২ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০১

পেঁয়াজের দাম উল্টো বেড়েছে

নতুন সবজিও চড়া

শীতকালে সাধারণত চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দামও কম থাকে। কিন্তু এবারের শীতে সরবরাহ থাকার পরও রাজধানীতে সবজির দাম ছিল বেশ চড়া। বেশির ভাগ সবজির কেজি ছিল ৪০ বা ৫০ টাকারও বেশি। তবে শীত বিদায় নেওয়ার পর বেশ কিছু সবজির দাম অনেক কমে গেছে। অবশ্য গ্রীষ্মের যেসব সবজি বাজারে আগাম আসতে শুরু করেছে সেগুলো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
তা ছাড়া পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সন্তোষজনকভাবে কমেনি পেঁয়াজের দাম। বরং দুই দিন আগের তুলনায় দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ জন্য সরবরাহ ঘাটতির অজুহাত দেখাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার চাষ বেশি হওয়ায় টমেটোর সরবরাহ প্রচুর। এ কারণে দাম অনেক কমে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। তবে পাইকারি বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে চার-পাঁচ টাকা কেজি দরে। খুচরায় দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও পাইকারি বাজারের তুলনায় এটি প্রায় তিন-চার গুণ বেশি।
ধানমণ্ডির জিগাতলা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা ছানোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচ টাকা কেজিতে আমরা আনি। যাতায়াত খরচ আছে। বেশি ভয় বিক্রি না হলে পচে যাওয়ার। পচলেই তো লস। এ জন্য একটু বেশিই বেচতে হয়।’ বগুড়ার চণ্ডীহারের কৃষক মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে টেলিফোনে জানান, অনেক বেশি টমেটো চাষ হওয়ার কারণেই বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু কৃষকরা দাম পাচ্ছে না।
বাজারসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, এক থেকে দুই টাকা কেজিতেই কৃষককে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে। এই টমেটো ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছতে ১৫-২০ টাকায় চলে যাচ্ছে।
এদিকে আলুর প্রচুর ফলন হওয়ার কারণে সরবরাহও রয়েছে পর্যাপ্ত। মাস দেড়েক আগে নতুন আলু ঢাকায় ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম নেমে এসেছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে। আর পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়।
আর এখনো দুই তিন রকমের শিম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। শীতের মাঝামাঝিতে এই শিম ৪০-৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। তা ছাড়া রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। আর শালগম ২০-৩০ টাকা, বেগুন ৩৫-৪০ টাকা। তবে বরবটি ৪৫-৫০ টাকায়, লাউ প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা, শিমের বিচি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে শীত চলে যাওয়ার পরপরই বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন কিছু সবজি। এর মধ্যে রয়েছে ঢেঁড়স, পটোল, করলা। তবে এই সবজিগুলো খুব চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৭০-৮০ টাকা, পটোল ৬০-৭০ টাকা এবং করলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সবজির বাজার নিয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের গাউছিয়া সবজিভাণ্ডারের মালিক কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় ১০-১২ দিন ধরে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। অনেক সবজির দাম পড়ে গেছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘কৃষক তো দাম পাচ্ছে না। তারা দাম না পেলে পরের সিজনে আবাদ করবে না।’
তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সন্তোষজনকভাবে কমেনি পেঁয়াজের দাম। বরং দুই দিন আগে যে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারভেদে ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গতকাল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে দাম বৃদ্ধির সঠিক কোনো ব্যাখ্যা পাইকারি ব্যবসায়ীরা দিতে পারেনি।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ‘সরবরাহে একটু ঘাটতি রয়েছে। তাই দাম বেড়েছে।’ এ ছাড়া সপ্তাহখানেক আগে চিনির দাম কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলেও টিসিবির বাজার বিশ্লেষণের তথ্যে জানানো হয়েছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/03/02/608419