৪ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:০৮

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ বেপরোয়া

অস্থির শিক্ষাঙ্গন

চট্টগ্রামে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শাসকদলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। কোনোভাবেই উপদলীয় কোন্দল সামাল দিতে পারছেন না সংগঠনের কর্ণধাররা। ছাত্রলীগারদের পেশিশক্তি ও অস্ত্রের মহড়ায় অস্থির হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের উপদলীয় কোন্দলে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হলেও এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সংঘর্ষে লিপ্ত বিভিন্ন গ্র“পগুলো কোনো না কোনো প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি অ্যাকশনও ধরিমাছ না ছুই পানির মতো। ফলে দিন দিন জনআতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগের কর্মতৎপরতা। চলতি বছরের শুরুর দুই মাসেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বহু সংঘর্ষের ঘটনায় জড়ায় সরকারদলীয় এ ছাত্রসংগঠনটি। গেল সপ্তাহে ছাত্রলীগের উপদলীয় কোন্দলে সংঘর্ষের ফলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই উত্তর-জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের এসব উপদল কোনো না কোনো আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী এবং নেতার আস্কারা পেয়েই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের নানা ঘটনায় জড়াচ্ছে।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে ককটেল বিস্ফোরণ, হাতাহাতি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই। সম্মেলনটিও শেষ পর্যন্ত পণ্ড হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল এবং এর নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের কোনো গডফাদার জড়িত। যদিও ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সম্মেলনে ঢুকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি সত্ত্বেও জামায়াত-শিবিরের বহিরাগতরা কিভাবে হামলা করে আবার চলেও গেল সেই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। তা ছাড়া বহিরাগতরাই যদি সম্মেলন পণ্ড করে তা হলে পুলিশ কেনই বা কাউকে আটক কিংবা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সে প্রশ্নও উঠে আসছে জনমনে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সরকারদলীয় বড় নেতার ইন্দনেই এই হামলা হয়েছে এবং সেজন্য পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটলেও এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সাহস পুলিশ দেখায়নি।
ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেকটি ঘটনার নেপথ্যে কোনো না কোনো নেতার ইন্ধন রয়েছে। এখানে প্রায় প্রত্যেক নেতার আলাদা আলাদা অনুসারী থাকায় তারা নিজেদের সুবিধামতো অনুসারীদের ব্যবহার করেন।

এর আগে ২৬ ফেব্র“য়ারি নগরীর লালদীঘি ময়দানে সাবেক চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভায় ছাত্রলীগের দুই গ্র“পে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বিশৃঙ্খলা, সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি স্লোগান এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ির মধ্যে শোকসভা অব্যাহত ছিল। বেলা ৪টায় শোকসভা শুরুর পর থেকেই বেলা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চার দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের কারণে শোকসভার কার্যক্রম কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুরু হলে আবারো সংঘর্ষ বাধে। মঞ্চ থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতারা দফায় দফায় স্লোগান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েও ব্যর্থ হন।

২০ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্র“প এবং পুলিশের সাথে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্রলীগের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় এবং পরিবহন দফতরে দাঁড়িয়ে থাকার সময় টিভির গাড়িসহ ১১টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশের সার্থে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল, শাহ আমানত ও সোহরাওয়াদী হল থেকে দু’টি এলজি, বস্তা বোঝাই রামদা উদ্ধার করে।
এর আগের দিন ১৯ ফেব্র“য়ারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুইগ্র“প। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দেয়ায় প্রতিপক্ষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে যাওয়ার সময় ফেব্র“য়ারিতে পুলিশি চৌকিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যকে গুলি করতে দ্বিধা করেনি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
গত জানুয়ারি মাসে নগরীর হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে ৩ দফায় ছাত্রলীগের দুই গ্র“প ছুরি মারামারিতে নিজেদের রক্তাক্ত করার ঘটনা ঘটিয়েছে।

জানুয়ারির ২০ ও ২১ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্র“পগুলো ৪টি পৃথক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের পৃথক সংঘর্ষ হয়। একই সময়ে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং চমেক হাসপাতালে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্র“পগুলো।
গত ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শোভাযাত্রার সারিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করেও সংগঠনটির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্্েরনভিত্তিক ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন ও ভিএক্সের বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর আগে গত বছরজুড়ে খুনাখুনিসহ সংঘর্ষ-সঙ্ঘাতে লিপ্ত ছিল সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনটি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/298804