২ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৪

ফারমার্স ব্যাংকের অতীতের ঋণ নিরীক্ষা করার নির্দেশ

সমস্যাকবলিত ফারমার্স ব্যাংকের অতীতে দেয়া ঋণকার্যক্রম নতুন করে নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার আওতায় ব্যাংকটির এক কোটি টাকার ওপরে যেসব ঋণ রয়েছে ওই সব ঋণের বিপরীতে যথাযথ জামানত রাখা হয়েছে কি না, কী পরিমাণ আদায় হয়েছে, খেলাপি কি না তা বিস্তারিতভাবে তদারকি করতে হবে। এ তদারকির প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন এক চিঠি পাঠানো হয়েছে ফারমার্স ব্যাংকে। স¤প্রতি এ চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমস্যাকবলিত ফারমার্স ব্যাংক ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেয়। কিন্তু ওই অর্থ আর আদায় হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ব্যাংকটি এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। কিন্তু নতুন করে আমানত রাখছে না। এতে ব্যাংকটিতে নগদ টাকার সঙ্কট প্রকট হয়। এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে না পারায় আমানত সংগ্রহে নিরুৎসাহিত হয়ে যখন আমানতের সুদহার ব্যাংক রেট অর্থাৎ ৫ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনে তখনো ফারমার্স ব্যাংক উচ্চহারে আমানত সংগ্রহ করে। এক দিকে উচ্চহারে আমানত সংগ্রহ করে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়িয়ে দেয়, অপর দিকে অনিয়মের মাধ্যমে দেদার ঋণ দিতে থাকে। বেশি মুনাফার আশায় ফারমার্স ব্যাংকের ফাঁদে অনেকেই পা দেন। সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংকের এ ফাঁদ থেকে দেশের অনেক প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাও রেহাই পাননি। এর বাইরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের তহবিল অনৈতিক সুবিধা পেতে ফারমার্স ব্যাংকে জমা রাখে। নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের ৭৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংকে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যায়। কিন্তু সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের তহবিলের শতভাগই ফারমার্স ব্যাংকে জমা রাখা হয়। জলবায়ু তহবিলের ৫০৩ কোটি টাকাসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল এখন ফারমার্স ব্যাংকে আটকে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উপ মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বেশি মুনাফার আশায় ফারমার্স ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা আমানত রেখেছিলেন তিনি। এখন ওই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য বার বার তাগিদ দিচ্ছেন। কিন্তু ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে শুধু সময় নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়ে যেখানে টাকা উদ্ধার করতে পারছি না, তাহলে সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি যে কী পরিমাণ হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, যেখানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিলের ৫০৩ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না সেখানে সাধারণ মানুষের অর্থ উদ্ধার করা অনেক জটিল হবে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকটির কয়েকটি শাখায় বিশদ পরিদর্শন চালানো হয়। ওই পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যাংকটির ব্যাপক অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। গ্রাহকের দেয়া ঋণের কমিশনের অর্থ ব্যাংকের কিছু প্রভাবশালী পরিচালকসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে গেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবার কোনো কোনো ঋণের ভুয়া জামানত দেখানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও পর্যাপ্ত জামানত নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকটির সব শাখাতেই ঋণের বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এ কারণে প্রথমে ব্যাংকটিকে এক কোটি বা এক কোটি টাকার ওপরে যেসব ঋণ রয়েছে ওই সব ঋণের বর্তমান অবস্থা চিহ্নিত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ কারণেই ব্যাংকটিকে ফাংশনাল অডিট (ব্যাংক থেকে তদারিক করে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা) করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে এ ধরনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনরায় তা বিশদ পরিদর্শন চালানো হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/298183