৪ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:০৭

শিক্ষা প্রশাসনের রাঘববোয়ালেরা এখনো বহাল তবিয়তে

শিক্ষা প্রশাসনের আলোচিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করেই ক্ষান্ত হয়ে গেছে শুদ্ধি অভিযান। কয়েকজন কর্মকর্তার বদলি হলেও আসল রাঘববোয়ালরা এখনো বহাল তবিয়তে। নানা অভিযোগে যাদেরকে বদলি করা হয়েছে তাদেরকে যারা নিয়োগ দিয়েছেন তারা স্বপদেই রয়েছেন। বদলির পর নতুন যেসব নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাতেও হাত রয়েছে ওই রাঘববোয়ালদের। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে পুনরায় দুর্নীতিবাজরা বিভিন্ন দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসবে।

দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও বোর্ডে নানা অনিয়ম করে আসছে। তাদের কাছে জিম্মি ও অসহায় সৎ কর্মচারী-কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন ধরে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে দায়িত্ব পালন করায় নানা অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এবার অপ্রতিরোধ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ব্যাপক আলোচনায় এলে ওই দুর্নীতিবাজদের নাম বের হয়ে আসে। দুর্নীতিবাজদের নাম বেরিয়ে পড়লে মন্ত্রণালয়ের রাঘববোয়ালদের বাঁচাতে নিচের দিকে চলে শুদ্ধি অভিযান। সেই অভিযানে শিক্ষা প্রশাসনের আলোচিত ৩০ কর্মকর্তাকে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন সরকারি কলেজে বদলি করা হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে মন্ত্রীর দফতরের একাধিক কর্মচারীসহ ১৪ জনকে অন্য শাখায় বদলি করা হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)সহ বিভিন্ন অধিদফতর, সংস্থা ও বোর্ডের ৩০ কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বদলির আদেশ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘরে-বাইরে ব্যাপক চাপের কারণে মন্ত্রণালয় এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। এদের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা ছিলেন যারা প্রেষণে এসে বছরের পর বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এমনকি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথেও এই চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এদের যিনি গুরু? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেকেই এখনো শঙ্কিত। সূত্র জানায়, ওই কর্মকর্তা ৮ বছর ধরে একই মন্ত্রণালয়ে চাকরি করছেন। যাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল তারা ওই কর্মকর্তার হাত ধরেই শিক্ষা প্রশাসনে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তার চাকরি আছে আর মাত্র এক মাস। এই এক মাসে আখের গোছানোর জন্য এখন তিনি মরিয়া বলে একাধিক সূত্র বলেছে। শিক্ষা প্রশাসনের যেসব পদ এখন খালি রয়েছে ওইসব পদে ওই কর্মকর্তা নতুন নিয়োগ দিয়ে বিদায় নিতে চাচ্ছেন তিনি। ওই কর্মকর্তাই বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরের বদলি, নিয়োগ ও প্রমোশনসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানা গেছে। একজন মন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এবং তার বাড়ি ওই মন্ত্রীর এলাকাতে হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে ওই কর্মকর্তা দোর্দন্ড প্রতাপশালী। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলারও সাহস রাখে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই কর্মকর্তার হাত ধরেই যদি নতুন নিয়োগ হয় তবে ভালো কারো নিয়োগপ্রাপ্তির কোনোই সম্ভাবনা নেই। অসৎ লোকজন আবারো শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাবে।

এ দিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চুনোপুঁটিরা গ্রেফতার হলেও রাঘববোয়ালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই ঘটনার গোড়ায় কারা সম্পৃক্ত তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে পরীক্ষার্থীরাও রয়েছে। তাদের অভিভাবকদের বক্তব্য ওইসব শিক্ষার্থীর মোবাইলে প্রশ্নপত্র পাওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের প্রশ্ন হচ্ছেÑ শিক্ষার্থীদের দোষ কী? আর দোষ করলেও তা কতটুকু। যারা আসল তারা তো ধরা পড়ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেছেন, আসল জায়গায় দুর্নীতিবাজরা বসে থাকলে রাঘববোয়ালরা ধরা পড়বে কিভাবে।

সম্প্রতি রাজধানীর পৃথক দুই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে। এই দুই কর্মচারীকে গ্রেফতার করার পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। বাড়ি-গাড়ি, নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক তারা। এরকম অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই রয়েছে যারা কোটি কোটি টাকার মালিক। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ওই দুর্নীতিবাজরা যতদিন থাকবে ততদিন অনিয়ম শেষ হবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/298782