২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১০:২৭

সবজির দামে বঞ্চিত কৃষক

দেশব্যাপি সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ফলিয়েও গ্রামীণ কৃষক পাচ্ছে না ন্যায্য দাম, উঠছে না উৎপাদন খরচ। দেশব্যাপি টমেটো, আলু, মূলা, ফুলকপিসহ নানা ধরণের সবজিউৎপাদন করে লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের। পরিশ্রম করেও মূল্য না পাওয়ায় হতাশ দেশের কৃষক। অধিকাংশ কৃষকেরই মাথায় হাত। এক ফসলের দাম না পেয়ে অন্য ফসল করতে গিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তাদের। তাই পুনরায় চাষ করতে অনিহা দেখাচ্ছেন কৃষক। পথে পথে চাঁদাবাজীর কারণে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং একের পর এক হাতবদলের জন্যই ঢাকায় এখনো সবজির দাম বেশি।

সবজি চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভের আশায় ধার-দেনা করে অনেক কৃষক জমিতে সবজি চাষ করলেও তা তুলে বাজারে বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন হবে তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি দেওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। তাই মাঠে বা ক্ষেতে অধিকাংশ সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ কৃষক সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলেও বাজারের অবস্থা ভিন্ন। কৃষকেরা যে সবজি তাদের মাঠে বিক্রি করছেন কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা। সেই সবজি রাজধানীর বাজারে ওঠার সাথে সাথে বেড়ে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তাই আগ্রহ হারাতে বসেছেন উৎপাদনকারী চাষীরা। কৃষক লাভবান হতে না পারলেও সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্ত¡ভোগী এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চাষীরা। এদিকে সঠিক দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা লোকসান কমাতে আদর্শ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র মতে, রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২৫টাকায়। অথচ প্রতি কেজি টমেটো কৃষক বিক্রি করছেন ৩ থেকে ৫ টাকায়। যদিও কৃষকের প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। আর তাই কৃষককে প্রতি কেজিতে লোকসান গুণতে হয় ৫ থেকে ৭ টাকা। এভাবে দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণ কৃষক। ময়মনসিংহের আব্দুল মজিদ কারওয়ান বাজারে টমেটো এনে পড়েছেন বিপাকে।
তিনি জানান, ক্রেতা কম। যেটুকু বিক্রি হচ্ছে তাতেও গুণতে হচ্ছে লোকসান। অনেকে টমেটো রেখেই চলে গেছেন। বিক্রি না হওয়ায় সেসব হচ্ছে নষ্ট। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের হাটনাইয়া গ্রাম থেকে জমির বাছাই করা টমেটো ৫টাকা কেজিতে ক্রয় করেছেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, জমি থেকে ভালো মানের টমেটো কিনেছেন তাই বলে দাম একটু বেশি। পাইকাররা কিনছেন আরও কম দামে। সূত্র জানায়, পাইকারীতে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকায়। অথচ প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদনে কৃষকের ৫ থেকে ৭ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। যদিও লাভ ঠিকই করছে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। অথচ দেশি টমেটোর মৌসুম শেষে ভারত থেকে টমেটো আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সেসব ভোক্তাদের কিনতে হয় ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। দেশি টমেটো রপ্তানিও হয় না। নেই সংরক্ষণের ব্যবস্থাও। এদিকে অধিকাংশ ক্ষেতে যে পরিমান টমেটো রয়েছে, তা তুলে বাজারে গিয়ে বিক্রি করলে যে পরিমান অর্থ উপার্জন হবে তা দিয়ে শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করাই সম্ভব নয়। তাই মাঠে বা ক্ষেতে অধিকাংশ টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সূত্র মতে, বাগেরহাট উপজেলার লখপুর বাজার, টাউন নওয়াপাড়া বাজার, বেতাগা বাজার ও চুলকাঠি বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে ভালো মানের ১ মণ টমেটোর পাইকারী দর ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ এলাকায় চলতি বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেতে যে পরিমান টমেটো রয়েছে, তা তুলে বাজারে গিয়ে বিক্রি করলে যে পরিমান অর্থ উপার্জন হবে তাতে শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তাই মাঠে বা ক্ষেতে অধিকাংশ টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
টমেটোর মতোই প্রতি কেজি আলু রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে। অথচ গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে আলু ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল, তা গতকাল শনিবার নেমেছে সর্বনিম্ন ১৮ টাকায়। গ্রামীণ খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন আলুর সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আলুর দাম কমতে শুরু করে।
অন্যদিকে গ্রামীণ কৃষক প্রতি কেজি আলু পাইকারী বিক্রি করছেন ৭/৮ টাকা। অথচ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচই পড়ে যায় ৭ থেকে ৮ টাকা। তাই আলু উৎপাদন করে লাভতো দূরের কথা খরচ উঠানোই কষ্ট জানান আলু চাষীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি মূলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। যা গ্রামীণ কৃষকরা বিক্রি করছেন ৩ থেকে ৫টাকায়। রাজধানীর বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। অথচ কৃষক প্রতি পিস ফুলকপিতে পাচ্ছেন ৫ থেকে ১০ টাকা। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল, বহুলী, ছোনগাছা ও বাগবাটি ইউনিয়নে ফুলকপির চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। চন্ডিদাসগাতি গ্রামের কৃষক জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বাজারমূল্য খুবই কম।
ইনকিলাবের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম রাজু জানান, ওখানকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছেÑমূলা ৪ থেকে ৫ টাকা, বেগুন ১৫ থেকে ১৬ টাকা, টমেটো ১৪ থেকে ১৫ টাকা, গাজর ২০ টাকা, ফুলকপি ১২ থেকে ১৫ টাকা, বাঁধাকপি প্রত্যেকটি ১০ থেকে ১২ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বিভিন্ন রকম শাক কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ১৫, প্রতিটি লাউ ১৫ থেকে ১৬ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ২০ টাকা হলেও কৃষকেরা পাচ্ছেন সামান্য পরিমান।
এক ব্যবসায়ী জানান, খুব অল্প দামে একজন কৃষক যে সবজি বিক্রি করছেন, বাজারে আসার পরেই সেই সবজির দাম কয়েকগুন বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে একরকম হতাশা কাজ করছে। তবে এমনটা কেন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকের কাছ থেকে যে শবজিক্রয় করে আনা হয় তা বাজারে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে কিছু অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। ফলে যে দামে তা ক্রয় করা হয় তার চেয়ে বেশী দামে বিক্রি করতে আমরা বাধ্য।

রাজশাহীর স্থানীয় এক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শবজিচাষ করতে যে পরিমান টাকা খরচ হয় অনেক সময় সেই আসল টাকাই তোলা সম্ভব হয় না। অথচ বাজারে সেই সবজি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশী টাকায়। এর পিছনে এক ধরণের সিন্ডিকেট কাজ করে থাকে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ফলে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকেরা। এর যথাযথ প্রতিকারের দাবি জানান তিনি।
কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল জানান, বেগুনের ফলন দেখে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছায়কোট গ্রামের কৃষক আবিদ মিয়ার মুখে ফুটেছিল তৃপ্তির হাসি। কিন্তু নিমসার হাটে সেই হাসি মিলিয়ে গেল তাঁর। সপ্তাহ ঘুরেই বেগুনের দাম মণপ্রতি কমে গেছে ২৫০ টাকা। গত হাটে ভালো মানের প্রতিমণ বেগুন পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছিলেন এক হাজার ৩০০ টাকায়। মঙ্গলবার তার দাম নেমে হয় এক হাজার টাকা। ২৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করতে কষ্ট হয় আবিদ মিয়ার। অথচ তাঁর বেগুনই কুমিল্লার শহরে বিক্রি হয় ৫০ টাকা কেজি দরে।

কুমিল্লার চান্দিনা, বুড়িচং এই দুই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির ফলন হয়। কৃষকরা বেগুন, কাঁকরোল, শসা, ঝিঙা, লাউ, পুঁইশাক, মরিচ, ডাঁটাশাক, পেঁপে ও কচুর লতি নিয়ে আসেন কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাজার নিমসার পাইকারি হাটে। সেখান থেকে প্রতিদিন অর্ধশত ট্রাক শাক-সবজি নিয়ে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং অন্যান্য জেলায় যায়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ওই সব জেলার শাকসবজির চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগই পূরণ করেন কুমিল্লার কৃষকরা।

সরেজমিনে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত নিমসার সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি ক্রেতারা সবজি কিনে ঝুড়িতে সাজাচ্ছেন। ঝুড়ি বোঝাই সবজি তোলা হচ্ছে ট্রাক অথবা পিকআপ ভ্যানে। হাটের কৃষকরা জানান, বর্তমান বাজারে প্রতি মণ বেগুন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, কাঁকরোল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, শসা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, পুঁইশাক ৪০০ টাকা, মরিচ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, পেঁপে ৫০০ টাকা, ঝিঙা ৯০০ টাকা, জলপাই ৮০০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিছ ২০ থেকে ২৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। চান্দিনার শ্রীমন্তপুর গ্রামের সবজি চাষি শাহাজাহান মিয়া বলেন, দালালরা কম টাকা দিয়ে প্রায় জোর করেই সবজি নিয়ে যায়। তারা কমিশন নিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয় সেই সবজি। চাষিদের কাছ থেকে মরিচ কিনে বাজারেই পাইকারি বিক্রি করেন রমজান মিয়া। তিনি জানান, কৃষকের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে মরিচ কিনে তিনি পাইকারদের কাছে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন। সেই মরিচ সিলেটে যায়। কুমিল্লার নিমসার হাট থেকে সবজি সংগ্রহ করে কারওয়ান বাজারের সরবরাহ করেন আবিদ আলী। তিনি বলেন, আমরা হাট থেকে কিনে আড়তে প্রতিমণ বেগুন এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, শসা এক হাজার ২০০ টাকা, পুঁইশাক ৬০০ টাকা, পেঁপে ৮০০ টাকা, ঝিঙা এক হাজার ২০০ টাকায় সরবরাহ করি।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেলেও ভোক্তারা বেশি দাম দিয়েই সবজি কিনছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না। অথচ সবজি উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব ঘটালেও এর দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় এই এলাকায় সবজির ফলন ভালো হচ্ছে। কিন্তু রাজধানী বা কুমিল্লা শহরে খুচরা বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে, এর তিন ভাগের এক ভাগ দামে পাইকারি বাজারে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। সবজি বিক্রি করে কোনো রকমে উৎপাদন খরচ ওঠে আসছে বলে জানিয়েছেন নিমসার বাজারে আসা কুমিল্লা এলাকার বেশ কয়েকজন সবজি চাষি। কুমিল্লা শহরের খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়া হলেও নিমসার হাটে চাষিরা সবজি বিক্রি করছেন পানির দরে। উৎপাদক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াজাত করণের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এ এলাকার চাষিরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শহীদ উল্লাহ বলেন, এ জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। মৌসুমি সবজির আমদানি বাড়লে পাইকারি ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দেন। ফলে কৃষকরা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।
সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন সবজি ওঠার সময় দাম একটু ভালো পাওয়া গেলেও আমদানি বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নামমাত্র দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

চাষিদের অভিযোগ, দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শবজিফলিয়ে কোনো রকমে খরচের টাকা তুলতে পারছেন তাঁরা। মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে সবজি বিক্রি করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সবজি চাষি আমির হোসেন জানান, তিনি এ বছর ২৪ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে প্রতিটি লাউ বিক্রি করেছেন ১২ থেকে ১৫ টাকা করে। এখন বিক্রি করছেন আট থেকে ১০ টাকা দরে। এ দামে লাউ বিক্রি করে কোনো রকমে আবাদের খরচ উঠেছে বলে জানান তিনি। কালাকচুয়া গ্রামের সবজি চাষি নজরুল ৫০ কেজি পটল নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তা। তিনি বলেন, জমি তৈরি, সার-কীটনাশক ও শ্রমের দাম বাদ দিয়ে আর কিছু থাকে না। এ দামে সবজি বিক্রি করে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। পূর্ব পুরুষরা চাষ করে আসছে, তাই চাষ করি। বাজারে আসা সৈয়দপুর গ্রামের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা সাইফুল জানান, আড়তদার, ফড়িয়া ও ব্যাপারিরা এখানকার হাট নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁরা যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামেই আমাদের মাল বিক্রি করতে হয়। কৃষি উপকরণের দামের তুলনায় সবজির দাম খুবই কম। কাঁচা সবজি গাছে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তা বিক্রি করতে হয়।
নিমসার হাটে সবজি কিনতে আসা ফরিদপুরের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন এবং টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, তাঁরা প্রতি কেজি পটল ১২, কাঁচা মরিচ ২৫, বেগুন ১৫, ফুলকপি ২০ ও মূলা ১৫ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। হাটের খাজনা, আড়তদারি ও পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকা কিংবা বরিশাল পৌঁছাতে সবজির মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। এরপর তাঁদের লাভের প্রশ্ন থাকে।

ফরিদপুরের সবজি ব্যবসায়ী সেন্টু মিয়া বলেন, চাষির কাছ থেকে যে দামে সবজি কেনা হয়, তার উপর খাজনা, লেবার খরচ, আড়তদারি ও পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকায় মাল পৌঁছাতে সবজির মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি পড়ে যায়। এখানে একটি লাউ ১০ টাকায় কিনলে, ঢাকার বাজারে আবার আড়তদারি দিয়ে তা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হয় না।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/118920