলি মি’ করে দেন, ফলে এখন আর তা সবাই দেখতে পারছেন না। এর ব্যাখ্যায় আরেক পোস্টে তিনি লেখেন- পোস্টটি রাজনৈতিক উসকানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল বলে তিনি তা ‘অনলি মি’ করেছেন। এ দিকে বুধবার রাতে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ ওই ধরনের ঘটনার খবর জানেন না বলে দাবি করেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা বুধবার রাতেই ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তার সাথে কথা বলে এসেছেন। বাংলামোটরে শিার্থীকে হয়রানির ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার পর জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও চলছে।
ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের আইডেনটিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনারাও জানতে পারেন, কারা কারা এতে জড়িত। অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

অপর দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনসভার বাইরে নারী লাঞ্ছনার দায় দল নেবে না। ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যে দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে ঝড় বইছে। এমনকি যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তারাও প্রশ্ন তুলেছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক কেন এই কথা বললেন? তাহলে তিনি কি অপরাধীদের শাস্তি চান না? এমনও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সাধারণ মানুষই নয়, দলেরও অনেকের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মামলায় প্রায় সেভাবেই লেখা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে ওই শিার্থীর সাথে কথা বলে তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার জানান, ট্রাফিক পুলিশের যে কনস্টেবল ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বাসে তুলে দিয়েছিলেন, ভিডিও ফুটেজ থেকে তার ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মুখে মেহেদী দেয়া লাল দাড়ি থাকার বিষয়টি বোঝা গেলেও এখনো তাকে শনাক্ত করা যায়নি। সেখানে যাদের ডিউটি ছিল তাদের মধ্যে কেউ কি-না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বাইরের কোনো পুলিশ সদস্য কি-না সে খোঁজও আমরা নিচ্ছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে সেখানে তার ডিউটি ছিল না।

এ দিকে, একাধিক সূত্র বলেছে, ওই একটি ঘটনাই নয়; ওই দিন আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরে লাঞ্ছিত একটি মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিলেও কিছুক্ষণ পরে তা তুলে নিতে বাধ্য হন। অন্যরা সেই সাহসটুকুও পাননি। এমনকি যে মেয়েটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন তাকে চারিত্রিকভাবে হেয় করারও চেষ্টা করে অনেকে। যে কারণে অন্যরা আর বিষয়টি প্রকাশে সাহস পাননি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/300429