২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:১৫

৫১৩ কোটি টাকার চাল-গমের গুদাম নির্মাণে লাগছে ৯৬০ কোটি টাকা কাজ পাচ্ছে তমা

দুই লাখ এক হাজার টন চাল-গম রাখতে স্টিলের গুদাম নির্মাণে ৫১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লাগার কথা। আর এভাবেই অনুমোদন হওয়া সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনার প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্যাকেজ-৩ এ উল্লেখ করা আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও মধুপুরের তিনটি সাইলো নির্মাণে লাগছে ৯৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মধুপুরে ৪৮ হাজার টন, ময়মনসিংহে ৪৮ হাজার টন ও আশুগঞ্জে এক লাখ পাঁচ হাজার টন ধারণক্ষমতার সাইলো নির্মাণ হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন সাইলো নির্মাণের এ কাজটি পেতে যাচ্ছে তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (টিসিসিএল)। তারা ফ্রেম ইতালি এবং সুইডেনের টোরনাম এবি’র সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজটি করবে বলে দরপত্রে উল্লেখ করেছে।

আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৯৬০ কোটি টাকার এ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উঠবে। অনুমোদন মিললেই তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করবে খাদ্য অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চে মর্ডান ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে চট্টগ্রাম, আশুগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মধুপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও মহেশ্বরপাশায় আটটি স্টিল সাইলো নির্মাণের কথা বলা হয়। এসব স্টিল সাইলো নির্মাণ হলে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার পাঁচশ’ টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। প্রকল্প অনুমোদনের সময় স্টিল সাইলোগুলোর পূর্ত কাজ, মেশিনারি ইকুইপমেন্ট, ভূমি উন্নয়ন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণে এক হাজার তিনশ’ ৮৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি সাইলো নির্মাণে তিনটি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের (চট্টগ্রাম ও মহেশ্বরপাশা) জন্য তিনশ’ ৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজের জন্য (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল) ৪৪৮ কোটি টাকা এবং তৃতীয় প্যাকেজের (আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও মধুপুর) জন্য ৫১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ সংশোধন বা ডিপিপি সংশোধন না করেই ৯৬০ কোটি টাকায় কার্যাদেশ দেয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে স্টিল সাইলো নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে প্রি-কোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্টের উপর বিশ্বব্যাংক অনাপত্তি দেয়। এরপর একই বছরের জানুয়ারির শেষে প্রি- কোয়ালিফিকেশন আহ্বান করা হয়। এটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ খাদ্য অধিদপ্তর ও সিপিটিইউ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩৮টি প্রতিষ্ঠান প্রি- কোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্ট কেনে। ১৪ই মার্চ ছিল প্রি-কোয়ালিফিকেশন আবেদন জমা দেয়ার শেষ সময়। ওই দিন পর্যন্ত ৩৮টি প্রতিষ্ঠান প্রি-কোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্ট কেনে। এর মধ্যে ২৩টি প্রতিষ্ঠান তাদের আবেদন জমা দেয়। এসব আবেদন থেকেই তিনটি স্টিল সাইলো নির্মাণের প্যাকেজের জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে বিডিং ডকুমেন্ট দিয়ে তা জমা দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের ডকুমেন্ট জমা দেয়। তবে খাদ্য অধিদপ্তরের স্বাধীন ক্রয় প্যানেল এসব প্রতিষ্ঠানের জমা দেয়া ডকুমেন্ট মূল্যায়ন করে। এর মধ্যে চাইনিজ কোম্পানি চায়না হারবারসহ তিনটি কোম্পানির দরপ্রস্তাব তারা নন-রেসপনসিভ করে দেয়। শুধুমাত্র জেভি অফ টিসিসিএল-ফ্রেম ও জেভি অফ পেটকাস সিমাগা এর দর প্রস্তাব রেসপনসিভ করা হয়। স্বাধীন ক্রয় প্যানেল তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (টিসিসিএল)-এর ৯৬০ কোটি তিন লাখ ২৯ হাজার ৯৯৮ টাকায় কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করে। গত বছরের ১২ই নভেম্বর বিশ্বব্যাংক মূল্যায়ন প্রতিবেদন ও সুপারিশ পর্যালোচনা করে অনাপত্তি দিয়েছে। এর ভিত্তিতেই প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
আলোচিত তমা কন্সট্রাকশনকে নিয়ে নানা কথা চালু রয়েছে। মগবাজার ফ্লাইওভারের একাংশের কাজ করেছে এ কোম্পানিটি। তিন দফায় ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়। ওই ফ্লাইওভারের ব্যয় বাড়ানো ও কাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া নির্মাণ ত্রুটির জন্যও আলোচিত হয় এর নির্মাণ কাজ।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=106888