৪ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:০৯

সড়কে ঝরে গেল আরো ১০ জনের প্রাণ

চকরিয়াতেই নিহত ৪ : আহত ২০

আবারো সড়কে ঝরে গেল ১০ জনের প্রাণ। এর মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ায় চারজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানে প্রাণ হারায় আরো ছয়জন।
চকরিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস ও দুইটি মাইক্রোবাসের ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরো একজন। আহত হয়েছেন তিন গাড়ির অন্তত ২০ জন যাত্রী। মুমূর্ষু অবস্থায় পাঁচজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আহত অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকাল সোয়া ৬টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাংস্থ ইছাছড়ি ব্রিজের কাছে মহাসড়কের বাঁকে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যাত্রীবাহী একটি বাস দ্রুতগতিতে আসছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা পর পর দুইটি মাইক্রোবাস একে অপরকে ওভারটেক করতে গেলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ অবস্থায় একটি মাইক্রো সড়ক থেকে ছিটকে পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গিয়ে আটকা পড়ে। অপর মাইক্রোবাসটিও দুমড়েমুচড়ে যায়। আর যাত্রীবাহী বাসটির সম্মুখ অংশও দুমড়েমুচড়ে যায়।
নিহতরা হলেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্ব দরগাহ বিলের হাতিমুড়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে আলী আকবর (৩১), একই এলাকার মীর আহমদের ছেলে সাহাব উদ্দিন (১৯), উত্তর খুনিয়া পালং গ্রামের মৃত শামশুল আলমের ছেলে জয়নাল আবেদীন (২০) ও আবদুল গফুরের ছেলে মোহাম্মদ মামুন (১৮)। নিহতদের মধ্যে একটি মাইক্রোর চালকও রয়েছেন।

আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা পাঁচজন হলেন একই এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে সাহাব উদ্দিন (৩০), মো: উলা মিয়ার ছেলে নুরুল হোসেন (২২), আলী আহমদের ছেলে মো: নুরুল ইসলাম (১৮), মৃত তৌহিদুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ ছোটন (২৫) ও জাকের আহমদ (২৭)।
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচরে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে হেলপার নিহত ও পাঁচ যাত্রী আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ গাড়িটি আটক করেছে।
পুুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যাত্রী বোঝাই করে একটি লোকাল বাস শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসার পথে মহাসড়কের হাজী শরীয়াতুল্লাহ সেতুসংলগ্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে রাখা বালুর স্তূÍপে চাকা আটকে খাদে পড়ে যায়। এ সময় গাড়িটির হেলপার মফিজ মোল্লা (২০) ওই গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হাইওয়ে পুলিশ ঘাতক গাড়িটি আটক করেছে। নিহত মফিজ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব শাহিন্দ্রা এলাকার জমির মোল্লার ছেলে।

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাইফুল (১৯) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি যাত্রীবাহী গাড়ি বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকলকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। নিহত সাইফুল উপজেলার বেজুড়া গ্রামের মফিজ আলী ছেলে।

বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবান সদরের কানাপাড়া এলাকায় গতকাল বিকেলে কাঠবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে এক শ্রমিক নিহত ও চালকসহ তিনজন আহত হয়েছে। নিহত শ্রমিকের নাম আবদুল আলিম (৪০)। তিনি সুয়ালক ইউনিয়নের কাইচতলি এলাকার আবদুল বারেকের ছেলে। সদর থানার ওসি গোলাম সরওয়ার জানান, অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই ট্রাকটি পাহাড়ি সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে আবদুল আলিম মারা যান। আহত হয় কাঠব্যবসায়ী আবুল কাশেম (৩৬), মোস্তাক আহম্মদ (৪০) ও চালক নাজিম উদ্দিন (৩৫)। এদের মধ্যে আবুল কাশেম ও নিজিম উদ্দিনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে বান্দরবান সদর হাসপাতাল, পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গাজীপুর ও কালিয়াকৈর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়িচাপায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার রাস্তার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। নিহত ব্যক্তি মানসিক প্রতিবন্ধী বলে ধারণা করছে পুলিশ।
সালনা-কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ওসি বাসুদেব সিনহা জানান, খবর পেয়ে ভোর ৬টায় লাশ উদ্ধার করা হয়। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়ার শহরতলির উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি মাটি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে টিপু (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র। টিপু জয়চণ্ডি ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আমির আলী ওরফে কালাই মিয়ার ছেলে এবং উত্তর কুলাউড়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।

কুলাউড়া থানার এসআই ইয়াছিন বলেন, নিহতের পবিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশের পোস্ট মর্টেম ছাড়াই গতকাল শনিবার দাফন করা হয়েছে।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, গতকাল আখাউড়ায় ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে সুমন মিয়া (২৭) নামে এক হেলপার নিহত হয়েছে। দুপুরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ধরখার বাসস্ট্যান্ডের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, ট্রাক্টরের হেলপার সুমন মিয়া চলন্ত ট্রাক্টর থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান। এ সময় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সুমন ধরখার গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে।
আখাউড়া ধরখার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: আব্দুস সোবহান জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/298802