সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভার কারণে নগরীতে গণপরিবহন ছিল খুব কম। এতে নগরবাসীকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। (বাঁয়ে) গুলিস্তানে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মানুষজন। (ডানে) ফার্মগেটে বিআরটিসি বাসে উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা
৮ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৫২

চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

কোথাও তীব্র যানজট কোথাও পরিবহনশূন্য সড়ক

সারা দিনই গতকাল রাজধানীতে যানবাহনকেন্দ্রিক ভোগান্তিতে ছিলেন সাধারণ মানুষ। কোথাও ছিল তীব্র যানজট। আবার কোথায় ছিল পরিবহন শূন্য ফাঁকা রাস্তা। যানজটের স্থানে বিভিন্ন পরিবহনে ঠাসাঠাসি থাকলেও সেখানে সাধারণ যাত্রীদের স্থান হয়নি। আবার ফাঁকা রাস্তায় যানবাহন না থাকা ছিল আরো এক ভোগান্তির কারণ। সব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ ছিল না।

গতকাল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছুটতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। কেউ মিছিল সহকারে আবার কেউ বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে করে সমাবেশেরে দিকে যান। এক সাথে মানুষের তীব্র চাপ, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। আবার এ দিন কর্মদিবস থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলে আয়োজিত জনসভাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দুর্ভোগ মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, রাস্তার কোথাও যানজট আবার কোথায় পরিবহন শূন্য হয়ে পড়ছে। তবে পুলিশ রাস্তার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে।

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বনানী, মহাখালী, মগবাজার, কাকরাইল, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী এবং মিরপুর থেকে আগারগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সকাল থেকেই মিরপুর এলাকা ছিল গণপরিবহন শূন্য। মিরপুর থেকে অফিসপাড়া মতিঝিলগামী বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করলেও তাতে সাধারণ যাত্রীদের স্থান ছিল না। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে নেয়ার জন্য সেগুলো রিজার্ভ ছিল। ওই বাসগুলোতে শুধু সমাবেশগামীরাই যেতে পারবেন। কিছু ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও ছিল রিজার্ভ করা। বেলা ৩টা থেকে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে ছুটতে শুরু করে মানুষ। ফলে অফিসে যেতে যানবাহনের জন্য যাত্রী সাধারণের হাহাকার অবস্থা দেখা দেয়। দু-একটি গণপরিবহন দেখা গেলেও সেগুলোতে ওঠা সম্ভব ছিল না। যার কারণে অনেক যাত্রী কিছু দূর হেঁটে, কিছু দূর ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছান। কেউ কেউ রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবার পাঠাও এর যানবাহন ব্যবহার করলেও যানজটে পড়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

এ দিকে মিরপুর থেকে বিভিন্ন বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ যানবাহনগুলো আগারগাঁও পর্যন্ত পৌঁছালেও বিপাকে পড়ে যায় বিজয় সরণী পৌঁছালে। কারণ বিজয় সরণী থেকে ফার্মগেট, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে গাবতলী, মিরপুর এবং উত্তরা, বনানী, মহাখালী থেকে আসা যানবাহনগুলো এখানে এসে আটকে যায়। এসব রুটের গাড়িকে বিজয় সরণী লিংক রোড ব্যবহার করে তেজগাঁও সাত রাস্তার দিকে যেতে বলা হয়। এতে শুরু হয় তীব্র যানজট। তার ওপর জনসভামুখী বিভিন্ন বাস রাস্তার পাশে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে সেখানে খাওয়া-দাওয়া কারানোয় যানজটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এ দিকে বেশির ভাগ যানবাহন রাস্তায় আটকে থাকায় সমাবেশস্থলের বিপরীত দিকের রাস্তাগুলো ছিল ফাঁকা। শুধু তাই নয়, মতিঝিল ও এর আশপাশের কয়েকটি সড়কও তখন ফাঁকা ছিল। এ সময় বিপরীত দিকগামী যাত্রীরা যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ে যান।
মিরপুর থেকে মতিঝিলে অফিসগামী হামিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি যানবাহন পাচ্ছিলেন না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তিনি একটি লেগুনায় উঠে খামারবাড়ি পর্যন্ত যান। সেখান থেকে হেঁটে ফার্মগেটে রাস্তা পার হন। এরপর কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে একটি রিকশা করে যান তেজগাঁও সাত রাস্তা। সেখানে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে জোর করে একটি বিআরটিসি দোতলা বাসে উঠে পড়েন। এরপর আরো প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিজয়নগর মোড়ে পৌঁছান। সেখান থেকে আবার রিকশায় করে মতিঝিলে পৌঁছান। মাসুম নামে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, অফিসিয়াল কাজে তিনবার তাকে কাওরানবাজার থেকে মিরপুর ও গাবতলীতে যেতে হয়েছে। রাস্তায় গণপরিবহন না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে পাঠাও সার্ভিসের মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এতে তার প্রায় ৮০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, সমাবেশের কারণে রাস্তায় মিছিল ও বিপুলসংখ্যক যানবাহন এক সাথে ঢুকে পড়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে রাস্তার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/299864