২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৩

কসাইখানায় পরিণত হয়েছে রাখাইন : জাতিসঙ্ঘ

মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে ইইউ

রোহিঙ্গা নিধনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির ওপর ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও জোরদার করা হচ্ছে।

গতকাল ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে ইউরোপে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করার জন্য মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের তালিকা তৈরি করতে জোটের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘারিনির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গুরুতর ও পরিকল্পিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মিয়ানমার সামরিক নেতৃত্বকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এটি হবে এ যাবৎকালে ইইউর কঠিনতম পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইতঃপূর্বে মিয়ানমারের মেজর জেনারেল মং মং সোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মেজর জেনারেল সো গত আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ চালানো সময় রাখাইন অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মিয়ানমারের সুনির্দিষ্ট কোনো জেনারেলকে নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় একাধিক জেনারেলের নাম থাকতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৯৯০ এর দশক থেকে মিয়ানমারের ওপর আরোপ করা ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরো জোরোলো করার কথা বলেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।
এর আগে রয়টার্সের তদন্তে রোহিঙ্গা মুসলিম পুরুষদের কুপিয়ে অথবা গুলি করে গণকবর দেয়ার তথ্য উঠে এসেছিল। এ ঘটনার সাথে রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ও সেনাদের জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়।
কসাইখানায় পরিণত হয়েছে রাখাইন : জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার জিয়াদ রাদ আল হুসেইন বলেছেন, মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন, সিরিয়া, ইয়েমেন, কঙ্গো ও বুরুন্ডির অনেক স্থান সাম্প্রতিক সময়ে কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি প্রতিরোধে আগে থেকেই সমন্বিতভাবে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমি ও আমার কার্যালয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনাগুলোর প্রতি বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যৎসামান্য।

গতকাল জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৭তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জিয়াদ রাদ আল হুসেইন বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত ঘটনার দায় জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। নিরপরাধ মানুষের চরম দুর্ভোগ লাঘবে নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত ভেটো ক্ষমতা দিয়ে ঠেকিয়ে দেয়া হয়। ভিকটিমদের কাছে এ জন্য ভেটো ক্ষমতাধারী স্থায়ী সদস্যদের জবাবদিহি করতে হবে।
মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার বলেন, ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে কোড অব কন্ডাক্ট অনুসরণের জন্য প্রচারণায় স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে ফ্রান্স প্রশংসাযোগ্য নেতৃত্ব দেখিয়েছে। ব্রিটেনও এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে, যাতে সমর্থন দিয়েছে ১১৫টি দেশ। ভেটো ক্ষমতার ক্ষতিকর প্রয়োগরোধে এখন সময় এসেছে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এতে শামিল হওয়া।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/297311