৭ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৮:৪৭

৬ হাজার রোহিঙ্গা ঠেলে দিতে চায় মিয়ানমার

এ পাশে বিজিবির সতর্ক পাহারা। ওপাশে কাঁটাতারের বেড়া, রয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কোথায় যাবে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গারা। মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবি -সমকাল
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে বলপূর্বক উচ্ছেদ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিতে চায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ লক্ষ্য নিয়ে কয়েক দিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা নির্যাতন চালাচ্ছে তারা। এমনকি রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদের ওপর ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করছে।

গত শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সঙ্গে এক পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে যে ছয় হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শিগগিরই এ সরানোর কাজ শুরু হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। কিন্তু কার্যত এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

জিরো লাইনে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, শনিবার থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ওপর হুমকি-ধমকি বৃদ্ধি করেছে। তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ওই স্থান ত্যাগ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। প্রতিদিন সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। জিরো লাইনে এসে তারা রোহিঙ্গাদের ডেকে জিরো লাইন ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিচ্ছে। প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জিরো লাইন ছাড়ার জন্য। অন্যথায় পরিণতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

জিরো লাইনে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি মো. আরিফ জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সাত-আটটি গাড়ি নিয়ে সেনাসদস্যরা জিরো লাইনে আসে। সেনাসদস্যরা কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গাদের ডেকে নিয়ে রাতের মধ্যেই তাদের ওই স্থান থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

আরিফ বলেন, 'আমরা কোথায় যাব জানতে চাইলে সেনাসদস্যরা বাংলাদেশের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়।' সেনাসদস্যরা বলে, তোদের দেশ ওটি, তোরা ওখানে যা, নইলে পরিণতি খারাপ হবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা জন্মভূমি থেকে পালিয়ে এসে এখানে জিরো লাইনে আশ্রয় নিয়েছি। আর কোনোদিন যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারি, তার ব্যবস্থা হিসেবে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। কাঁটাতারের বেড়া আমাদের নিজ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। তবু রেহাই পাচ্ছি না। ছোট এ স্থানে ছয় হাজার রোহিঙ্গা অমানবিক কষ্ট করে থাকছি। আমাদের এখানেও থাকতে দেবে না বর্মী বাহিনী।'

অন্য এক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি নুরুল আলম বলেন, 'দিনে কিছুটা নির্ভয়ে থাকলেও রাত নামলে আমরা আতঙ্কে নির্ঘুম বসে থাকি। কখন আমাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয় এই ভয়ে।' তিনি বলেন, প্রতি রাতে ক্যাম্পে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। গত বৃহস্পতিবার এভাবে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হলে রোহিঙ্গারা চিৎকার করে। এ সময় সেনাবাহিনী গুলি ছোড়ে।'

তিনি বলেন, 'পাশে প্রবাহিত ছড়ার পানি আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে ছড়ার পানিতে গোবর ঢেলে দিয়েছে, যাতে এ পানি ব্যবহার করতে না পারি। এভাবে প্রতিনিয়ত অত্যাচার- নির্যাতন চালানো হচ্ছে, আমরা যেন শূন্য রেখা ছাড়ি।'

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গত আগস্টে পালিয়ে এসেছে এই ছয় হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে মিয়ানমার। বেড়ার পাশ দিয়ে তৈরি করেছে সড়ক। সে সড়ক ধরে নিয়মিত যাতায়াত করছে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার সকালে কোনারপাড়া সীমান্তে দেখা যায় কিছুক্ষণ পর পর ট্রাকে সেনাসদস্যরা বাইশফাঁড়ির দিকে যাতায়াত করছে।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, মিয়ানামার তাদের সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যসংখ্যা বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। এ ব্যাপারে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের ফেরত নেওয়া না হলে আবারও পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে বিজিবি অধিনায়ক জানান।

 

http://www.samakal.com/whole-country/article/1803428