৬ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩২

পরিবহন ধর্মঘটে অচল ১৮ কনটেইনার ডিপো

আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ আমদানি রফতানি পণ্য

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদে পণ্যবাহী পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আকস্মিক ধর্মঘটে সোমবার অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের ১৮টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর কার্যক্রম। এ সময় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভার ট্রেইলার চলাচল বন্ধ থাকায় ডিপোগুলোর ভেতরে-বাইরে আটকা পড়ে বিপুল পরিমাণ আমদানি ও রফতানি পণ্য।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম অনেকটাই বেসরকারি ডিপোনির্ভর। শতভাগ রফতানি পণ্য বেসরকারি এসব ডিপোতে এনে রাখা হয়। পরে ডিপো থেকে বন্দরে নিয়ে তোলা হয় জাহাজে। এছাড়া আমদানি পণ্যের ৩০ শতাংশ ডিপোগুলো থেকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভার ট্রেইলারে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়।
কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই সোমবার সকাল ৬টা থেকে বেসরকারি ১৮টি কনটেইনার ডিপোর সবক’টিতে একযোগে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলার প্রবেশ বন্ধ করে দেন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে ডিপোগুলো থেকে কোনো পণ্য বের হতে পারেনি। একইভাবে কোনো পণ্য ভেতরে ঢুকতেও পারেনি।
পরিবহন মালিকরা জানান, বেসরকারি ডিপোগুলো তাদের না জানিয়ে চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে ৫০ টাকা গেট ফি ও ৫০ টাকা পার্কিং চার্জ আদায় শুরু করেছে। এছাড়া গাড়ি থেকে পণ্য লোডিং ও আনলোডিংয়ের সময় ডিপো শ্রমিকরা আরও প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা আদায় করছেন। এভাবে ডিপোতে প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রায় ১৩শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে, যা বেআইনি। এর প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) আজ পর্যন্ত গেট ও পার্কিং চার্জ আদায়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। এরপরও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক হয়নি। সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট চলছিল। আজ বন্দরে এ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে বাড়তি চার্জ আদায়ের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে পরিবহন মালিক ও বিকডা কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে।
ডিপো মালিকদের দাবি, পার্কিং ও গেট ফি ৫০ টাকা করে ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এর বাইরে অন্য কোনো টাকা আদায় করা হচ্ছে না। এছাড়া পার্কিং ফি সব ডিপোতে নেয়া হয় না। যাদের পার্কিং আছে তারাই এই ফি নিচ্ছে।
প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, ‘ডিপো মালিকরা আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া ১ মার্চ থেকে পার্কিং ফি ১০০ টাকা ও গেট ফি ৫০ টাকা আদায় করছে। এছাড়া কনটেইনার লোডিং-আনলোডিংয়ের জন্য ডিপো শ্রমিকরা প্রতিটি গাড়ি থেকে বখশিশসহ নানা অজুহাতে আরও ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা আদায় করছে। এর পুরোটাই বেআইনি এবং এগুলো পরিবহন মালিকদেরই দিতে হচ্ছে। এ কারণে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিপো থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেই।
বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) গোলাম সরওয়ার আমাদের জানান, দুপুরে তারা ডিপো মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে ডিপো মালিকরা আজ পর্যন্ত চার্জ আদায় স্থগিত করতে রাজি হয়েছেন বলে আমাদের জানানোর পর কিছু গাড়ি পণ্য পরিবহন করতে যায়। কিন্তু ডিপোর লোডিং-আনলোডিং শ্রমিকরা আগের মতোই টাকা আদায় অব্যাহত রাখায় সেগুলো পণ্য পরিবহন থেকে বিরত থাকে।
বিকডা সচিব রুহুল আমীন শিকদার জানান, ডিপোগুলো বন্ডেড এরিয়া হওয়ায় এখানে প্রবেশ করা গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। এক্ষেত্রে পাস দেয়া, রেজিস্টার মেইনটেইন করা ও কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয় বিধায় ৫০ টাকা করে গেট ফি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের পার্কিং আছে তারা ৫০ টাকা নিচ্ছেন। পার্কিং আছে এমন ডিপোর সংখ্যা ৪-৫টি।
তিনি বলেন, সকাল থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে সব ডিপো গেটে অবস্থান নেন। আমদানি ও রফতানি পণ্য নিয়ে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলার ডিপোগুলোতে এলে মালিক ও শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে সেগুলো চলাচল বন্ধ করে দেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন ১৮টি বেসরকারি ডিপোতে ৪ হাজার রফতানি কনটেইনার ও ২ হাজার আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। গাড়ি না চলায় এদিন বিকাল পর্যন্ত এ পরিমাণ কনটেইনার আটকা পড়ে ডিপোগুলোতে।
গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে তৈরি পোশাক রফতানিতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে প্রায় ২ হাজার রফতানিমুখী কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। আকস্মিক ধর্মঘটের কারণে বেশ কিছু কনটেইনার সময়মতো বন্দরে পৌঁছতে না পারায় শিপমেন্ট করা যায়নি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/24519/