২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২২

হজে খরচ বাড়ল

সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১-এর আওতায় এবার হজে যেতে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল তিন লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। এ ছাড়া প্যাকেজ-২-এর আওতায় তিন লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা খরচ হবে, যা গত বছর ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। সে হিসাবে সরকারিভাবে গতবারের থেকে এবার ১ নম্বর প্যাকেজে ১৬ হাজার ৪২১ টাকা এবং ২ নম্বর প্যাকেজে ১২ হাজার চার টাকা বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি-২০১৮’ ও ‘হজ প্যাকেজ-২০১৮’-এর অনুমোদন দেয়া হয়। পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এবারের হজ প্যাকেজের বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, এবার ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জসহ বিমান ভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর মোট বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা। এবার ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকা বেড়েছে। বিমান ভাড়া বাড়ল কেনÑ জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে, ডলারের দামও একটু বেড়েছে। এ সময় উপস্থিত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাফিজ উদ্দিন বলেন, সৌদি আরব এবার নতুন করে বিল্ডিং চার্জ ধার্য করেছে। এক্সাইজ ডিউটি এক হাজার থেকে দুই হাজার রিয়াল করেছে সৌদি সরকার। শুধু ডলারের দাম বৃদ্ধিতেই তিন হাজার ৮৭৫ টাকা বেড়েছে ভাড়ায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার মূল খরচ এক লাখ ৬৮ হাজার ২৭৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, যা গত বছর ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৭ টাকা। এখানে খরচ বাড়ানো হয়েছে ১১ হাজার ৭৪০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মূল খরচের সাথে বাড়ি ভাড়া, খাওয়া ও মোয়াল্লেমের অতিরিক্ত চার্জসহ সুবিধার ধরন অনুযায়ী অন্যান্য খরচ যুক্ত হবে। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো সরকারি প্যাকেজ-২-এর কম কোনো প্যাকেজ নির্ধারণ করতে পারবে না। এ ছাড়া ২০১৫, ’১৬ ও ’১৭ সালে যারা হজ করেছেন অথবা যারা হজে যাওয়ার জন্য ভিসা পেয়েছেন কিন্তু যাননি, তারা আবার যেতে চাইলে অতিরিক্ত ২১ শ’ রিয়াল দিতে হবে।
সচিব বলেন, এবার হজ নীতিমালার ৩.১.৭-এ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ অনুসারে আগে সরকারিভাবে হজযাত্রীরা পুরো টাকা জমা দিয়ে তার পর ভিসা পেতেন। এবার বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যারা হজে যাবেন তাদেরও পুরো টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। হজযাত্রায় দালালদের তৎপরতা কমাতে এ নিয়ম করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে এজেন্সিগুলোকে আগেই বাড়িভাড়া, ফ্লাইট বুকিং ও কতজন ওই ফ্লাইটে যাবেন তা নির্ধারণ করে জানাতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ প্রমাণ দেয়ার পরই হাজীদের ভিসা দেয়া হবে।

প্রতিস্থাপন ৪ শতাংশের বেশি নয় : সচিব বলেন, ৪৫ জন হাজীর টিমে একজন করে গাইড থাকবে। মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতাজনিত কারণে নিবন্ধিত কেউ হজে যেতে না পারলে প্রাক-নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ শতকরা চারজনকে প্রতিস্থাপন করার সুযোগ পাবে এজেন্সিগুলো। কোনোভাবেই এর বেশি হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ পাবে না তারা। আগামী ১০ শাওয়াল (২৫ জুন) তারিখের মধ্যেই হজে গমনেচ্ছুদের অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

হজযাত্রীদেরই ট্রলি ব্যাগ কিনতে হবে : সচিব জানান, এ বছর প্রত্যেক হজযাত্রী নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহনের জন্য ট্রলিব্যাগ নিজেরাই কিনবেন। আগে এজেন্সিগুলো ট্রলি কিনে দিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন হজযাত্রীরা নিজের পছন্দ অনুযায়ী ট্রলি কিনতে পারবেন।
প্রবাসীরা পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করবেন : শফিউল আলম বলেন, আগের নিয়মানুযায়ী হজে গমনেচ্ছুদের প্রাক-নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রয়োজন হতো। তবে এখন নতুন নিয়মানুযায়ী এনআইডি না থাকলেও প্রবাসীরা পাসপোর্ট দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তির নিবন্ধনের জন্য এমআরপি পাসপোর্ট থাকতে হবে। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে এবং এ তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্যভাণ্ডারের সাথে যাচাই করা হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না হজযাত্রীদের : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে প্রভিশন ছিল পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে হজযাত্রীদের তথ্য যাচাই করা হবে। এখন এ প্রভিশনটা (নীতি থেকে) বাদ দেয়া হয়েছে। এর কারণ হলো পাসপোর্ট যখন দেয়া হয় তখন একবার পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। দু’বার যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন নেই।
প্রাক-নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে ২ বছর : শফিউল আলম বলেন, প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীরা পরপর দুই বছর নিবন্ধনের সুযোগ গ্রহণ না করলে তিনি হজে যেতে ইচ্ছুক নন ধরে তার প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করা হবে। আগে যা এক বছর ছিল এখন সেটি বাড়িয়ে দুই বছর করা হলো।

সচিব জানান, চাঁদ দেখাসাপেক্ষে চলতি বছরের ২১ আগস্ট (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছর সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতিটি এজেন্সি সর্বনি¤œ ১৫০ জন ও সর্বোচ্চ ৩০০ জনকে হজের জন্য নিয়ে যেতে পারবে। প্রতি ফ্লাইটে তিনজন মোয়াল্লেম ও তিনটি এজেন্সির হজযাত্রীরা যেতে পারবেন। প্রত্যেক হজযাত্রী তার কোরবানির পশু কেনার জন্য ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) কুপন কিনতে পারবেন। এ বছরের নীতিমালা অনুযায়ী, হজযাত্রীদের বাসস্থান মক্কা থেকে দুই কিলোমিটারের বেশি হলে এজেন্সিকেই গাড়ি দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতি বছর হজ গাইডদের তথ্য ফরম পূরণ করে সরকারের অনুমোদন নিয়ে ফ্লাইট শুরুর দুই মাস আগে হজ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে এন্ট্রি করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/297310