৫ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ৮:০১

মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে দেশের আমদানি ব্যয়ও। ফলে আগামীতে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে, যা নিু আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংস্থাটি বলছে, দীর্ঘ চেষ্টার পরও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়নি। ফলে রফতানিতে শ্লথ গতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলতি হিসাবে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি করেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে আরও সমন্বয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

যেসব কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, বর্তমানে তার সবগুলোই বিদ্যমান। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন কম, প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়া ও কর্মসংস্থানের অভাব। এতে একদিকে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি করছে, অপরদিকে দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির সম্মুখীন করতে পারে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থবছর শেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮.৩৪ শতাংশে পৌঁছতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য নতুন এলসি খোলার হার ৫৬.৩৫ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৬০.৪৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.১৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৭ শতাংশ। কিন্তু আগের বছরের ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৪.৫১ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত ৫.৫২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ কোটি ৮১ ডলার কমেছে। অর্থবছর শেষে যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রাকে ব্যাহত করবে।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত রয়েছে। এতে রফতানির প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১.৬৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৩.৩৯ শতাংশে নেমে আসে। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি ৯.৭৭ শতাংশ অর্জিত হয়। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে প্রবৃদ্ধি ১.৭২ শতাংশে নেমে আসে। উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, জিএসপি না পেলে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং রফতানি কমার কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্য নেতিবাচক হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে চলতি হিসাবে ৪৭৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঘাটতি দেখা দেয়

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/24131