৪ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১১:০৭

গরমের শুরুতেই বিদ্যুতের আসা-যাওয়া

গরমের শুরুতেই লোডশেডিং যন্ত্রণা। শহর থেকে গ্রামে সর্বত্রই একই অবস্থা। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার পুরনো রূপে অতিষ্ঠ মানুষ। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে কোথাও কোথাও পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। অপরদিকে পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন সেচের সঙ্গে জড়িত কৃষক।

রাজধানীতে দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার দেশের কোথাও কোথাও সকাল ৭টায় বিদ্যুৎ গেলেও আসে সন্ধ্যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের সরবরাহে শর্টেজের কারণে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘটতি থাকবেই। আর এটা ধরে নিয়ে সামনে এগুচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ ঢাকায় কিছু জায়গায় লোডশেডিং হচ্ছে বলে স্বীকার করেছে। আর দেশের অন্যান্য জায়গায় মেনটেন্সের কারণে লোডশেডিং হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
পিডিবি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১লা মার্চ গড়ে চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৮০০ থেকে ৮ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে হিসাবে বিদ্যুতের

কোনো ঘাটতি নেই বরং উৎপাদন বেশি আছে। কাগজ-কলমের এই হিসাবে দেশে বিদ্যুতের কোনো লোডশেডিং নেই। কিন্তু সারা দেশে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার আচরণ বলে দেয় কী পরিমাণ লোডশেডিং হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১লা মার্চ মাগুরা জেলার সদর উপজেলার আলমখালী বাজার, রাউতরা গ্রামে সকাল সাড়ে ৭টায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে সন্ধ্যায়। একই পরিস্থিতি ছিল পরের দিন শুক্রবারও। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত বিশ্বাস জানান, বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। গরম না আসতেই বিদ্যুতের পুরনো আচরণ শুরু হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কিশোরগঞ্জ ভৈরব উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, গরম আসতে না আসতেই তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় মারাত্মক ক্ষতি করে। নাটোরের বনপাড়ার এক বাসিন্দা আইয়ুব জানান, গত দুই-তিন দিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসে। ঢাকার উত্তরখানের আটিপাড়ার এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন সন্ধ্যায় দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তেজগাঁও, আজিমপুর, গোলাপবাগ, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলকায় বিদ্যতের লোশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, গরম ও রমজান আসার আগেই বিভিন্ন জায়গায় মেনটেন্সের কাজ চলছে। ফলে গ্রাহক মনে করছেন লোডশেডিং হচ্ছে। সঞ্চালন ও বিতরণের সমস্যা আছে। গ্যাসের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদনে সংকট আছে। ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হবে। তখন কিছুটা সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, রাজধানীতে তেজগাঁওসহ কিছু জায়গায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই। বরং উৎপাদন বেশি আছে। তিনি স্বীকার করেন, দেশের কিছু কিছু জায়গায় হয়তো মেনটেন্সের কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেন তিনি।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের মূল জ্বালানি হলো গ্যাস। ৬৭ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস দিয়ে। গ্যাসের অভাবে এক হাজার ৫শ’ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এই গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। বহু সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের অভাবে অচল। তেল দিয়ে উৎপাদন হয় ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ। বাকিটা কয়লা ও জলবিদ্যুৎ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, গরম আসার সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। তখন সেভাবে বিতরণ করতে পারে না। লোড ম্যানেজমেন্ট সঠিক মতো হয় না। ফলে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ হয় না। সরকারের হিসাবের স্বচ্ছতার অভাব আছে। সরকার তার অভ্যন্তরীণ হিসাব ধরে। এক্সট্রানাল হিসাব ধরে না। প্রতি বছরেই এরকম ঘটনা ঘটে। কোনো সমন্বয় নেই। উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু জ্বালানির সরবরাহ বাড়েনি। তিনি বলেন, কারিগরি বিষয়ে অনুমাননির্ভর কথা বলা উচিত নয়। সরকার বিদ্যুতের নিয়মতান্ত্রিক কোনো হিসাব রাখে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=107415