২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:২৩

চট্টগ্রামে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ব্যাপক সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সম্মেলন পণ্ড

চট্টগ্রামে দলীয় অন্তর্কোন্দলের জেরে ককটেল বিস্ফোরণ আর বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও হাতাহাতিতে ভন্ডুল হয়ে গেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। দীর্ঘ নয় বছর পর গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরীর ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউটে বেলা ১১টার দিকে এ সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু সম্মেলনের শুরু দিকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের শ্লোগান,পাল্টা শ্লোগান এর মধ্যে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনায় তা ভন্ডুল হয়ে যায়। পাশাপাশি সম্মেলন কক্ষের পেছনের দিকে একটি ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে।এর পর ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ মিছিল,হাতাহাতি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে পুলিশ র্যাব এসে বিবাদমান গ্রুপ গুলোকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, দীর্ঘ নয় বছর পর গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরীর ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম উওর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন ছিল। এ উপলক্ষে সম্মেলন স্থলে সকাল দশটায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড হাছান মাহমুদ এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন প্রমুখ। সোয়া ১১টায় বাইরে এসে সম্মেলন উদ্বোধন করেন অতিথিরা। বেলা পৌনে ১২ টার দিকে মঞ্চে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে আসেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ সময় সম্মেলন কক্ষের পেছনের দিকে বসা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা চট্টগ্রাম নগরীর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের নাম উল্লেখ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে জাকির হোসাইন তাঁদের স্লোগান দিতে বারণ করে বলেন, শেখ হাসিনা আর বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কারও নামে স্লোগান দেওয়া যাবে না। কিন্তু স্লোগান দাতারা তাঁর কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে তিনি বক্তব্য অসমাপ্ত রেখেই বক্তব্য শেষ করেন। তখনই শুরু হয় উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি স্লোগান। এই পরিস্থিতির মধ্যে বক্তৃতা দিতে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সাকিব হাসান সৈয়দ। এসময় সম্মেলন কক্ষের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় আকস্মিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।এর এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কয়েকপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে বের হতে থাকলে কয়েকজন পড়ে গিয়ে আহত হন। আহত পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।হট্টগোলের সময় ছাত্রলীগ নেতারা ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বারবার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য করজোরে আহ্বান জানালেও তাদের কথা কেউ শোনেনি। এক পর্যায়ে মন্ত্রী মাইকে ঘোষণা দেন, যরা হামলা করেছে তারা বহিরাগত। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশও দেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিত বাড়ানো হয়। বেলা ১টার দিকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ অতিথিরা সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের আশপাশের সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে পুলিশ র্যাব এসে বিবাদমান গ্রুপ গুলোকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়নত্রনে আনে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, দু পক্ষের মারামারির কারণে সম্মেলন বন্ধ হয়ে গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। বড় কিছু হয়নি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, সংগঠনের জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তারা ককটেল বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, ৩৬৬ জন কাউন্সিলরের ভোটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এজন্য ৬০ জন পদপ্রত্যাশীর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারণে এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
এর আগে গত সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণ সভায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ালে তা ভন্ডুল হয়ে যায়।
জানা গেছে, সোমবার বিকাল ৪টার পর স্মরণসভা শুরু হয়। ছাত্রলীগের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা নিজ নিজ কমিটির ব্যানার নিয়ে সেখানে হাজির হন। পৌনে ৫টার দিকে মঞ্চের বামপাশে সিটি কলেজ, ডান পাশে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা নিজ নিজ কলেজের নামে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিচ্ছিল। মাঝে বসা ওমর গণি এমইএস কলেজের ছাত্রলীগের কর্মীরাও সমান তালে তাদের কলেজেন নামে স্লোগান দিচ্ছিল। মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা দফায় দফায় স্লোগান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েও ব্যর্থ হন। এই স্লোগানের মধ্যে নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশাদুল আলম বাচ্চু বক্তব্য দিতে উঠেন। তার বক্তব্যের পরপরই ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। শুরু হয় চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর চেয়ার ছুড়তে থাকে। এসময় কয়েকটি চেয়ার ভেঙেও যায়। ঘটনায় চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। লালদিঘি মাঠজুড়ে ছাত্রলীগকর্মীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তাতে সভাস্থলে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি চেষ্টা চালান। কিন্তু তারা দুই পক্ষকে থামাতে ব্যর্থ হন। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে সভামঞ্চে উপস্থিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় সব নেতা মাঠে নেমে আসেন। তারাও চেষ্টা করেন মারামারি থামাতে। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা এরপরও বিশৃঙ্খলা করবে তারা ছাত্রলীগের কেউ না। ভিডিও করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোয়া ৫টার দিকে মঞ্চে উপস্থিত হন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। মহিউদ্দিন পুত্র নওফেল এবং প্রধান অতিথি ড. অনুপম সেন সভায় আসার পর সভা শুরু হলেও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিমের বক্তব্যের সময়ও পুনরায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।এসময় নিজের আসন থেকে উঠে মহিবুল হাসান চৌধুরী সবাইকে শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন এবং উশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বহিস্কারের জন্য আহ্বান জানান। এই পরিস্থিতির মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। পরে প্রধান অতিথি ড. অনুপম সেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

 

http://www.dailysangram.com/post/320749-