১ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৯

ফের বাড়ছে চালের দাম

আবারো বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। সরবরাহের ঘাটতি না থাকলেও রাজধানীর বাজারে সব ধরনের চালের কেজিতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ দেড় টাকা। তবে সরু চালের দাম বেড়েছে আরেকটু বেশি, কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে বেড়েছে খুচরা পর্যায়েও। ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে চাল আমদানিতে আগের চেয়ে টনপ্রতি ১ হাজার ৬৪০ থেকে দুই হাজার ৪৬০ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে।

বাড়তি মূল্যে আমদানি করা এ চাল স্থানীয় বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া দেশে মজুদ ধানের
সংকট রয়েছে। তাই চালের দাম কমতে এবার বোরো মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তারা। রাজধানীর বৃহৎ পাইকারি আড়ত বাবুবাজারের চালের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৮ থেকে ৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চারদিন আগেও একই চাল বিক্রি হয়েছিল ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায়। ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, পাইকারি দরে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকায়। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকায়। বিআর আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা কেজি। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়।
ব্যবসায়ী আনিস বলেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ খুঁজে। তারা ভারতে চালের দাম বেড়ে গেছে বলে এখানেও চালের দাম বেশি নিচ্ছে। এতে করে আমাদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীদের তাদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে চাল ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। গত বছর যখন চালের বাজারে উত্তাপ ছিল, তখন সবাই তাকিয়ে ছিল আমন ফলনের দিকে। আমন চাল বাজারে আসার পরও ভোক্তাদের নাগালে আসেনি চালের দাম। এ বছর আবার বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া সরকারি গুদামে বলা হচ্ছে- ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এ মজুদ পরিস্থিতিও যদি স্থিতিশীল থাকে, তবে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।
এদিকে রাজধানীর হাতিরপুল খুচরা বাজারের চাল বিক্রেতা শাহিন বলেন, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬১ থেকে ৬২ টাকায়। ভালো মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭২ টাকায়, যার কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৬৮ টাকা। আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ টাকা।

এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দৈনিক বাজার দরের তালিকায় চালের দাম বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে। এতে দেখা গেছে, সরু চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা এক মাস আগে ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা ছিল। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩.১৭ শতাংশ। অন্যদিকে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা কেজি, যা এক মাস আগে ছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১.১১ শতাংশ। এ ছাড়া গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৪ টাকা। মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ ও নাজিরশাইল ১৫-১৬ টাকা। অন্যদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঢাকার বাজারে মোটা চালের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৪০-৪১ টাকা। আর মোটা চালের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪২-৪৫ টাকা।

জানা গেছে, গত বছর হাওরাঞ্চলের অকাল বন্যাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের বন্যায় ধান উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। বাজারে চালের দাম বাড়ে অস্বাভাবিক হারে। সরকারি মজুত বাধাগ্রস্ত হয়। গত বছরের বন্যায় কমপক্ষে ১০ লাখ টন বোরো ফসল কৃষকের গোলায় ওঠেনি। হাওরের বন্যাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেয় বলে নানা মহল থেকে অভিযোগ ওঠে। সেই দাম বৃদ্ধির প্রবণতা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল হয়নি।

বাদামতলী-বাবুবাজার চাউল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, দেশের চালের মোকাম খ্যাত উত্তরবঙ্গের বাজারে ধান ও চাল সরবরাহ ঠিক থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে মোকাম ঠিক রাখতে হবে। মোকাম ঠিক না থাকলে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=107039