২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১১:১৫

জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ

পরামর্শকের পকেটে ৬৭ কোটি টাকা

জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রতিষ্ঠানিকীকরণে পরামর্শকের পকেটেই যাচ্ছে ৬৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। তবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেশি ও আন্তর্জাতিক পরামর্শকের যৌক্তিকতা এবং এ খাতে ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পরামর্শক খাতে খরচ কমানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরামর্শকের কর্মপরিধি, আউটপুট, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শকের জনমাস আলাদা করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) যুক্ত করতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়, এ খাতের ভ্যাট ও আয়কর খাতে অর্থের পরিমাণ আলাদাভাবে দেখাতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৪৮ কোটি টাকা এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএস) ও কেএফডব্লিউর অনুদান থেকে ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা। ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, অনুদানের প্রকল্পে এ একটি বড় সমস্যা। উন্নয়ন সহযোগী যারা অনুদান দেয় তারা চায় পরামর্শক সেবার নামে একটি বড় অংশ নিজেদের পকেটে ভরতে। এ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা উচিত। কেননা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আদৌ পরামর্শকের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা? বা থাকলেও কতটুকু এসব বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনজীবন ও সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বিশেষ করে প্রকল্পভুক্ত এলাকার গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ও নগর অঞ্চলের জনগণের জীবন মানোন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষার প্রয়োজনে সরকার জিসিএফ ও কেএফডব্লিউর যৌথ অর্থায়নে ‘জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ নামের প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি ভোলা, বরগুনা ও সাতক্ষীরা জেলার ২০টি উপজেলা এবং একটি পৌরসভায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় ৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার, ২০টি বিদ্যমান সাইক্লোন শেল্টার পুনর্বাসন, ৮২টি সড়ক কানেকটিভিটি উন্নয়ন, ৩২ কিলোমিটার নগর সড়ক পুনর্বাসন বা উন্নয়ন, ২০ মিটার ব্রিজ পুনর্বাসন, ৩৯ দশমিক ৭১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ২৫ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপন, ১৫ কিলোমিটার পুরনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ২০০টি টিউবওয়েল স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে ৬৭ কোটি ৪ লাখ টাকা পরামর্শক ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে সভায় অংশ নেয়া এলজিইডির প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে তদারকি ও জলবায়ুসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনার পর জিসিএফ বোর্ড অনুমোদিত ফান্ডিং প্রপোজালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয় কমানোর তাগিদ দেয়া হয়।
এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে ৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট লোকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেন্টার (সিআরইএলআইসি) স্থাপনের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে এলজিইডির প্রতিনিধি বলেন, উপকূলীয় এলাকার অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত টেকসই ব্যবস্থাপনা জরুরি। তাই সিআরইএলআইসি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণে সহায়ক হবে। তবে আলোচনা শেষে এটি স্থাপনের যৌক্তিকতা এবং এ খাতে সংস্থান করা অর্থের বিভাজন ডিপিপিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুটি জিপ, ৮টি পিক-আপ, দুটি মাইক্রোবাস, দুটি ট্রাক এবং ৬০টি মোটরসাইকেলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে এলজিইডির প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকির স্বার্থে এসব যানবাহনের সংস্থান রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে আলাপ-আলোচনার পর তিনটি পিকআপ কমিয়ে ৫টি এবং একটি মাইক্রোবাস বাদ দিয়ে একটি করা হয়েছে। বাকিগুলো ঠিক রাখা হয়। তবে প্রকল্পের কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়নের জন্য মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটি গঠনের রূপরেখাসহ এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে মত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। পরবর্তী সময়ে মধ্যবর্তী মূল্যায়নের জন্য ৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটিতে উদ্যোগী মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টর, কার্যক্রম বিভাগ, আইএমইডি প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/21589