২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১১:১৮

আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে র্যা ম নির্মাণ প্রশ্নবিদ্ধ!

চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসির মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার প্রশ্নের মুখে পড়েছে র্যা ম নির্মাণ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একাধিক প্রকৌশলী এই প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে ফ্লাইওভার থেকে বাদ যেতে পারে এই র্যা ম নির্মাণ। হাতছাড়া হতে পারে লালখান বাজার থেকে জিইসি মোড়ে গাড়ি উঠানামার সুযোগও।
তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ফ্লাইওভার প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ফ্লাইওভারে জিইসির মোড়ের র্যা ম নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রকৌশলীরা। ফলে র্যা ম নির্মাণ বাতিল হলে ফ্লাইওভারের ডিজাইনেও তৃতীয়বারের মতো পরিবর্তন আনতে হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ চলাকালে মাঝামাঝি সময়ে জিইসি মোড়ে ওঠানামার জন্য চারটি র্যা ম নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় প্রকল্পটি সংশোধিত বাজেটে অনুমোদনও হয়েছিল। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো ডিজাইনে পরিবর্তন আসে।
এর আগে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কার্যক্রমে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট মোড়ে র্যা ম নির্মাণে ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়। সে অনুযায়ী ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়ের র্যা ম নির্মাণকাজ চলছে। চলছে জিইসি মোড় থেকে মুরাদপুরের দিকে যাওয়ার জন্য বাটা গলির সামনে এবং মুরাদপুর থেকে জিইসি মোড়ে নামার জন্য বিএমএ ভবনের সামনে গাড়ি নামার র্যা ম নির্মাণ কাজও।
কিন্তু জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড়ের দিকে যাওয়ার জন্য পেনিনসুলার সামনে থেকে এবং ওয়াসা মোড় থেকে জিইসি মোড়ে নামার জন্য জিইসি কনভেনশন সেন্টারের সামনে যানবাহন উঠানামার জন্য র্যা ম দুটি নির্মাণের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। অথচ আগামী জুনে শেষ হবে এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ।
এ বিষয়ে ফ্লাইওভার বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, র্যা ম দুটি না হওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ এখনো রয়েছে। তবে এই র্যা মের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না এ নিয়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
চউকের প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, হাবিবুর রহমানসহ একাধিক প্রকৌশলীর মতে, জিইসি মোড় থেকে ফ্লাইওভারে উঠতে উঠতে নামার সময় হয়ে যাবে এবং একই চিত্র দেখা যাবে লালখান বাজার থেকে জিইসি মোড়ে নামার ক্ষেত্রেও। সেক্ষেত্রে জিইসির মোড়ের র্যা ম নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ হতে যাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যদি এই ফ্লাইওভারের সঙ্গে টানা হয় তাহলে অবশ্যই জিইসি মোড়ের দুটি র্যা মের প্রয়োজন থাকবে। তবে পুরো বিষয়টি নির্ধারণ করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাই করে যা বাস্তবসম্মত হবে এক্ষেত্রে তাই করা হবে। এজন্য কাজও শুরু করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি।

৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫৪ ফুট চওড়া ফ্লাইওভারটি নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রেনকিন জেবি বলে জানান প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে ৪৫৭ কোটি টাকা খরচ করে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। কিন্তু ২০১০ সালে মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট ও জিইসি মোড়ে পৃথক তিনটি ওভারপাস নির্মাণের জন্য একনেক থেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল।
পরবর্তীকালে সেই প্রকল্প ২০১৩ সালের সংশোধিত হয়ে একটি প্রকল্পে রূপ নিয়েছিল। সেই প্রকল্পে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত টানা ফ্লাইওভার এবং ষোলশহর দুই নম্বর গেটে বায়েজিদ বোস্তামীমুখে একটি লুপ (যা ঘুরে এসে মূল ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত হয়) ছিল।
কিন্তু জিইসি মোড়ে লুপ নির্মাণের লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন একসময় এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ বন্ধও রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি তৈরি করে এবং কারিগরি রিপোর্টের মাধ্যমে জিইসি মোড়ে উঠানামার জন্য লুপের পরিবর্তে চারটি র্যা ম (একই স্থানে ফ্লাইওভার থেকে প্রধান সড়কে উঠা ও নামার পৃথক লেন) তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

চারটি র্যা মের একটি হলো জিইসি থেকে মুরাদপুরের দিকে যাওয়ার জন্য যা বাটা গলির সামনে নির্মিত হচ্ছে, দ্বিতীয়টি হলো-মুরাদপুর থেকে আসার পথে জিইসি মোড়ে নামার জন্য যা বিএমএ ভবনের সামনে নির্মিত হচ্ছে, তৃতীয়টি হলো- জিইসি মোড় থেকে লালখান বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য যা পেনিনসুলা হোটেলের একটু সামনে থেকে নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল এবং চতুর্থটি হলো- লালখান বাজার থেকে আসতে জিইসি মোড়ে নামার জন্য যা জিইসি কনভেনশন সেন্টারের সামনে নামার কথা।
আর ষোলশহর দুই নম্বর গেটে লুপ নির্মাণের কারণে জিইসি মোড় থেকে যে কেউ বায়েজিদ বোস্তামীর দিকে যেতে পারবে কিংবা মুরাদপুরের দিকেও যেতে পারবে। একইভাবে বায়েজিদ থেকে যে কেউ জিইসি মোড়ের দিকে আসতে পারবে। তবে মুরাদপুরের দিক থেকে কেউ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে বায়েজিদ বোস্তামীর দিকে যেতে পারবে না।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=106510