২ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৬

স্মার্টকার্ড উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে

ফরাসি কোম্পানি ওবার্থারকে বিদায় করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড তৈরির দায়িত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে স্মার্টকার্ডের উৎপাদন ব্যয়। সূত্র জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি-বিএমটিএফ’ থেকে স্মার্টকার্ড উৎপাদনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তবে ফরাসি কোম্পানির চেয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে কার্ডপ্রতি উৎপাদন ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে ৮ টাকার মতো। ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ৯ কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ২০১৫ সালের ১৪ই জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। যার মেয়াদ ছিলো ১৮ মাস।

কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোর পরেও ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিতে উল্লেখিত কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সে বছরের শেষের দিকে ওবার্থারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে সংস্থাটি। একইসঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করে নিতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনামুল কবীরও কাজ করছেন। টেকনিক্যাল কমিটি সবকিছু বিচার বিবেচনা করে বিএমটিএফ-এর কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করে নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। তার ভিত্তিতেই বিএমটিএফ-এর সঙ্গে একটি চুক্তিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শিগগিরই চুক্তি করার জন্য বিএমটিএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে ইসি। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ২৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি ৫০ লাখ কার্ড তৈরি করে নেয়া হবে। এরপর প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন কার্ড নেয়া হবে। কার্ড প্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ দশমিক ৬ মার্কিন ডলার (১ ডলার সমান ৮৩.৪৮ টাকা)। প্রতি তিন বছর পরপর মূল্য পুনর্নির্ধারণ হবে। ফরাসি কোম্পানির কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করতে ইসির ব্যয় হতো ১ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার। আর বিএমটিএফ কাছ থেকে তৈরি করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৬ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ কার্ড প্রতি ১০ সেন্ট করে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ওবার্থার একটি বড় কোম্পানি। তারা শুধু আমাদের কাজই নয়, অন্যদের কাজও করতো। তাই তাদের উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হতো। আর বিএমটিএফ এটি নতুন করছে। তাই তাদের ব্যয় একটু বেশি হচ্ছে। তবে এটি খুব বেশি নয়। আর ওবার্থারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০১৫ সালে, এখন ২০১৮ সাল। এ সময়ের মধ্যে সব জিনিসের দামও বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন যে খসড়া চুক্তিপত্র তৈরি করছে তা থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে গড়ে প্রতি মাসে ৪ মিলিয়ন করে কার্ড সরবরাহ করতে হবে বিএমটিএফকে। আর ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে ২৫ মিলিয়ন কার্ড। এক্ষেত্রে আইএসও এবং এফওজিআরএ টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। টেকনিক্যাল কমিটি কর্তৃক কার্ডের মান নিশ্চিত করা হবে। দেশে বর্তমানে ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। চুক্তি অনুযায়ী, ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ওবার্থার সাড়ে ছয় কোটির মতো কার্ড তৈরি করে দিয়েছিল। অবশিষ্ট আড়াই কোটি কার্ড এবং পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত হওয়া ১ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জনের স্মার্টকার্ডও তৈরি করে দেবে বিএমটিএফ। একইসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তীতে আরো যারা ভোটার হবেন, তাদের কার্ডও বিএমটিএফ থেকেই নেবে ইসি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=107173