যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক
৫ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ৭:৫৯

স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা : ধুলোয় ধূসর যশোরের মহাসড়ক

মহাসড়ক তো নয় যেন মহাযন্ত্রণা। রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে অনেক আগেই। বসানো হয়েছে ইটের সিলিং। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কার্পেটিং না থাকায় চারদিকে ধুলা উড়ছে। সড়কের অবস্থা বর্ণনা করা কঠিন। এক কথায় মানচিত্রের পৃষ্ঠার মতো হয়ে গেছে। মানচিত্রে যেমন সাগর, নদী, হাওর, বাঁওড় অঙ্কিত থাকে, মহাসড়কের অবস্থাও তেমন। এটা যশোরের মহাসড়কগুলোর দৃশ্য। যা যানবাহন চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কার্পেটিং না থাকায় সড়কে শুধু ধুলা আর ধুলা। এ ধুলা থেকে কিছুতেই নিস্তার পাচ্ছে না যাত্রীসহ পথচারী। চরম অস্বস্তিতে পথ চলতে হচ্ছে। ধুলোর কারণে তৈরি হয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। এতে মানুষের সর্দি, চর্মরোগ, কাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে।

যশোরে প্রায় সব আঞ্চলিক ও মহাসড়কগুলোর একই অবস্থা। খানাখন্দে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-মাগুরা, যশোর-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং যশোর-নড়াইল সড়ক, যশোর-চৌগাছা সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করায় এ সড়কগুলো এখন গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এতে মানুষের স্বস্তির চেয়ে দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যশোরের সাতটি সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে যশোর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

তারা গত ১ মার্চ থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে বলে আলটিমেটাম দিয়েছিল। কিন্তু সড়ক সংস্কার করা হবে এ আশ্বাসে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানির যোগাযোগমাধ্যম হচ্ছে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক। বাংলাদেশ ও ভারত যাতায়াতকারী যাত্রীদের বেশির ভাগ এই পথেই যাতায়াত করেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা এবং পুরো সাতক্ষীরা জেলার যোগাযোগের মাধ্যম হলো এই সড়ক। প্রতিদিন আমদানি-রফতানি কাজে ব্যবহৃত এক হাজার ২০০ ট্রাক, যাত্রী পরিবহনে আরো ৩০০ বাসসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করে এ সড়কে। শুধু যশোর নয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থগিত হয়ে গেছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। কত দিন পরে প্রকল্প চালু হবে তা বলতে পারছে না সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

এই শুষ্ক মওসুমে ধুলার বন্যা বইছে সড়কে। রাস্তার ধারের মার্কেট সর্বত্র ধুলোয় ধূসরিত। শুধু যশোর-বেনাপোল নয়, যশোর-খুলনা, যশোর-মাগুরা, যশোর-ঝিনাইদহসহ প্রতিটি সড়কেই উড়ছে ধুলাবালু। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী চাকরিজীবী, গাড়ির চালক, সবাই অতিষ্ঠ ধুলাবালুতে। সড়কের দু’পাশের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে ধুলার জোয়ার। যাত্রীবাহী বাস, অটোরিকশা, টেম্পো থেকে শুরু করে ভ্যান যাত্রীদের ধুলার বিড়ম্বনার শিকার হতেই হচ্ছে। যানবাহনের গতির সাথে উড়ে আসা ধুলায় সয়লাব আশপাশের এলাকা। দোকানপাট, হোটেল সবকিছুতে ধুলার আস্তর জমছে। চারদিকে এখন ধুলাবালুর রাজত্ব। উড়তে থাকা ধুলাবালুতে ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টিসীমা। ধুলাবালুর মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দা আর পথচারীদের।
ঝিকরগাছা বাজারের এক হোটেল কর্মচারী হাসান বলেন, যানবাহনের গতির সাথে বাতাসে উড়ে আসা ধুলায় হোটেলের চেয়ার-টেবিল সাদা হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর মুছেও চেয়ার-টেবিল পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না।
প্রসাধনী বিক্রেতা জিল্লুর রহমান বলেন, দোকান খুলে বসতেই চারদিকে ধুলো। ধুলার আস্তর জমছে দোকানে। রিকশা-ভ্যান যাত্রী ও পথচারীদের অবস্থা আরো নাজুক। কোনোভাবেই ধুলো থেকে রেহাই মিলছে না।
ডা: মো: হুসাইন শাফায়েত বলেন, ধুলা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। ধুলোবালুর কারণে বায়ুদূষণ হয়। বায়ুদূষণের কারণে সব বয়সের মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। ধুলোবালু থেকে রক্ষা পেতে তিনি মাক্স ব্যবহারের পরামর্শ দেন।


http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/299063