১ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৫

যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়

বিশ্বের দুই প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। দেশ দু’টি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গতকাল মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক রাজধানীতে পৃথক দু’টি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে আফ্রিকান-আমেরিকান ইতিহাস নিয়ে প্যানেল আলোচনার পর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে মার্শা বার্নিকাট বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশের নির্বাচনী অভিজ্ঞতায় সহিংসতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তিনি বলেন, ফেসবুক পোস্ট বা অন্য কোনো ধরনের উসকানিতে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে নিজে সহিংসতায় জড়িয়ে না পরা এবং অন্যকে সহিংসতা থেকে বিরত রাখা নাগরিকদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, কেবল নির্বাচনী দিনের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাপকাঠি নয়। বরং নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় নিতে হয়। তাই বলা যায়, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবেশ এখন চলমান। এ জন্য সমাবেশ, প্রতিবাদ বা ভোটারদের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দেয়ার অধিকারটা মৌলিক। কোনো দল এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনী পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোনো ধরনের দমন-পীড়ন ছাড়াই প্রচারণার সুযোগ পাওয়া উচিত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-সমাবেশ অবশ্যই সমর্থনের দাবি রাখে। কারো বাসায় বা ব্যক্তিগতভাবে আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব বোঝার জন্য অন্যান্য দূতাবাসের মতো যুক্তরাষ্ট্র মিশনও বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে মতবিনিময় করে। তবে এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের কোনো দল নেই। এটা পুরোপুরিই বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি আগ্রহী।

বার্নিকাট বলেন, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। এ ধরনের বক্তব্যই একজন নেতার কাছ থেকে মানুষ প্রত্যাশা করে। রাষ্ট্রদূত বলেন, স্থিতিশীলতা জন্য গণতন্ত্র দরকার। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোতে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত। কেননা সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। গণতন্ত্রে বিরোধী মতকে কখনো চাপা দেয়া উচিত নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা লিসা কার্টিস শিগগির ঢাকা সফরে আসছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ দমন তহবিল থেকে বাংলাদেশের জন্য দুই কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সম্প্রতি বিশ্বের ৫১টি দেশের ডিএনএ ডাটাবেসে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা হয়েছে। বার্নিকাট বলেন, আরো বেশ কয়েকটি দেশের মতো মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরও আইএস-বাংলাদেশের অস্তিত্বের স্বীকৃতির কথা জানিয়েছে। এটা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগকে সহায়তা করবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াও এ সঙ্কটের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থনের কোনো ঘাটতি হবে না। জাতিসঙ্ঘ শিগগির চলতি বছরের বাকি সময়ের জন্য রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানাবে। রোহিঙ্গা একটি দীর্ঘমেয়াদি ইস্যু। তাই এই সঙ্কট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি সহায়তাও প্রয়োজন।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চায় এবং মিয়ানমারই তাদের বাড়ি। আমরা চাই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা যেন কোনো ক্যাম্পে আটকে না থাকে, তারা যেন নিজ আদি নিবাসে ফিরতে পারেÑ তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকবে।
নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার : অন্য দিকে বারিধারায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে আসা দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে এই বার্তা পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন জুুগিয়ে যাবে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসন চায় ব্রিটেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/297940